মিশিগানে হামলাকারী শিক্ষার্থীর মা-বাবার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ

জেমস ক্রাম্বলি ও জেনিফার ক্রাম্বলি (ফাইল ছবি)
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের একটি স্কুলে সম্প্রতি গুলি করে চারজনকে হত্যার ঘটনায় এবার হামলাকারী শিক্ষার্থীর মা-বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার ওকল্যান্ডের কাউন্টি প্রসিকিউটররা এ দম্পতির বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড সংঘটনের অভিযোগ আনেন। তাঁদের দাবি, ছেলে ইথান ক্রাম্বলিকে সঙ্গে নিয়ে ওই বন্দুক কিনেছিলেন বাবা জেমস ক্রাম্বলি। আর ছেলের আচরণ নিয়ে বারবার স্কুল কর্তৃপক্ষের সতর্কতার পরও তাতে সাড়া দেননি মা জেনিফার ক্রাম্বলি। খবর এএফপির।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের অক্সফোর্ড শহরের অক্সফোর্ড হাইস্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় চার শিক্ষার্থী নিহত হয়। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এ ঘটনায় এক শিক্ষকসহ আরও ছয়জন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলার পর ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইথান ক্রাম্বলিকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে একটি বন্দুকও জব্দ করা হয়েছে।

শুক্রবার ওকল্যান্ড কাউন্টি প্রসিকিউটর কারেন ম্যাকডোনাল্ড জানান, ইথান ক্রাম্বলির মা–বাবা জেনিফার ও জেমস ক্রাম্বলির বিরুদ্ধে চারটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলাকারীর মা-বাবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেওয়া এক বিরল পদক্ষেপ এটি।

সংবাদ সম্মেলনে ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘এ মর্মান্তিক ঘটনায় যাদের ভূমিকা রয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে এ অভিযোগ করা হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর স্কুলে ঢুকে গুলি একজনই ছুড়েছে। তবে এ ঘটনায় অন্য ব্যক্তিরাও ভূমিকা রেখেছে। আর তাদেরও জবাবদিহির মুখোমুখি করাটাই আমার ইচ্ছা।’

ওকল্যান্ডের কাউন্টি শেরিফ মাইকেল বুচার্ড জানান, ইথানের মা-বাবা এখন কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। তাঁদের পলাতক বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুতই আমরা তাঁদের নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে আসতে পারব। এ ঘটনায় নিজেদের যে ভূমিকা ছিল, তা এড়াতে পারবে না তাঁরা।’

ইথানের বিরুদ্ধেও ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ড সংঘটন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কিশোর শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বন্দুক নিয়ে হামলা চালিয়ে থাকলেও এসব ঘটনায় তাদের মা-বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার ঘটনা সাধারণত দেখা যায় না।

কেন ইথানের মা-বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ

ইথানের বাবা জেমস ক্রাম্বলি সম্প্রতি ৯এমএম সিগ সাওয়ার আধা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রটি কিনেছিলেন। আর এর চার দিন পর ওই অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায় ইথান। জেমস স্থানীয় একটি বন্দুকের দোকান থেকে ওই হ্যান্ডগান কিনেছিলেন। তখন ছেলে তাঁর সঙ্গেই ছিল। পরে ইথান তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ওই আগ্নেয়াস্ত্রের একটি ছবি প্রকাশ করেছিল। সেখানে সে লিখেছিল, ‘মাত্রই আমি নতুন এ সুন্দর জিনিসটি পেলাম’।

পুলিশ বলছে, হামলার আগের রাতে মুঠোফোনে একটি ভিডিও রেকর্ড করেছে ইথান। সেখানে সে বলছিল, পরদিন স্কুলে বন্দুক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে সে। তবে ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশ করা হয়নি।

একই দিন ইথানের শিক্ষকেরাও খেয়াল করেন, ইথান তার মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে গুলি নিয়ে জানাশোনার চেষ্টা করছিল। শিক্ষকেরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ ভয়েস মেইল ও ই–মেইলে ইথানের মা জেনিফার ক্রাম্বলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তবে তাতে জেনিফার সাড়া দেননি।
ম্যাকডোনাল্ড জানান, জেনিফার ক্রাম্বলি সেদিন তাঁর ছেলেকে মুঠোফোনে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি তোমার ওপর রাগ করিনি। কীভাবে ধরা না পড়তে হয়, তা তোমাকে শিখতে হবে।’

হামলার দিনও ইথানের মা-বাবাকে স্কুলে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। ওই শিক্ষার্থীর টেবিলে সন্দেহজনক নোট পাওয়ার পর তাঁদের ডাকা হয়েছিল। একটি কাগজে বন্দুকের ছবি একে ইথান লিখেছিল, ‘মাথা থেকে একে সরাতেই পারছি না। আমাকে সাহায্য কর।’ একটি বুলেট ও গুলিবিদ্ধ একজনের ছবিও এঁকেছিল সে। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমার জীবন অর্থহীন’ এবং ‘এ বিশ্ব মৃত’।

স্কুলে ওই ছবিগুলো ইথানের মা-বাবাকে দেখানো হয়েছিল। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্তানের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল। তবে ইথানের মা-বাবা সন্তানকে তাঁদের সঙ্গে বাড়িতে নিয়ে যেতে রাজি হননি। তাকে ক্লাসে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর বাথরুমে ঢুকে আগে থেকে ব্যাগে লুকিয়ে রাখা আগ্নেয়াস্ত্রটি বের করে ইথান। এরপর সেখান বের হয়ে গুলি করতে থাকে সে।

খবর পেয়ে জেনিফার তাঁর সন্তানকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন: ‘ইথান, এমন করো না।’

আর বাবা জেমস ক্রাম্বলি খবর পেয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখেন বন্দুকটি নেই। তখন তিনি জরুরি সেবা বিভাগ ৯১১-এ ফোন করে এ ব্যাপারে অবহিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্তদের সর্বোচ্চ ১৫ বছরের জেল হতে পারে।