মেয়েদের মুড সুইং
বেশ কিছুদিন হলো মনামি তেমন কোনো কারণ ছাড়াই রেগে যাচ্ছে আবার হঠাৎ করেই চুপ হয়ে যাচ্ছে। আগে এ রকম হয়নি ওর। আজকাল মনামির কারণে অকারণে মুড সুইং হচ্ছে। সবকিছুতেই বিরক্ত সে বুঝতে পারছে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। যদিও খুব কমসংখ্যক মানুষ আছে যারা মুড সুইংয়ের ব্যাপারে জানে অথবা গুরুত্ব দেয়!
মনামির একটা স্বভাব হলো তার মা, বোন, বান্ধবী, অথবা অপরিচিত মানুষের মুড খেয়াল করা। অকারণে ইমোশনাল হচ্ছে এমন মানুষগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা। কেউ অযথা রাগ করছে, কাঁদছে, চিৎকার করছে খুঁজে বের করার আপ্রাণ চেষ্টা থাকে মনামির।
কেন এমন করছে তারা?
তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া যেন মনামির নিত্যদিনের কাজের একটা অংশ হয়ে গিয়েছে। মনামি ফেসবুকের একটা পেজে এই মুড সুইংয়ের ব্যাপারটা খেয়াল করেছিল প্রথম। তার আগে মুড সুইং নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না। ও প্রথমে বেশ অবাক হয়েছিল, এখন জানে এই মুড সুইংয়ের কারণ হরমোনাল ইমব্যালেন্স, মেন্সট্রুয়াল সাইকেলসহ বিভিন্ন কারণে বেশির ভাগ মেয়ে এতে ভোগে। স্বাভাবিক জীবন থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। হঠাৎ হঠাৎ তাদের ব্যবহার পাল্টে যায়। ওভার রিঅ্যাক্ট করে। কয়েক দিন তারা বেশ স্বাভাবিক থাকে। আবার কয়েক দিন দেখা যায় সামান্য কারণেও মন খারাপ করে বসে থাকে। যতক্ষণ না মেজাজ পরিবর্তন! জীবনে চরম মাত্রায় হস্তক্ষেপ না করে, ততক্ষণ তারা সাধারণত স্বাস্থ্যবান বলে বিবেচিত হয়। মনামির মেজাজ আজকাল নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সারা জীবন ওকে সবাই ধৈর্যের রানি বলেই জানত। মনামি ভাবছে ডাক্তারের কাছে যাবে কিনা?
কারণ, কেউ যদি নিয়মিতভাবে অত্যন্ত খুশি থেকে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায় বা মেজাজ গুরুতর এবং ঘন ঘন পরিবর্তন হয়, তবে চিকিৎসককে সে সম্পর্কে বলা উচিত।
মনামি মুড সুইংয়ের ওপর বিভিন্ন জায়গায় অনলাইনে পড়েছে। নিজের জন্য তার যেমন দরকারি মনে হয়েছে ভাবছে তার জানা অজানা দিকগুলো সবার সঙ্গে শেয়ার করবে।
করোনায় দীর্ঘদিন ঘরে থেকে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যখন অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে, তখন হয়তো অনেকের মুড সুইং হতে পারে। অন্যরা যাতে খুব সহজে তাদের মানসিকতা বুঝতে পারে, সেই জন্যই মনামি চেষ্টা করছে কথাগুলো তুলে ধরতে।
‘আচরণে দ্রুত পরিবর্তনের কারণগুলি মানসিক স্বাস্থ্য, হরমোন বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। মাঝেমধ্যে মেজাজের পরিবর্তন অনুভব করা বা স্বল্প বা নীল অনুভূতির স্বল্প সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া সাধারণ। তবে যদি আচরণটি বেশ কয়েক দিন বা তার বেশি সময়ের জন্য অনুমানযোগ্য হয়, তবে এটি আরও মারাত্মক কিছু হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
এক মিনিট বিরক্তিকর এবং পরের মিনিটেই খুশি মনে হতে পারে। আপনার আবেগও থাকতে পারে যা জীবনের ক্ষতি করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি:
এত উত্তেজিত হয়ে উঠেন যে, আপনি নিজেকে অর্থ ব্যয় করার, লোকজনের মুখোমুখি হওয়ার জন্য বা অন্য অনিয়ন্ত্রিত বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে জড়ানোর তাগিদ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম বলে মনে করেন। মনে হয়, আপনি নিজের ক্ষতি করতে বা আপনার জীবন শেষ করতে চান বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে। পর্যাপ্ত ঘুম পেতে, কাজে যেতে, এমনকি বিছানা থেকে উঠতে অক্ষম হন।
এই ধরনের মেজাজ শিফটের ধরনগুলো আরও গুরুতর স্বাস্থ্যের অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। আপনার অনুভূতিগুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য আপনার ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করা উচিত। আপনি কেন এভাবে অনুভব করেন এবং এটি সমাধানের জন্য আপনি কী করতে পারেন, তা নির্ধারণ করতে তারা আপনার সঙ্গে কাজ করতে পারে।
আবেগ, মায়া–মমতায় ভরা একটা মানুষ সে। মুড সুইংয়ে ভোগা মেয়েগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রাণী। ওরা নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রতিনিয়ত। আপনার আমার সঙ্গে নরমাল ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু তা মাঝেমধ্যে পেরে ওঠে না। ওভার রিঅ্যাক্ট করে ফেলে। ওরা ইচ্ছা করে এমনটা করে না। ওদের শরীরে বিভিন্ন প্রকার হরমোনের প্রভাবে ওরা এমন করে। হয়তো সে নিজেও জানে না কীভাবে নিজের মুড সুইংকে হ্যান্ডেল করতে হয়?
ওদের এই মুড সুইংটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার প্রিয় মানুষগুলার সঙ্গে হয়। হতে পারে, সে আপনার কাছে মনে মনে কিছু চাইতেছে। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছে না, তার চাওয়া সেই আশা পূরণ না হওয়ার কারণে নিমেষেই সে পাল্টে যায়। আপনার সঙ্গে ওভার রিঅ্যাক্ট করে ফেলে। কিন্তু আপনি ব্যাপারটা ধরতে পারেননি বলে আপনিও করে ফেলেন মিসবিহেভ কিংবা তাকে এড়িয়ে চলেন। এতে করে সেই মুড সুইং হওয়া মেয়েটি আস্তে আস্তে সবার থেকে গুটিয়ে নেয় নিজেকে।
তাদেরকে ন্যাকা, অ্যাইমলেস বলে রূঢ় আচরণ না করে বরং এমন একজন হোন, যার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদা যায়! যার কাছে মন খুলে কিছু কথা বলা যায়! যখন ওদের সবকিছু ভুল মনে হতে থাকে, নিজেকেই নিজের আর সহ্য হয় না! সবকিছু অর্থহীন মনে হতে থাকে! তখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে। বিশ্বাস করেন, ওই মুহূর্তে স্রেফ একজন শোনার মানুষের দরকার হয়, যে কিনা খুব মনোযোগ দিয়ে ভীষণ অগোছালো আর অর্থহীন কথাগুলো কেবলই শুনে যাবে!
হয়তো কথা গুলো বলে সে নিজেকে হালকা অনুভব করবে। বাঙালিরা মুড সুইংকে ন্যাকামি মনে করে। তাই তো ডিপ্রেশনে বেশি ভোগে। ওদের একটু বুঝুন, দেখবেন ঘনঘন মুড সুইং হওয়া মেয়েটা সাইকো না, সেও কিন্তু লক্ষ্মী একটা মেয়ে।
এই সময়টাতেই প্রিয়জনদের কিংবা বন্ধুদের মনামির পাশে থাকা সবচেয়ে বেশি দরকার। আমাদের একটু কথা বলা, অনেকটা কথা শোনা মনামি এবং ওর মতো অন্যদের স্বাভাবিক জীবনে নিজেদের ধরে রাখতে খুবই সাহায্য করবে।