যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত টিকা রপ্তানি শুরু করেছে ফাইজার

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে ফাইজারের কারখানায় টিকা উৎপাদন করা হচ্ছে
ছবি: ফাইজারের ফেসবুক

যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় উৎপাদিত করোনার টিকা রপ্তানি শুরু করেছে মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার। আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

ফাইজার চলতি সপ্তাহে মেক্সিকোতে করোনার টিকার চালান পাঠিয়েছে। এই চালানে যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজারের কারখানায় উৎপাদিত করোনার টিকা রয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজারের কারখানায় উৎপাদিত করোনার টিকা এই প্রথম রপ্তানি হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অবস্থিত ফাইজারের কারখানায় এই টিকা উৎপাদন করা হয়েছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনার টিকা রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। সেই বিধিনিষেধ মার্চে শেষ হয়। তারপরই যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় উৎপাদিত করোনার টিকা বাইরের কোনো দেশে রপ্তানি করল ফাইজার।

বিশ্বের অনেক দেশ করোনা মহামারিতে ধুঁকছে। করোনা মোকাবিলায় টিকাদান কার্যক্রমে তারা অনেক পিছিয়ে আছে। তার কারণ—টিকার অভাব।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে তার বিপুলসংখ্যক নাগরিককে করোনার টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। টিকাদানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রগতি অত্যন্ত সন্তোষজনক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্যমতে, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা পেয়েছেন ১৪০ মিলিয়নের বেশি মানুষ।

এমন প্রেক্ষাপটে উদ্বৃত্ত টিকা বিশ্বের অন্যান্য দেশকে দেওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ব্যাপক চাপ বাড়ে।

বিশ্বের বিভিন্ন ধনী দেশ আগেভাগে বিপুলসংখ্যক করোনার টিকা কিনে নিয়েছে। তারা আরও টিকা কিনে মজুত করছে। ফলে বিশেষ করে অনেক গরিব দেশ টিকা পাচ্ছে না। এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তারা ধনী দেশগুলোর এমন আচরণের সমালোচনা করে টিকার ন্যায্য বণ্টনের আহ্বান জানাচ্ছে।

মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক যৌথভাবে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই টিকার প্রয়োগ চলছে।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য গত বছরের ডিসেম্বরে ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকার অনুমোদন দেয়। পরে অন্যান্য দেশও জরুরি ব্যবহারের জন্য এই টিকার অনুমোদন দেয়। ফাইজার-বায়োএনটেকের দাবি, তাদের উদ্ভাবিত করোনার টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকর।

উচ্চ কার্যকারিতার জন্য ধনী দেশগুলো বিশেষ করে ফাইজার ও মডার্নার টিকা বেশি কিনছে। নিরাপত্তা-সংক্রান্ত উদ্বেগের জেরে এ ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা।

ফাইজার-বায়োএনটেক প্রধান ইউরোপীয় উৎপাদন কারখানা বেলজিয়ামে অবস্থিত। তারা বেলজিয়াম থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার টিকা সরবরাহ করে আসছে। এবার ফাইজারের যুক্তরাষ্ট্রের কারখানা থেকে বাইরের কোনো দেশে টিকা গেল।

ফাইজার ১ কোটির বেশি ডোজ টিকার চালান মেক্সিকোতে পাঠিয়েছে বলে খবরে জানা গেছে। এটা কোনো দেশে ফাইজারের করোনার টিকার এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় চালান।

মেক্সিকোয় ফাইজারের টিকার চালানে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত টিকা কী পরিমাণ থাকছে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।

ফাইজার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকার চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে তাদের যে অঙ্গীকার, তা তারা পূরণ করবে। তার পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাইরের দেশে টিকা পাঠাবে। এ জন্য তারা তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কারখানায় অতিরিক্ত সক্ষমতা ব্যবহার করবে।