যুক্তরাষ্ট্রে ডাকযোগের ভোট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভিন্ন ভিন্ন রায়

এবারের নির্বাচন ৩ নভেম্বর ভোটের দিনেই শেষ না হতে পারে, এ নিয়েও প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
ফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডাকযোগে ভোট নিয়ে মামলা শুরু হয়ে গেছে বেশ আগে থেকে। এর মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের একাধিক সিদ্ধান্তে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ভিন্ন রাজ্যের জন্য ভিন্ন রায় আসছে আদালতের মাধ্যমে। এসব রায়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ভিন্ন অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

গত বুধবার আদালত পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ডাকযোগে পাওয়া ভোটের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে। নির্বাচনের তিন দিন পর পৌঁছানো ব্যালট গণনা করার জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির আবেদনের পক্ষে এ রায় এসেছে। এক দিনে আগে নর্থ ক্যারোলাইনার ভোট নির্বাচনের নয় দিন পর পর্যন্ত গণনার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এ রায়ও ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ছিল।

উইসকনসিনে নির্বাচনের দিনেই ডাকযোগে দেওয়া ব্যালট বোর্ড অব ইলেকশনের কাছে পৌঁছাতে হবে। এ নিয়ে ফেডারেল ডিসট্রিক্ট কোর্ট প্রথম রায় দিয়েছিলেন, ছয় দিন পর্যন্ত আসা ব্যালট গণনা করা যাবে। পরে ফেডারেল আপিল কোর্ট এ রায় আবার পাল্টে দিয়েছেন।

ডাকযোগে ভোটের এমন গণনা নিয়ে রিপাবলিকান পার্টি আদালতে তাদের আপত্তি জানিয়ে আসছে। ডাকযোগে ভোটের গণনা নিয়ে আইনি পদক্ষেপ এখানে থেমে যাচ্ছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।

এবারের নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুই অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনা। রিপাবলিকান পার্টি এ দুই রাজ্যেই চ্যালেঞ্জে পড়েছে। ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য’ উইসকনসিনে এক দিন আগে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে এ রাজ্যে ৩ নভেম্বর পোস্টমার্ক করা ব্যালট তিন দিন পর্যন্ত গণনা করার আবেদন জানানো হয়েছিল। সে আবেদন আদালতে গৃহীত হয়নি।

মিনেসোটাতেও দুই পক্ষ আদালতে। ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির থেকে এ রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেটের ব্যালট গণনাবিষয়ক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। রিপাবলিকান পার্টি এ রাজ্যে ভোট গণনার জন্য ৩ নভেম্বরে পোস্টমার্ক করার পর সাত দিন পর্যন্ত গণনা করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখার আবেদন জানিয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা ৩ নভেম্বরে পোস্টমার্ক করা ভোট গণনায় আনার পক্ষে।

রিপাবলিকানরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। রাজ্যভেদে অনেক সময় তাঁদের অবস্থানের ভিন্নতাও দেখা যাচ্ছে। ডাকযোগে দেওয়া ভোটের বেশির ভাগই ডেমোক্র্যাটদের বলে মনে করা হচ্ছে। রিপাবলিকান-সমর্থকদের শেষ মুহূর্তে ভোটার রেজিস্ট্রেশন ও কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দেওয়ার প্রাধান্য দেখা গেছে।
আমেরিকার প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচনী আইন ভিন্ন এবং এসব রাজ্য আইনসভায় গৃহীত আইন। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রতিটি রাজ্যের ইলেকশন বোর্ড স্বাধীনভাবে করে থাকে।

এবারের নির্বাচনে বেশ আগে থেকেই সুপ্রিম কোর্টে পাল্টাপাল্টি আবেদন জমা পড়তে শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টে নতুন নিয়োগ পাওয়া রক্ষণশীল বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার আগেই ডেমোক্র্যাটদের আবেদন পড়তে শুরু করে।

রিপাবলিকান শিবির থেকে নতুন বিচারপতি নিয়োগের পর আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যভেদে পরস্পরবিরোধী রায় প্রদান করছেন।

রায় বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, রক্ষণশীল হিসেবে চিহ্নিত বিচারপতিদের অবস্থান রিপাবলিকানদের পক্ষে। চারজন রক্ষণশীল বিচারপতি নির্বাচনী আইন নিয়ে রাজ্য আইনকে চূড়ান্ত বলে তাঁদের মতামত দিচ্ছেন। চিফ জাস্টিস জন রবার্টস সিদ্ধান্তমূলক ভোট প্রদান করে সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ধরে রাখছেন।

এখন পর্যন্ত সদ্য নিয়োগ পাওয়া রক্ষণশীল বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট নির্বাচনী মামলায় নিজেকে জড়াননি। তবে নির্বাচনী মামলা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখবেন—এমন কথাও তাঁর নিয়োগ শুনানিতে তিনি নিশ্চিত করেননি। নির্বাচন-পরবর্তী যেকোনো মামলায় তাঁর অবস্থান নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে উৎকণ্ঠা রয়েছে।

করোনা মহামারির কারণে এবারে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র ব্যাপকভাবে ডাকযোগে ভোট দেওয়া হচ্ছে। ৩ নভেম্বরের পর যেসব রাজ্যে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বেশি হবে, সেখানে সমস্যা নেই। যদি কোনো রাজ্যে ভোটের ব্যবধান খুব কাছাকাছি থাকে, তখনই ডাকযোগের ভোট গণনা নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হবে। ক্ষেত্র প্রস্তুত। দুই পক্ষের আইনজীবীরা দিন-রাত কাজ করছেন এসব নিয়ে। এবারের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদেরও অতিরিক্ত নজর রাখতে হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের দিকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে নির্বাচনী আইন আলাদা আলাদা। এসব রাজ্যে ডাকযোগে ভোট গ্রহণ করার ডেটলাইনও আলাদা। ২৮টি রাজ্যে ডাকযোগে দেওয়া ভোট অবশ্যই নির্বাচনের দিনে পৌঁছতে হবে। ২২টি রাজ্যে এবং ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার জন্য ডাকযোগে ভোট নির্বাচনের দিনে পোস্টমার্ক করা হলেই গণনায় নেওয়ার আইন রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে থেকেই ডাকযোগে ভোট নিয়ে তাঁর সন্দেহের কথা জানিয়ে আসছেন। ৩ নভেম্বর নির্বাচনের রাতেই যে ফলাফল জানা যাবে না, তা বলে আসছেন। নির্বাচনের রাতে সব সময় বেসরকারি (আনঅফিশিয়াল) ফলাফল পাওয়া যায়। এসব ফলাফলে নজর রাখা হয়, ডাকযোগে পাওয়া ভোটের গণনায় ফলাফল পাল্টে যাওয়ার অবকাশ আছে কি না। দুই প্রার্থীর অবস্থান কাছাকাছি হলেই এমন ডাকযোগে আসা ভোটের গণনায় চূড়ান্ত ফলাফল পাল্টে যাওয়ার অবকাশ থাকে।

উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের বেলায় ফেডারেল কোর্ট ট্রাম্প শিবিরের অবস্থানের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ রিক হ্যাসেন বলেছেন, ভোটাধিকার ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগের অনেক কারণ রয়েছে। আদালতের হস্তক্ষেপের কারণেই এ উদ্বেগ বাড়ছে।

আদালতের রায়ও ভিন্ন ভিন্ন আসায় অনেকের মধ্যে এর মধ্যেই সংশয় ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। রাজ্যগুলোর আইন পৃথকভাবে প্রণয়ন করা। বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনী আইন ঘেঁটে দেখা গেছে, এসব আইন রচনার সময় একই আইনের ভাষা ব্যবহার করা হয়নি। রাজ্য আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত নির্বাচন নিয়ে মামলা উচ্চ আদালতে গেলে রায়ের ভিন্নতার জন্য এটাও একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।