যুক্তরাষ্ট্রের পরের যুদ্ধ কার বিরুদ্ধে

আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্র তার বর্তমান অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলোতে পূর্ণ মনোযোগ দিতে চায়
ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তান হয়ে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘গলার কাঁটা’। তাই অনেক দিন ধরেই আফগান যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার পাততাড়ি গোটানোর কাজ শুরু করেছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের কাজ শেষ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসান ঘটবে। কিন্তু তারপর কী হবে? আফগান যুদ্ধের অধ্যায় শেষে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই চুপ করে বসে থাকবে না! তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পরের যুদ্ধ কার বিরুদ্ধে?

যুক্তরাষ্ট্র যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, তা স্পষ্ট। দেশটির খোদ প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী লক্ষ্য সম্পর্কে নানাভাবে আভাস দিচ্ছেন। সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়ে দিয়েছেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র তার লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছে। এখন আর আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই।

অর্থাৎ কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০ বছর আগে আফগানিস্তানে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, তাতে পেন্টাগন সফলতা দেখছে। তাই আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি টেনে যুক্তরাষ্ট্র এখন তার স্বার্থের জন্য যে অগ্রাধিকার, তথা আশু হুমকি বা ঝুঁকি, তা মোকাবিলায় মনোযোগ দিতে চায়।

আফগানিস্তানে সেনা থাকায় যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারছে না বলে মার্কিন প্রশাসনের ভেতরে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে। এখন ‘ভারমুক্ত’ হতে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র চলে আসছে ঠিকই। কিন্তু দেশটিতে রাশিয়া, চীন, ইরানের মতো প্রতিপক্ষগুলো সক্রিয় থেকেই যাচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র চাইলেও এই যুদ্ধ থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরাতে পারবে বলে মনে হয় না। এ প্রসঙ্গে জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ডিন এলিয়ট কোহেনের পর্যবেক্ষণ হলো, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য যুদ্ধ শেষ হচ্ছে। কিন্তু গোপন যুদ্ধ চলবে।

যুক্তরাষ্ট্রকে এখন তার দেশের অভ্যন্তরের কিছু বিষয়েও কঠিন লড়াই করতে হচ্ছে। আপাতত এই লড়াইয়ের দুটি দিক। করোনা মহামারি ও অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্র বিপর্যস্ত। মহামারির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই যুদ্ধের চেয়ে কম নয়। এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এখান থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দেশটির কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

সন্ত্রাসবাদ দমনে দেশে দেশে ছুটেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন নিজ দেশেই বাসা বেঁধেছে সন্ত্রাসবাদ। দেশটিতে বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে চরম উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তার ভয়াবহ রূপ গত ৬ জানুয়ারি প্রত্যক্ষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেদিন উগ্রবাদী রক্ষণশীল লোকজন মার্কিন কংগ্রেসে নজিরবিহীন হামলা চালায়। রক্তক্ষয়ী সেই হামলায় পাঁচজন নিহত হন। বর্তমান মার্কিন প্রশাসনকে জেগে ওঠা এই উগ্রবাদ মোকাবিলায় বিশেষভাবে নজর দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সব সময় তৎপর থাকতে হচ্ছে।

দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সবচেয়ে বড় দুই হুমকি চীন ও রাশিয়া। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এই দুই দেশ তাদের শক্তি ও প্রভাব বলয় বাড়ানোর পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছে। জো বাইডেনকে এখন চীন ও রাশিয়ার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য হুমকি মোকাবিলা করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তাঁর প্রশাসনেরই এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ভাষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জের দিকে এখন দৃষ্টি দিতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আশু দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে আরও আছে ইরান ও উত্তর কোরিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার আরেক কারণ সাইবার হামলা। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বড় ধরনের সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অহংকারের জায়গা নির্বাচনী ব্যবস্থা পর্যন্ত সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। আর হামলাকারীরা তাতে সফলও হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট ভাবতে হচ্ছে।

আফগান যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যে বসে থাকছে না, তার ইঙ্গিত দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের কথায় পাওয়া যায়। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, পরবর্তী বড় ধরনের যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই কঠিন হবে। আর সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুত হওয়া দরকার।

অস্টিন তাঁর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী যুদ্ধের প্রতিপক্ষ হিসেবে কোনো দেশ বা পক্ষের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।