যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ে ট্রাম্পের মধ্যে চাঞ্চল্য

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট তাঁর সবশেষ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে রক্ষণশীলতার বার্তা দিয়েছেন। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের নিষেধাজ্ঞা পাল্টে দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীলদের পক্ষে এমন রায় আসার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নড়েচড়ে বসেছেন। কারণ, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বসে আছেন সুপ্রিম কোর্টের আশায়। ধর্মীয় সমাবেশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’র দিনেও টুইট করেছেন ট্রাম্প।

করোনার সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ায় নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর সব ধর্মীয় উপাসনালয়-প্রতিষ্ঠানে সমাবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন। গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এক আদেশে সংক্রমণের হার অনুযায়ী ধর্মীয় সমাবেশ ১০ থেকে ২৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছিলেন।

গভর্নর কুমোর জারি করা নিয়ন্ত্রণমূলক নির্দেশের বিরুদ্ধে ক্যাথলিক চার্চ ও ইহুদিদের দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিম্ন আদালতে মামলা করা হয়। ডায়োসিস অব ব্রুকলিন ও আগুদাহ ইসরায়েল অব আমেরিকা নামের নিউইয়র্কের দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ মামলা করা হয়। সেখানে অঙ্গরাজ্য গভর্নরের পক্ষে রায় যাওয়ার পর ধর্মীয় গোষ্ঠী দুটি এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায়।

সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে বলা হয়, ধর্মীয় সমাবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপের ফলে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আদেশে ধর্মীয় সমাবেশের ওপর কড়াকড়ির বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। ৫-৪ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সুপ্রিম কোর্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর পক্ষে রায় দেন।

সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবশেষ নিয়োগ দেওয়া বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট এ মামলায় রক্ষণশীলদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে ব্যারেট প্রথম রায়ে রক্ষণশীলদের পক্ষে তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করলেন। ফলে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের বহু উদারনৈতিক ইস্যু সুপ্রিম কোর্টে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে।

প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস রক্ষণশীল হলেও এ মামলায় তিনি উদারনৈতিকদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন।

প্রধান বিচারপতি তাঁর আলাদা নির্দেশনায় বলেছেন, বিষয়টি আদালতে আসারই প্রয়োজন ছিল না। এ নিয়ে অঙ্গরাজ্য গভর্নর নতুন নির্দেশনা প্রদান করতে পারেন বা না-ও পারেন।

প্রধান বিচারপতিকে প্রায়ই উদারনৈতিক পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মধ্যে রক্ষণশীলদের পাল্লা ভারী হয়ে উঠেছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, আদালত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নন। তাঁরা এ বিষয়ে দায়িত্ববান, অভিজ্ঞ ও দায়িত্বরতদের বিবেচনাকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু এই মহামারির সময়েও সংবিধানকে এক পাশে সরিয়ে রাখা যায় না।

সুপ্রিম কোর্টের সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়, মহামারির সময়েও মানুষের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের নামে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা বহু লোকের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে ব্যাহত করতে পারে। মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অবাধ চর্চাকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

মামলায় রায় প্রকাশিত হওয়ার পর আবেদনকারীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই রায়ের ফলে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা পেয়েছে। তারা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত নিউইয়র্কে ধর্মীয় সমাবেশের ওপর অঙ্গরাজ্য গভর্নরের জারি করা কড়াকড়ি আর থাকছে না।

নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা তাঁদের মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক অবস্থানের পরিচয় প্রকাশের একটা সুযোগ নিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায়কে নিছক একটি বিবৃতি বলে মনে করছেন গভর্নর কুমো। এমন রায়ের কোনো কার্যকারিতা নেই বলে গভর্নর উল্লেখ করেছেন।