যৌন নির্যাতনকারীর সঙ্গে বিলের সখ্য মানতে পারেননি মেলিন্ডা

বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস
ছবি: এএফপি

বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস দম্পতির বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে যতটা সহজ করে প্রথমে ঘোষণা এসেছিল, ঘটনা আসলে তেমন নয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য।

প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ব্রেকিং নিউজ হিসেবে ৯ মে এ নিয়ে সর্বশেষ তথ্য প্রদান করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেলিন্ডা গেটস ১৮ মাস আগে থেকেই বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে কাজ করা আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছিলেন। শিশু-কিশোরীদের পাচার ও জোর করে যৌনদাসীর কাজ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগে কারাবাসে থাকা অবস্থায় আত্মহত্যা করা মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বিল গেটসের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে মেলিন্ডা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত সোমবার বিল গেটস ও মেলিন্ডা দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দেন
ছবি: এএফপি

বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদনের নথিপত্র ও বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে মেলিন্ডা গেটস বিভিন্ন আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দাম্পত্য বিচ্ছেদ নিয়ে যোগাযোগ করে আসছিলেন। একই সময়ে বিল গেটস জেফরি এপস্টেইনের ম্যানহাটনের ম্যানশনে তাঁর সঙ্গে বারবার সাক্ষাৎ করছিলেন।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এপস্টেইনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে ফ্লোরিডায় নাবালিকাকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দণ্ড হয়। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে নিউইয়র্কের কারাগারে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানানো হয়।

আরও পড়ুন

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে দণ্ডিত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে যোগাযোগ মেলিন্ডা গেটসের বিচ্ছেদের একটি সূত্র বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে। ২০১৩ সালে গেটস দম্পতি জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর মেলিন্ডা তাঁর স্বামীকে এ নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।

তিন সন্তানের সঙ্গে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

ফ্লাইট রেকর্ডের সূত্র ধরে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বিল গেটস ‘ললিতা এক্সপ্রেস’ নামে জেফরি এপস্টেইনের প্রাইভেট জেটে করে নিউজার্সি থেকে ফ্লোরিডা সফর করেছেন। মেলিন্ডা উদ্বেগ জানানোর পরও বিল গেটস ও তাঁদের ফাউন্ডেশনের কিছু কর্মী জেফরির সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, বিষয়টি প্রকাশিত হলে বিল গেটস পরে জেফরির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগকে ‘বিচার-বিবেচনার ভুল’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকেই গেটস দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে। ৩ মে প্রকাশ্য ঘোষণার আগ পর্যন্ত চলমান কোভিড মহামারির সময়ে তাঁরা নিজেদের বিচ্ছেদের বিষয় নিয়ে সমঝোতা করে আসছিলেন।

এর মধ্যেই সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে সমবেত বিশ্ব নেতাদের সমাবেশে গেটস দম্পতির যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও পরে সম্মেলনে তাঁরা অংশ নেননি। মাইক্রোসফটের পরিচালনা পরিষদ থেকেও বিল গেটস পদত্যাগ করেন। একই সঙ্গে বার্কশায়ার হাটওয়ে নামের কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ থেকেও সরে দাঁড়ান বিল গেটস।

মা-বাবার সঙ্গে জেনিফার গেটস
ফাইল ছবি: এএফপি

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে সময় দেওয়ার জন্য কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা তখন বলা হলেও আসলে তাঁরা দাম্পত্য বিচ্ছেদের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ফয়সালা করার জন্য সময় নিচ্ছিলেন। বিশ্বের শীর্ষ সম্পদশালী এ দম্পতির সম্পদের পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন ডলার।

শুরু থেকে মেলিন্ডার আইনগত দিক যারা দেখাশোনা করছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন রবার্ট কোহেন। বিচ্ছেদ মামলার এ আইনজীবী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আগের স্ত্রী ইভানা ট্রাম্পের বিচ্ছেদের মামলায় আইনজীবী ছিলেন। রবার্ট কোহেন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যতম ধনকুবের রাজনীতিক মাইকেল ব্লুমবার্গের বিয়ে বিচ্ছেদের মামলায়ও আইনগত সহযোগিতা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

বিল গেটসের আইনজীবী দলে রয়েছেন রোনাল্ড ওলসন। ‘মাঙ্গার, টোলেস অ্যান্ড ওলসন’ নামের বিখ্যাত মার্কিন আইন প্রতিষ্ঠানের অংশীদার রোনাল্ড ওলসন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গসহ সম্পদশালী লোকজনকে আইনগত সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। বিল গেটসের সঙ্গে রবার্ট ওলসন বার্কশায়ার হাটওয়ে কোম্পানির বোর্ড সদস্য ছিলেন এবং অন্যতম ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটের বন্ধু।

বিয়ে বিচ্ছেদের নথিতে স্বাক্ষরের সময় গেটস দম্পতি ১২৫০ মাইলের দূরত্বে অবস্থান করছিলেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে। বিল গেটস নথিপত্রে সাক্ষর করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার পাম ডেজার্ট থেকে। মেলিন্ডা গেটস ওয়াশিংটন রাজ্যে তাঁদের পারিবারিক বাড়ি এবং গেটস ফাউন্ডেশনের নিকটবর্তী বেলভিউ শহর থেকে নথিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের সন্তানেরা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

গেটস দম্পতির তিন সন্তান। জেনিফার (২৫), রোরি (২১) ও ফোয়েবি (১৮)। জেনিফার এক বিবৃতিতে এর মধ্যেই বলেছেন, মা-বাবার বিচ্ছেদের ঘোষণা আসার পর নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাঁদের যেতে হচ্ছে। নিজের এবং পরিবারের অন্যদের ভাবাবেগকে সামাল দেওয়ার জন্য সেরা পদক্ষেপের বিষয়টি ধাতস্থ করার চেষ্টা করছেন।

৩ মে সিয়াটলের আদালতে মেলিন্ডা গেটস বিচ্ছেদের জন্য দায়ের করা মামলায় বলেছেন, তাঁদের বিয়ে অপ্রতিরোধ্যভাবে ভঙ্গুর হয়ে উঠেছে। তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা হয়েছে বলে জানানো হলেও সম্পদের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে কোনো প্রাক-চুক্তি তাঁদের মধ্যে নেই বলেই সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে।

আরও পড়ুন

গেটস-মেলিন্ডার মধ্যে কোনো প্রাক-বৈবাহিক চুক্তি ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী এ ধরনের প্রাক-চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদ পরবর্তী সম্পদের বণ্টন নিয়ে আগাম চুক্তি করা হয়ে থাকে। সম্পদশালী লোকজন এমন প্রাক-চুক্তির মাধ্যমে সম্ভাব্য দাম্পত্য ভাঙনের পর নিজদের অর্থনৈতিক সুরক্ষার আগাম ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। গেটস দম্পতি তাঁদের বিচ্ছেদের ঘোষণায় জানিয়েছেন, যৌথভাবেই তাঁরা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন