শরণার্থী নিয়ে উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি
সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থী গ্রহণ করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এর বিরোধিতা করছেন। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত মার্কিন কংগ্রেসে শরণার্থীদের ঢল ঠেকাতে নতুন আইনের প্রস্তাব আনা হচ্ছে। তবে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, তিনি এমন আইনের প্রস্তাবে ভেটো দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩১ জন গভর্নর, যাদের অধিকাংশই রিপাবলিকান, এক জোট হয়ে সিরিয়ার উদ্বাস্তু লোকজনকে তাঁদের রাজ্যে আশ্রয় দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও শরণার্থীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার দায়িত্ব কেবল ফেডারেল সরকারের।
তবে শরণার্থীদের গ্রহণে ওবামা প্রশাসনের ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও অঙ্গরাজ্যের গভর্নররা তাঁদের আবাসন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত এবং জটিল করে তুলতে পারবেন।
শরণার্থী নিয়ে এমন বিতর্কের মধ্যে অভিবাসীবহুল রাজ্য নিউইয়র্কের মেয়র ডি ব্লাজিও ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমরা অসহায় নারী ও শিশুদের ফিরিয়ে দিতে পারি না।’ সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও সহিংসতার শিকার লোকজনকে আমরা ফিরিয়ে দিলে বিশ্বের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।’
নিউইয়র্ক থেকে যখন শরণার্থী গ্রহণের এমন উদার ঘোষণা আসছে, তখন পাশের রাজ্য নিউজার্সির রিপাবলিকান গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি বলেছেন, সিরিয়া থেকে আসা কোনো শরণার্থী গ্রহণের কর্মসূচিতে তার রাজ্য অংশ নেবে না। এ নিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে চিঠিও দিয়েছেন।
রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে শরণার্থী নিয়ে এমন বিতর্ক এখন চরমে উঠেছে। ফ্লোরিডার গভর্নর রিক স্কট শরণার্থী গ্রহণের বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করেছেন। গতকাল বুধবার শিকাগো নগরীর সিটি কাউন্সিল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে শরণার্থী গ্রহণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, ইলিনয়ের গভর্নর ব্রুস রানার গত সোমবার বলেছেন, তাঁর রাজ্যে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের গ্রহণ আপাতত বন্ধ থাকবে। তবে ফোনিক্স নগরীর মেয়র গ্রেগ স্টেন্টন বলেছেন, তাঁর নগরী সারা বিশ্ব থেকে আসা আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে খ্যাত। তিনি আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য নগরীর মুক্ত আহ্বানের খ্যাতিকে আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও অ্যারিজোনা রাজ্যের গভর্নর ডাগ ডুসি বলেছেন, তাঁর রাজ্যে সিরিয়া থেকে আসা কোনো শরণার্থী নেওয়া হবে না। অন্যদিকে, বোস্টন, হাউস্টন ও বাল্টিমোরসহ গুরুত্বপূর্ণ নগরীর মেয়ররা শরণার্থী গ্রহণে তাদের উদার অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা শরণার্থী গ্রহণে প্রেসিডেন্ট ওবামার উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে নতুন আইনের প্রস্তাব আসছে। এইচআর ৪০৩৮ নামে এ আইন প্রস্তাবের মাধ্যমে ইরাক ও সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থী গ্রহণের প্রক্রিয়াকে দুরূহ করে তোলা হবে। প্রস্তাবে যেসব নিরাপত্তা ছাড়পত্রের পূর্বশর্ত দেওয়া হবে, তা মোকাবিলা করে আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ অসম্ভব হয়ে উঠবে।
গত বুধবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শরণার্থী গ্রহণের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার আইন প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট ওবামা ভেটো প্রদান করবেন। এ ধরনের আইন প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কোনোভাবেই সহায়ক নয়। এটি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের কাছে আমেরিকার নেতৃত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও শরণার্থী গ্রহণ করা-না করা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে এ বিভ্রান্তি আরও বড় আকারে দেখা দিয়েছে। গতকাল প্রকাশিত জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ৫৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিকই সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের এ দেশে আবাসনের বিপক্ষে। ব্লুমবার্গ পলিটিকস পরিচালিত এ জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন ধর্মীয় পরিচয় বিবেচনা না করা হয়। তবে ১১ শতাংশ লোকজন বলেছেন, আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে যেন শুধু খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কথা বিবেচনা করা হয়।