সংকটে নীরব কমিউনিটি নেতারা

কমিউনিটির নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা কেবল নানা অনুষ্ঠান, বক্তৃতা আর গণমাধ্যমে নিজেদের প্রচার নিয়ে ব্যস্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। করোনাভাইরাসের মতো চরম সংকটে সেই অভিযোগ আবারও সামনে এসেছে। কারণ এই দুর্যোগের সময়ও কমিউনিটির নেতাদের পাশে পাচ্ছেন না নিউইয়র্কের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনরা। 

বাংলাদেশি অভিবাসীরা বলছেন, করোনাভাইরাসে ইতিমধ্যে নিউইয়র্কসহ আমেরিকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রোসারি বা ওষুধের দোকানে করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। অভিবাসীরা এ নিয়ে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় আছেন। এ অবস্থায় কমিউনিটি ও সংগঠনের নেতারা নীরব। সাধারণ প্রবাসীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা আদায়ে বা পরামর্শ দিয়ে তাঁরা কোন ধরনের সহযোগিতা করছেন না। অথচ কমিউনিটির সুদিনে এসব নেতারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সামনের কাতারে বসছেন, বক্তৃতা দিচ্ছেন, নিজেকে জাহির করছেন। বিপদের সময় একেবারেই হাওয়া হয়ে গেছেন এসব নেতা।

অবশ্য এ সময় কমিউনিটির নেতারা এগিয়ে না আসলেও বাংলাদেশি কমিউনিটির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন কমিউনিটির পরিচিত কিছু মুখ ও সাধারণ প্রবাসী। এঁদের একজন ডা. ফেরদৌস খন্দকার। কমিউনিটির এই দুর্দিনে তিনি জ্যাকসন হাইটসে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। পাশাপাশি বিতরণ করেছেন বিতরণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কয়েক ঘণ্টা পরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাসে করণীয় ও সতর্কতা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সাধারণ প্রবাসীদের মনোবল কিছুটা হলেও বৃদ্ধি বাড়ছে। নিজেদের সচেতনতা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে পারছেন।
আতঙ্কিত প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কলেজশিক্ষার্থী জাকিয়া ছোয়া। জাকিয়ার পাশে থাকছে তার পরিবার, স্বজন ও বন্ধুরা। ২১ মার্চ বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কুইন্সের হিলসাইডে জাকিয়ার উদ্যোগে খাবার বিতরণ করা হবে। কঠিন এক বাস্তবতার সময় যখন পুরো শহর বিপর্যস্ত, তখন এমন উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলছেন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।
কমিউনিটি নেতা জয় চৌধুরী সাধারণ মানুষের বাসা ভাড়া ও বাড়ির মালিকদের মর্টগেজ মওকুফ করতে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসে পিটিশন দিয়েছেন। এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে ব্যক্তিগতভাবে গণসংযোগ করছেন।
জয় চৌধুরী বলেন, মানুষের চাকরি নেই, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। তারা কী করে বাসা ভাড়া বা মর্টগেজ দেবে। সে জন্য আমি গণস্বাক্ষর নিয়ে বাসা ভাড়া ও মর্টগেজ মওকুফে মেয়র অফিসে পিটিশন দিয়েছি।
অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে সব অফিস আদালত বন্ধ করে লোকজনকে কোয়ারেন্টিনে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে জ্যাকসন হাইটসের জান্নাত ফার্মেসি, গুলশান ফার্মেসি, বিসমিল্লাহ ফার্মেসি, হিলসাইডের আসসালাম ফার্মেসি, ব্রঙ্কসের জমজম ফার্মেসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওষুধ সামগ্রীর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আমরা যেকোনো ধরনের সেবা দিতে প্রস্তুত। বিভিন্ন পেশার হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া প্রথম সারির কমিউনিটি নেতারা একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
বিপদের সময় এক শ্রেণির গ্রোসারি ও সুপার মার্কেট কর্তৃপক্ষ বেশি মুনাফার লোভে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়েও কমিউনিটি নেতা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের কোন ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। অথচ কমিউনিটি নেতাদের প্রতিনিধি দল এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে কিছুটা হলেও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা পিছু হটত বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিক কমিউনিটি নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। জ্যামাইকার বাসিন্দা নজির আহাদ অভিযোগ করে বলেন, ‘কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা সাধারণ অনুষ্ঠানে হাজার ডলার খরচ করে নিজেদের জাহির করেন, অথচ তারা বিপদের মুহূর্তে আমাদের পাশে নেই।’
ব্রুকলিনের বাসিন্দা আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘এই সংকটের সময়ে আমরা কী করব বুঝতে পারছি না। কমিউনিটি নেতারা পাশে থাকলে আমরা কিছুটা সাহস পেতাম। কিন্তু তাদেরও আমরা কোথাও পাচ্ছি না।’
কমিউনিটির এক পরিচিত নেতা এক বক্স হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে চলে যান ম্যানহাটনের টাইম স্কয়ারে। নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন তার এই স্যানিটাইজার বিতরণের ছবি। সিএনএনসহ একাধিক গণমাধ্যমে তাঁর ওই স্যানিটাইজার বিলির ছবি তুলেছে।
কমিউনিটির সাধারণ মানুষ বলছেন, ওই নেতা ম্যানহাটনে গিয়ে স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন। অথচ জ্যাকসন হাইসসের দোকানগুলোতে স্যানিটাইজার না পেয়ে অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার জন্য কমিউনিটি নেতার এমন কর্মকাণ্ডে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।