‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ যুক্তরাষ্ট্র জিতল কি

* গত ২০ বছরে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে লাখ লাখ নিরীহ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে হাজার হাজার কোটি ডলার। এত প্রাণক্ষয় ও অর্থ খরচের পরও যুক্তরাষ্ট্রে হামলার হুমকি এখনো আছে।

তালেবান যোদ্ধাদের টহলের সঙ্গে একসঙ্গে গাড়িতে সামিল হয়েছেন স্থানীয় জনতা। সম্প্রতি জালালাবাদ শহরেএএফপির ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ হামলার ২০ বছর পূর্তি হচ্ছে শনিবার। নিউইয়র্ক ও পেন্টাগনে ওই হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আল–কায়েদা ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে পরাজিত করার অঙ্গীকার করেন।

আল–কায়েদার বিরুদ্ধে ওই হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। সংগঠনটির নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয়দানের অভিযোগে ও হামলার প্রতিশোধ নিতে আফগানিস্তানে ২০০১ সালেই কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে নেয় তার মিত্র দেশগুলোকে। এরপর থেকে গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকবার তার এ একতরফা যুদ্ধের লক্ষ্য পাল্টেছে; সঙ্গে পাল্টেছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর হামলার হুমকির মাত্রা ও পরিসরও। আল-জাজিরার খবর।

নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার কয়েক দিন পর জর্জ বুশ মার্কিন কংগ্রেসকে বলেছিলেন, ‘আল–কায়েদার সঙ্গে আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখানেই এর শেষ নয়। বিশ্বের প্রতিটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী খুঁজে বের করা, তাদের থামানো ও পরাজিত না করা পর্যন্ত এ যুদ্ধ শেষ হবে না।’

প্রেসিডেন্ট বুশের ওই বাগাড়ম্বরের ২০ বছর পর দেখা গেল, ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে লাখ লাখ নিরীহ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে হাজার হাজার কোটি ডলার। এত প্রাণক্ষয় ও অর্থ খরচের পরও যুক্তরাষ্ট্রে হামলার হুমকি এখনো আছে। যদিও হুমকির স্বরূপ বা অবয়ব ২০০১ সালের তুলনায় বদলেছে। সন্ত্রাস নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য জাতীয় শক্তিগুলোর লক্ষ্য অর্জনও অপূর্ণই রয়ে গেছে।

‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ ফলে বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ৯/১১–এর মতো সফল হামলা চালানোর সক্ষমতা হয়তো কমেছে বা এতে চিড় ধরেছে কিংবা তা দুর্বল হয়েছে। কিন্তু একই মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল গোষ্ঠীগুলো বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে; বিশেষত আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াতে।

৯/১১–এর পর যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে আটক বা নিহত হয়েছেন আল–কায়েদার অনেক নেতা। এমনকি ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে অভিযানে নিহত হয়েছেন সংগঠনটির তৎকালীন প্রধান ওসামা বিন লাদেন। এরপরও সংগঠনটি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। ১৭টির মতো দেশে সক্রিয় আছে তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশনসের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সিনিয়র ফেলো ব্রুস হফম্যান বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমরা বারবার দেখেছি, যখন কোনো অঞ্চলে সন্ত্রাসের হুমকি মোকাবিলা করা হয়, তখন ঘটনাপ্রবাহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিদের স্থানান্তরিত হয়ে আরেক অঞ্চলে সক্রিয়া হওয়ার সুযোগ তৈরি করে।’

সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রধানত বিশ্বের কোনো একটি অংশে কেন্দ্রীভূত অবস্থায় না থাকায় ও তাদের ভৌগোলিকভাবে বিস্তার ঘটতে থাকায় তাদের শনাক্ত এবং নিয়ন্ত্রণ করা আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। এ অবস্থায় তাঁরা ৯/১১–এর মতো বড় ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম না হলেও বারবার তাদের স্থানান্তর ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো’ নির্মূলে জর্জ ডব্লিউ বুশের লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক সেথ জি জোনস বলেন, ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ২০০১ সালের চেয়ে এখন আরও বেশি স্থানে সক্রিয় রয়েছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, বিশেষ করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বেড়ে ওঠার সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাঁরা সতর্ক করে বলেন, ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর পিছুহটা ও দেশটিতে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা মার্কিনবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে আরও সংগঠিত ও বিস্তৃত হওয়ার সক্ষমতা প্রদান করতে পারে; যা অনেক বছর ধরে পায়নি তারা।