সাধারণ সিলেটীদের অসাধারণ প্রয়াস

>
মঈনুস সুলতান, অশোক বিজয় রাহা, কবীর আহমদ, মোস্তাক আহমাদ দীন
মঈনুস সুলতান, অশোক বিজয় রাহা, কবীর আহমদ, মোস্তাক আহমাদ দীন
যেহীন আহমেদ
যেহীন আহমেদ
সিলেটের অনেক মানুষ নীরবে মানবসেবা, সমাজসেবা করে যাচ্ছেন। সংস্কৃতি আর সাহিত্য অঙ্গনেও রয়েছে অনেকের পদচারণ। তাঁরা নীরবেই নিজের কাজটি করে যাচ্ছেন। ফলে দেশের তো দূরের কথা, সিলেটের অনেক মানুষই জানে না। তাঁদের নিয়ে লিখেছেন যেহীন আহমেদ

কবীর আহমদ

১৯৪৩ সালে জন্ম। পৈতৃক নিবাস কুলাউড়ায়। সিলেট নগরসংলগ্ন খাসদবির এলাকায় আশৈশব বেড়ে ওঠা। শিক্ষাদীক্ষা শেষে পেশাগত জীবন বেছে নেন সরকারি চাকরি। দায়িত্বশীল হিসেবে কাজ করেন সরকারের সমবায় উন্নয়ন বিভাগে। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষ করে তিনি নিজের হিতকামী ইচ্ছায় যোগ দেন সমাজকর্মে। গ্রহণ করেন সম্পূর্ণ অবৈতনিক ও নিঃস্বার্থ সমাজকর্মীর ভূমিকা। কবীর আহমদ বাংলাদেশের জনপদভিত্তিক সমাজ উন্নয়নে এক নিরলস কর্মব্রতী ব্যক্তির নাম। অত্যন্ত সীমিত পরিসরে হলেও সত্যিকারের হিতৈষী কর্মকাণ্ডের জন্য সিলেট নগরের স্থানীয় পর্যায়ে দুই দশক ধরে পরিচালিত একটি সংগঠনের হাল ধরেছেন কবীর আহমদ। সেই সংগঠনটির নাম খাসদবির ইয়ুথ অ্যাকশন গ্রুপ (কেওয়াইএজি)। নগরীর যুবসমাজের উদ্যোগ ও কর্মস্পৃহায় কেওয়াইএজি সংগঠনটি সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে ওপেন এয়ার স্কুল বা মুক্তাঙ্গন বিদ্যালয় চালানো, বস্তির বিধবাদের মধ্যে আয়বর্ধক দক্ষতার শিখন সঞ্চারণ ও প্রণোদনা ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা, সেলাই শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালন, খাসদবির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও নিয়মিত শিক্ষার্থী-শিক্ষক তথা সার্বিক শিক্ষামান সংশ্লিষ্ট গুণবিকাশের কার্যক্রমে সহযোগিতা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিখরচায় কোচিং প্রদান প্রভৃতি।
কেওয়াইএজি সংগঠনটি দিন দিন সিলেটের নগর পরিসরে অসহায় শিক্ষার্থী ও নারী-শিশুদের সেবায় আন্তরিক উদ্যোগ ও উদ্যমের পরিচয় দিয়ে এসেছে। উল্লেখ্য, খাসদবির ইয়ুথ অ্যাকশন গ্রুপ গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি পিটার ইস্ট নামে এক ব্রিটিশ উন্নয়নকর্মী ও বাংলাদেশের তরুণ সমাজকর্মী হারুন আহমেদের যৌথ চিন্তা ও উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল। নব্বইয়ের শেষ দিকে হারুন আহমেদ মারা গেলে হাল ধরেন তৎকালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত কবীর আহমদ, যিনি এখনো সংগঠনের অবৈতনিক তথা সাম্মানিক সভাপতির পদে দায়িত্ব নেন। পঁচাত্তর বছর বয়সেও এই চিরতরুণ সমাজহিতৈষীর কর্মস্পৃহ তৎপরতা আশ্চর্য উজ্জীবক ও উদ্দীপনাকর।

এ কে শেরাম
এ কে শেরাম

এ কে শেরাম
কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক এ কে শেরাম একজন সব্যসাচী লেখক। তিনি মণিপুরী ভাষার পাশাপাশি বাংলাকে সমৃদ্ধ করে চলছেন। মূলত কবি ও অনুবাদক শেরাম তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে আপন সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ মণিপুরী ভাষা ও লোকসাহিত্যকে বাংলা ভাষাভাষীর কাছে তুলে ধরেছেন। একইভাবে বাংলায় সৃজিত মহত্তর সাহিত্য কীর্তিসমূহ মণিপুরী ভাষাগোষ্ঠীর কাছে উপস্থাপন করেছেন নিরলসভাবে। একজন ভাষা প্রেমিক ও সংবেদনশীল মানুষের আন্তরিকতার প্রমাণ মিলে শেরামের সাহিত্যকর্ম। জন্ম ১৯৫৩ সালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে। ব্যাংকিং পেশা থেকে সম্প্রতি অবসরে যাওয়া শেরাম পূর্ণকালীন লেখক হিসেবে কাজ করছেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও সম্পাদনা মিলিয়ে এ কে শেরামের কুড়ির অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে শেরামের পরিচিতি বিস্তৃত রয়েছে মণিপুরী ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অধ্যয়নে একজন নিষ্ঠাবান নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে।

মোস্তাক আহমাদ দীন
জন্ম ১৯৭৪ সালে সুনামগঞ্জে। কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করেছেন। কর্মজীবনে সিলেট কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ। মৌলিক গ্রন্থের পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। অনুবাদকর্মেও পারঙ্গম। সম্পাদনা করেছেন দুটি সাহিত্যপত্র ‘বিকাশ’ এবং ‘মুনাজেরা’ নামে। এর মধ্যে একটি এখনো প্রকাশিত হচ্ছে। অর্জন করেছেন ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’, ‘চিহ্নমেলা পুরস্কার’ ও ‘লোকসাহিত্য পুরস্কার’। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে আবির্ভূত কবি মোস্তাক আহমাদ দীন বাংলা কবিতায় বিশেষভাবেই সমাদৃত তাঁর মরমী বিভূতিভরা বাক্প্রতিমা আর ধ্রুপদি ধারায় আঞ্চলিক শব্দচয়নের নতুনত্ব আনয়নের জন্য। কবিতা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কথা ও হাড়ের বেদনা’, ‘ভিখিরিও রাজস্থানে যায়’, ‘বানপ্রস্থের আগে’। উল্লেখযোগ্য গদ্যগ্রন্থ ‘আটকুঠুরি’, ‘কবিতাযাপন’, ‘মাটির রসে ভেজা গান’ প্রভৃতি।

সান্ত্বনা দেবী
সান্ত্বনা দেবী

সান্ত্বনা দেবী
সিলেটের মণিপুরী নৃত্যকলা ও সংস্কৃতি চর্চার প্রসারে নিরলস কাজ করে যাওয়া ব্যক্তিদের একজন অগ্রণী ব্যক্তি সান্ত্বনা দেবী। বয়সে নবীন এই নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যকলা শিক্ষক দেড় দশক ধরে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে যোগ্যতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। নিজে যেমন পরিবেশনায় পারদর্শী তেমনি প্রশিক্ষক ও নৃত্যায়োজক বা নৃত্য রচয়িতা হিসেবে কোরিওগ্রাফিতে স্বনামে রেখে চলেছেন বিশেষ অবদান। সিলেটসহ গোটা দেশে অ্যাকাডেমি ফর মণিপুরী কালচার অ্যান্ড আর্টস অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে মঞ্চায়ন করে চলেছে। এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সান্ত্বনা দেবী ও তাঁর সহশিল্পীদল। সান্ত্বনা দেবী পরিচালিত নৃত্যায়োজনে প্রায়শ মণিপুরী নৃত্যকলা নান্দনিকতায় নৃত্য-উপভোক্তাদের নজর মোহিত করে রাখে।
দেবী-সৃজিত উল্লেখযোগ্য নৃত্য রচনাগুলোর মধ্যে একটি ‘মাইবি’। প্রথানুবর্তী নৃত্য কাঠামোর মধ্যে থেকেও দেবী বিশেষ সৃজনকুশলী বিভা দেখিয়ে থাকেন তার রচনায়। নৃত্য শাস্ত্র অনুসারে মাইবি হচ্ছে পূজারিদের নাচ তথা নাচের মধ্য দিয়ে দেবতাকে নিবেদিত অর্ঘ্য, নৃত্য নৈবেদ্যের মাধ্যমে দেবতা তুষ্টি অর্জন এই নৃত্যের অভীষ্ট। মণিপুরী নৃত্য সাহিত্যের বয়ানে মাইবি ছাড়াও ‘মন্দিরা’, ‘ঝুলন’ ইত্যাদি ঘরানায় সান্ত্বনা দেবীর রয়েছে পৃথক নৃত্য রচনাগুচ্ছ। ভক্তিরস, প্রেম, বাৎসল্য, সৌহার্দ্য, ষড়্ঋতু প্রভৃতি অনুষঙ্গ সান্ত্বনা দেবীর কাজে দেখা দিয়ে যায় বারবার। উল্লেখ্য যে, সিলেটের আবহমান সংস্কৃতিতে ক্রমে ঐতিহ্যেরই অংশ হয়ে উঠেছে এই শিল্প ঋদ্ধ অনন্য মাত্রিক মণিপুরী নৃত্য। অ্যাকাডেমি ফর মণিপুরী কালচার অ্যান্ড আর্টস এই নৃত্যানুশীলনে এবং এর প্রসারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও রচিত নৃত্যমালা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান সঞ্চালক এবং কোরিওগ্রাফার সান্ত্বনা দেবী পেশাগত জীবনে একজন সফল শিল্পশিক্ষক ছাড়াও মদনমোহন মহাবিদ্যালয়ে এক-দশক ধরে ব্যবস্থাপনার শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন।

আমেরিকাতে বসবাস
মঈনুস সুলতান
ভ্রমণগল্প লিখে বাংলাদেশের পাঠকসমাজে ব্যাপক সমাদৃত মঈনুস সুলতান মূলত কবি। দীর্ঘদিন কবিতা প্রকাশিত হয়নি না হলেও সম্প্রতি ফের কবিতায় ফিরেছেন। ছোটগল্প লিখছেন অত্যন্ত মুনশিয়ানার সঙ্গে। ভুবন ভ্রমিয়া ফেরেন তিনি কতকটা পেশাগত প্রয়োজনে এবং অনেকটাই শখ থেকে। লেখেন উপন্যাসোপম গদ্য প্রকৌশলে সেই সব বৈচিত্র্যমুখর দেখাদেখির বৃত্তান্ত। সৈয়দ মুজতবা আলীর পর সামগ্রিক বিচারে বাংলা সাহিত্যে বৈঠকি স্বাদুতাবাহী গদ্যের পরম্পরা নবতর বৈদগ্ধ্যে-বৈভবে মঈনুস সুলতানের ন্যারেটিভে পাওয়া যায়। লেখকের জন্মজেলা সিলেট। স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও খণ্ডকালীন নানা দেশে বাস করেন। প্রকাশিত বই দশেরও বেশি, সব-কটিই পাঠকাদৃত, গদ্যগুণবিচারী পাঠকই তাঁর গ্রন্থগ্রাহী।
মঈনুস সুলতানের বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘নিকারাগুয়া সামোটা ক্যানিয়নে গাবরিয়েলা’, ‘জিম্বাবুয়ে বোবা পাথর সালানিনি’, ‘মৃত সৈনিকের জুতার নকশা’, ‘কাবুলের ক্যারাভান সরাই’ প্রভৃতি। পেয়েছেন মননশীল বইশাখায় ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা পুরস্কার ১৪১৯’। মঈনুস সুলতানের জন্ম ১৯৫৬ সালে সিলেটের ফুলবাড়ি গ্রামে। পৈতৃক নিবাস মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি করেন। খণ্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস এবং স্কুল অব হিউমেন সার্ভিসেসের। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকার ভিজিটিং স্কলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাগত জীবনে গোড়ার দিকে সুলতান বাংলাদেশের উন্নয়ন সংস্থা এফআইভিডিবিতে বয়স্কশিক্ষা কার্যক্রমে দীর্ঘদিন অবদান রেখেছেন। শিক্ষকতা, গবেষণা ও কনসালট্যান্ট হিসেবে বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।

শান্তি নিকেতনের দুই সিলেটী নক্ষত্র
অশোক বিজয় রাহা
বাংলা সাহিত্যের প্রভাবশালী কবি। জন্ম নিয়েছেন সিলেটের ঢাকা দক্ষিণ এলাকায়। দর্শন শাস্ত্রের ছাত্র থাকাকালে তাঁর কবিতা লেখা শুরু। সাহিত্যের প্রতি টানের ফলে কলেজে দর্শনের অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত কবি বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনা করেন।
অশোক বিজয়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ডিহাং নদীর বাঁকে’ প্রকাশিত হয় ১৯৪১ সালে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে রুদ্রবসন্ত’ (১৯৪১), ‘ভানুমতীর মাঠ (১৯৪২), ‘জলডম্বরু পাহাড়ে’ (১৯৪৫), ‘রক্তসন্ধ্যা’ (১৯৪৫) প্রভৃতি। বিশ্বভারতীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর প্রকাশিত হয় ‘উড়োচিঠির ঝাঁক’ (১৯৫১), ‘যেথা এই চৈত্রের শালবন’, ‘ঘণ্টা বাজে! পর্দা সরে যায়’ এবং ‘পৌষফসল’।
অশোকের কবিতা চিত্রবহুল। নদী, পাহাড়, অরণ্যের প্রকৃতি শুধু তাঁর কবিতার পরিবেশ বা আবহ রচনার উপলক্ষ মাত্র নয়, তাঁর কবিতার কেন্দ্রভূমি। স্বল্পবাক ও বর্ণাঢ্য চিত্র তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অসম্ভব শক্তিশালী কাব্যপ্রতিভার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কোনো অজ্ঞাত কারণে কবি অশোক বিজয় আধুনিক কাব্য সমালোচকদের কাছে সেভাবে সমাদৃত হননি।

অনাদি কুমার দস্তিদার
‘তুমি একদিন বিশ্বভারতীয় সঙ্গীতাচার্য হবে’ এই কথাটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটেরই এক কীর্তিমান ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠিতে। ঠাকুর সেই চিঠিটি লিখেছিলেন লন্ডন থেকে ১৯২০ সালে। যাকে লিখেছিলেন তিনি সিলেটের খ্যাতনামা সাহিত্য ও সংগীতবেত্তা অনাদি কুমার দস্তিদার। যদিও অনাদি দস্তিদার সিলেটের ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব, সিলেটের সম্ভ্রান্ত দস্তিদার পরিবারে তাঁর জন্ম, বর্তমান প্রজন্ম এই সংগীতরসিক পণ্ডিত ব্যক্তিটিকে চেনেই না বললে চলে। অনাদি দস্তিদারই প্রথম কলকাতায় রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষালয় ‘গীতবিতান’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর্থিক কারণে রবীন্দ্রনাথের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বিশ্বভারতীর ‘সংগীতাচার্য’ করতে পারেননি। কিন্তু ‘স্বরবিতান’-এর ৩২টি খণ্ড তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল।
রথীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, এই কাজ করার জন্য অনাদি কুমার ছাড়া আর কোনো যোগ্য ব্যক্তি নেই। ছাত্রজীবনে অনাদি দস্তিদার শান্তিনিকেতনের ফুটবল টিমের লিডারও ছিলেন। অনাদি দস্তিদারের মেয়েজামাই প্রখ্যাত গবেষক অমিতাভ চৌধুরী সম্পাদিত ‘অনাদি কুমার’ নামে বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের উদ্যোগে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে প্রমথনাশ বিশী অনাদি কুমার সম্পর্কে চমৎকার উক্তি করেছিলেন, ‘অনাদি কুমার অতি উত্তম প্রতিভার অধিকারী। সিলেটে অধম অধিকারী জন্মায় না।’ তাঁর রচিত স্বরলিপি শুদ্ধ ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রণীত বলে সংগীত বিশেষজ্ঞরা রায় দিয়েছেন। ছাত্রজীবনেই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে সরোদ কিনে দিয়েছিলেন। এই অনাদি দস্তিদারের কাছে রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু চিঠি আছে যা ছিন্ন পত্রাবলি গ্রন্থে সংকলিত রয়েছে।

(লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এফআইভিডিভির প্রধান নির্বাহী)