সামাজিক যোগাযোগের নতুন মাধ্যম নিয়ে আসছেন ট্রাম্প

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: এএফপি

সামাজিক যোগাযোগের প্রায় সব মাধ্যমে নিষিদ্ধ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছেন। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আসছে। ইতিমধ্যে তাঁর লাখ লাখ অনুসারীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। টুইটার, ফেসবুকের চেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ট্রাম্প গড়ে তুলবেন বলে আশা করছেন তাঁর অনুসারীরা। ট্রাম্পের ২০২০ সালের নির্বাচনী মুখপাত্র জেসন মিলার এমনটাই বলছেন।

২১ মার্চ ফক্স নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দেন জেসন মিলার। সাক্ষাৎকারে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগের পুরো খেলাই ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত হবে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প ব্যাপকভাবে টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করতে থাকেন। হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনের মতো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের বাইরে টুইটার-ফেসবুক হয়ে ওঠে ট্রাম্পের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ট্রাম্প তাঁর বেপরোয়া ও উসকানিমূলক কথাবার্তা প্রচার করতে থাকেন। টুইটার ট্রাম্পের বিতর্কিত পোস্টের নিচে নিজেদের বক্তব্য জুড়ে দিতে থাকে। ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ফলাফল নিয়ে উল্টোপাল্টা পোস্ট দিতে থাকেন। এ অবস্থায় টুইটার স্থায়ীভাবে ট্রাম্পের বক্তব্যের নিচে নিজেদের বক্তব্য জুড়ে দিতে থাকে।

৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনার পর টুইটার ও ফেসবুক ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দেওয়া হয়।

ক্ষমতা থেকে ২০ জানুয়ারি বিদায় নেওয়ার পর ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো ক্লাবে অবস্থান করছেন। অন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো তিনি নীরব না থেকে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি রক্ষশীলদের সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন। রিপাবলিকান পার্টির চরম রক্ষণশীল লোকজনকে রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করছেন।

২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। গত নির্বাচনে তাঁর পরাজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে এখনো মনে করেন ট্রাম্প ও তাঁর অনুসারীরা।

প্রতিষ্ঠিত মার্কিন গণমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের বক্তব্য প্রচারে সতর্ক ভূমিকা পালন করছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক ভালো ছিল না। এখনো ভালো নেই। তিনি সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টের মতো পত্রিকাকে ‘ফেক মিডিয়া’ বলে উল্লেখ করে থাকেন।

গত সপ্তাহে টুইটার বলেছে, নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকজনের বক্তব্য প্রচার নিয়ে তারা জনগণের মতামত সংগ্রহের চেষ্টা করছে। সাধারণ লোকজনের মতো নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকজনকেও টুইটার ব্যবহারের একই নীতিমালা মেনে চলতে হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারিত ট্রাম্পের বক্তব্য ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলাকে ত্বরান্বিত করেছে বলে সমালোচনা রয়েছে। এদিনের হামলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন ট্রাম্প-সমর্থকেরা। কোনো কোনো আইনপ্রণেতা অল্পের জন্য বেঁচে যান। এই হামলার পর ট্রাম্প প্রায় সব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিষিদ্ধ হয়ে যান।

টুইটার-ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিষিদ্ধ হয়ে ট্রাম্প অস্থির হয়ে ওঠেন। এ নিয়ে ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। ট্রাম্প তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে অভ্যস্ত। তাই এ ক্ষেত্রে বাধা পাওয়ার বিষয়টি তিনি সহজে মেনে নিতে পরেননি। ক্ষমতায় থাকাকালে প্রযুক্তিভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠানকে তিনি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন। পরে জানিয়েছিলেন, সামাজিক যোগাযোগের নতুন মাধ্যম গড়বেন তিনি।

ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেসন মিলার বলেছেন, কোটি কোটি লোক ট্রাম্পকে ভালোবাসে। ট্রাম্প দ্রুত এমন একটা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলবেন, যেখানে সবাই কথা বলতে পারবে। আর সবাই ট্রাম্পের কথাও শুনতে পারবে।