সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: এএফপি

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত অভিশংসন প্রস্তাবের বিচারপ্রক্রিয়া সিনেটে শুরু হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

গতকাল সোমবার প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার নিয়োজিত কংগ্রেসের অভিশংসন ব্যবস্থাপকেরা সিনেটে প্রস্তাবটির দলিল হস্তান্তর করেছেন। ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জ্যামই রাসকিন সিনেট ফ্লোরে অভিশংসন প্রস্তাব পাঠ করেছেন।

স্পিকার নিযুক্ত প্রতিনিধি পরিষদের অভিশংসন ব্যবস্থাপকেরা কালো মাস্ক পরে দুজন দুজন করে সিনেট কক্ষে প্রবেশ করেন।

নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির ভুয়া দাবি, নির্বাচনব্যবস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করার প্রয়াসসহ ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার বিবরণ রয়েছে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবে।

রিপাবলিকানদের কেউ কেউ বলে আসছিলেন, ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন দণ্ড কার্যকর করার সুযোগ মার্কিন সংবিধানে নেই।

সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা চাক শুমার বলেছেন, ১৮৭৬ সালে কংগ্রেসে মার্কিন সংবিধানের ব্যাখ্যায় ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরও দণ্ড কার্যকর বিধান রয়েছে।

সিনেটে অভিশংসন দণ্ড কার্যকর হলে ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।

মার্কিন কংগ্রেস
ছবি: রয়টার্স

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল সিএনএনকে বলেছেন, সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন বিচার হওয়া অবশ্যই উচিত।

সিনেটে নিজের কর্মজীবনের কথা উল্লেখ করে বাইডেন বলেছেন, মার্কিন সিনেট বদলে গেছে। তবে ততটা বদলে যায়নি।

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে মার্কিন সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। এমন বিচার আদালতে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস সভাপতিত্ব করবেন না বলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সিএনএন বলেছে, মার্কিন সংবিধানে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতিকে এমন আদালতের সভাপতিত্ব করার কথা বলা আছে। ক্ষমতায় না থাকা অবস্থায় অভিশংসনের ক্ষেত্রে কোনো সিনেটর এই আদালতের সভাপতিত্ব করতে পারেন।

সিনেটে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আছেন প্যাট্রিক লেহি। সিনেটর লেহি অষ্টম মেয়াদের মতো সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত এই ডেমোক্র্যাট সিনেটর সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন আদালতে সভাপতিত্ব করবেন বলে জানানো হয়েছে।

অভিশংসন আদালতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবীরা অংশ নেবেন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর আইনজীবী দলের সদস্যদের নাম পাওয়া যায়নি।

একজন রক্ষণশীল সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেলকে ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে।

৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবনে হামলা চালান ট্রাম্পের সমর্থকেরা
ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সিএনএনকে জানিয়েছেন, সপ্তাহান্তে ফ্লোরিডায় গলফ খেলার ফাঁকে এ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। অভিশংসন বিচার মোকাবিলার জন্য ট্রাম্প নিজে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরবেন বলে তিনি মনে করেন না। তবে অভিশংসন বিচারপর্ব থেকে তিনি দ্রুত উতরে যাওয়ার আশা করছেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে থেকে সিনেটের অভিশংসন আদালতে কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করা হবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতের আনুষ্ঠানিক শুনানি শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে অভিশংসন বিচার কয় দিনব্যাপী চলবে, তা জানানো হয়নি।

সিনেটর চাক শুমার বলেছেন, অভিশংসন প্রক্রিয়ার নানা বিষয় নিয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে একটি কাঠামোগত সমঝোতায় পৌঁছানোর ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

এখন পর্যন্ত অভিশংসন বিচার নিয়ে যা জানা গেছে, তার মধ্যে রয়েছে ট্রাম্পের আইনজীবী দল দুই সপ্তাহের বিচারপূর্ব আলোচনার সুযোগ পাবে। ফলে তারা বিচারের শুনানি ও যুক্তিতর্কের জন্য প্রস্তুতির সময় পাবে।

সাউথ ক্যারোলাইনার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল চার্লি কনডোন ট্রাম্পের আইনজীবী দলে যোগ দিচ্ছেন বলে শোনা গিয়েছিল। তবে তিনি গতকাল তাঁর অপারগতার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প শিবিরকে।

সাউথ ক্যারোলাইনার বিখ্যাত আইনজীবী বাচ বাওয়ার্স ট্রাম্পের আইনজীবী হিসেবে থাকছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, অভিশংসন আদালতের জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সিনেটররা শপথ গ্রহণ করবেন।

আগামী দুই সপ্তাহ বাইডেন প্রশাসনের জন্য সিনেটের কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিয়োগ দেওয়া সাংবিধানিক পদগুলো নিশ্চিত করার জন্য সিনেটে একের পর এক শুনানি চলছে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষিত ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্রস্তাব নিয়েও আইনপ্রণেতাদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস চলছে।

মার্কিন সিনেট এখন ৫০: ৫০ আসনে বিভক্ত। সিনেটে এখন উভয় দলের সদস্যসংখ্যা সমান। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদাধিকার বলে সিনেটে একটি ভোট দিতে পারেন। ফলে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভোট মিলিয়ে সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসন দণ্ড দিতে হলে সিনেটের দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন।

রিপাবলিকান পার্টির ১০ জন আইনপ্রণেতা প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। সিনেটে ১৭ জন রিপাবলিকান সিনেটরের ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ডের পক্ষে ভোট দেওয়ার আলামত এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।

সিনেটে প্রথম দফায় ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে একমাত্র রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি ভোট দিয়েছিলেন। এবারও মিট রমনিকে পাওয়া যাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। মিট রমনি ছাড়া সিনেটর লিসা মারকোস্কি, সুজান কলিন্স ও ব্যান সাসি সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, ক্যাপিটল হিলের সহিংসতার জন্য ট্রাম্পের দায় রয়েছে। লোকজন তাঁর বক্তব্যে উসকানি পেয়েছে।
সিনেটর ম্যাককনেলের এমন বক্তব্যের পর মনে করা হচ্ছে, সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে আরও কিছু রিপাবলিকান দাঁড়াতে পারেন।

রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও ইতিমধ্যে বলেছেন, ‘দেশে এমনিতেই আগুন জ্বলছে। এই জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে গ্যাসোলিন ছাড়াকে আমরা সমর্থন করতে পারি না।’

ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড কার্যকর করার উদ্যোগ দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন সিনেটর মার্কো রুবিও।

রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প এখন আর ক্ষমতায় নেই। তাঁকে অভিশংসন করার কোনো সুযোগও নেই। তাঁরা সাংবিধানিক প্রশ্নকেই বারবার সামনে নিয়ে আসছেন। এসব কাজ না করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন, তার প্রতি ডেমোক্র্যাটদের মনোযোগী হতে বলছেন ট্রাম্প-সমর্থক রিপাবলিকানরা।

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ক্ষমতার শেষ দিকে এসে বেপরোয়া কাজ করেছেন ট্রাম্প। এমন কাজ করে পার পেয়ে গেলে আমেরিকার জন্য খারাপ নজির সৃষ্টি হবে। কৃতকর্মের ফল ট্রাম্পকে ভোগ করতে হবে।