সিলেটের চা-বাগান

সিলেটের লাক্কাতুরা চা-বাগান থেকে চা পাতা তুলে ফিরছেন শ্রমিকেরা
ছবি: প্রথম আলো

ছোট্ট সবুজ পাহাড়, নদী-নালা, খাল-বিল প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট। সিলেটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক ও পর্যটক ভিন্ন ভিন্ন নামে সম্বোধন করেছেন একে। যেমন শ্রীহট্ট, শ্রীভূমি, প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিক শহর ইত্যাদি।

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ এ সিলেট। এটাও সিলেটের এক নাম। এ নামে সিলেটকে চিহ্নিত করার পেছনেও যথেষ্ট কারণ ও যুক্তি রয়েছে। যেমন—সিলেটের সর্বত্র বিশেষ করে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সদর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক চা বাগান। কয়েক লাখ একর জায়গার এ চা-বাগানগুলোতে দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ চা উৎপন্ন হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত চা বিদেশে রপ্তানি হয়, আয় হয় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এ চা-পাতা উৎপাদিত হয় দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি থেকে। সাধারণত নিচু জায়গা হতে তুলনামূলক উঁচু সমতল ভূমি এবং ছোট আকারের টিলা ও তার পাদদেশে চা গাছ জন্মায়। চা গাছের চারা রোপণ করার প্রায় পাঁচ বছর পর থেকে উৎপাদন শুরু হয়। চা গাছকে কেটে চার-পাঁচ ফুটের মধ্যে রাখা হয়। কারণ এর চেয়ে বড় হলে তা থেকে ভালো ফলন হয় না এবং পাতা সংগ্রহও কঠিন হয়ে যায়।

বর্ষাকালে চা গাছে নতুন কুঁড়ি ও পাতা জন্মালে খুব সুন্দর ও মসৃণ দেখায়। মনে হয়, এক বিরাট সবুজ গালিচা দিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা আচ্ছাদিত করে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু বড় গাছ থাকে যা চা গাছকে রোদের প্রখরতা থেকে রক্ষা করে। কড়া রোদ আবার চা গাছের জন্য ক্ষতিকর।

সিলেটে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি স্থানকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে, নির্মাণ করা হয়েছে উন্নত মানের রেস্তোরাঁ। পরিবার নিয়ে দিনযাপনের জন্য আছে মোটেল। এতে বৃদ্ধি পেয়েছে পর্যটকের আগমন। সিলেটের চা বাগানগুলো দেখার জন্য শুধু দেশীয় নয় বিদেশ থেকেও আগমন ঘটে পর্যটকদের।

শ্রীমঙ্গল, সাতগাঁও, মাধবপুর, রশীদপুর তেলিয়াপাড়া ও জুড়ি এলাকায় চা বাগানের সংখ্যা বেশি। এসব এলাকার টিলা জমি চা উৎপাদনের জন্য সহায়ক। শ্রীমঙ্গল থেকে গাড়িতে ঢাকা যাওয়ার পথে মাধবপুর পর্যন্ত যেতে অনেকগুলো চা বাগান রাস্তার পাশে দেখা যায়। বাগানের ভেতর দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা আর তার পাশে চা গাছের সারি দেশি বিদেশি আগন্তুক ও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এসব বাগানে অনেক সিনেমার শুটিংয়ের কাজও করা হয়।

সিলেট শহরের আশপাশেও বেশ কয়েকটি চা বাগান আছে। যেমন—লাক্কাতুরা, মালিনীছড়া, খাদিম, আলীবাহার। অবস্থানগত কারণে এ বাগানগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। জানা যায়, মালিনীছড়া বাগান স্থাপিত হয় ১৮৫৪ সালে। প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো এ বাগান শুধু বাংলাদেশেই নয় ভারত উপমহাদেশের মধ্যে এক ঐতিহ্যবাহী চা বাগান। সিলেটে কোনো পর্যটক বা ভ্রমণকারী আসলে শহরের পার্শ্ববর্তী এসব বাগানে ভিড় জমান। তাঁরা উপভোগ করেন বাগানের সৌন্দর্য ও চা উৎপাদন পদ্ধতি। অবলোকন করেন বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের রীতিনীতি। অত্যন্ত সহজ সরল এঁদের বসবাস ও চলার পদ্ধতি।

সাধারণত মার্চের শেষ বা এপ্রিলের প্রারম্ভে বৃষ্টি হলেই চা গাছে নতুন কুঁড়ি ও পাতা গজায়। বাগানের শ্রমিকেরা অত্যন্ত সুকৌশলে তাঁদের দুটি আঙুল দিয়ে এসব কুঁড়ি ও পাতা গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেন। গাছ থেকে পাতা ওঠাতে নারী শ্রমিকদেরই বেশি তৎপর দেখা যায়। তাঁদের পাতা সংগ্রহের এ দৃশ্য ও দক্ষতা দর্শকদের অভিভূত করে।

সিলেট শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে লাক্কাতুরা ও মালিনীছড়া চা বাগানের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। শহরের উত্তর প্রান্তে এ দুটি বাগানের অবস্থান। এ বাগান দুটি ও তার চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শকদের মনে নতুন প্রাণের স্পন্দন জোগায়। পাশে ক্যাডেট কলেজ এবং তার পাশে পর্যটন মোটেল। এ দুটির অবস্থান সত্যিই সুন্দর। পর্যটন মোটেল থেকে ওসমানী বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। মোটেল ভবনের ছাদ থেকে বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের দৃশ্য কত যে সুন্দর ও আকর্ষণীয় তা কেউ না দেখলে হয়তো বিশ্বাসই করবে না।

সিলেটে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি স্থানকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে, নির্মাণ করা হয়েছে উন্নত মানের রেস্তোরাঁ। পরিবার নিয়ে দিনযাপনের জন্য আছে মোটেল। এতে বৃদ্ধি পেয়েছে পর্যটকের আগমন। সিলেটের চা বাগানগুলো দেখার জন্য শুধু দেশীয় নয় বিদেশ থেকেও আগমন ঘটে পর্যটকদের।