সুপ্রিম কোর্টে কাভানাই নিয়োগ পেলেন

সুপ্রিম কোর্টের বিদায়ী বিচারপতি অ্যান্থনি কেনেডির কাছে বিচারবিষয়ক শপথ নিচ্ছেন ব্রেট কাভানা, পাশে পরিবারের সদস্যরা। ছবি: মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টের বিদায়ী বিচারপতি অ্যান্থনি কেনেডির কাছে বিচারবিষয়ক শপথ নিচ্ছেন ব্রেট কাভানা, পাশে পরিবারের সদস্যরা। ছবি: মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট

এত বিক্ষোভ, বিতর্ক, তদন্তের পরও শেষ পর্যন্ত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প–মনোনীত ব্রেট কাভানা নিয়োগ পেলেন। গতকাল শনিবার সিনেটের পূর্ণ ভোটে দুই ভোটের ব্যবধানে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হয়। চূড়ান্ত ভোটের আগে পরীক্ষামূলক ভোট ও সংক্ষিপ্ত বিতর্কে (ক্লোচার ভোট) কাভানার পক্ষে জয়ের আভাস ছিল।

আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ৫১-৪৯ আসনে সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে কাভানা রিপাবলিকানদের ৪৯টি ভোট পেয়েছেন। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে রিপাবলিকান সিনেটর স্টিভ ডেইনেস ভোটের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। আর রিপাবলিকান লিসা মুর্কওয়াস্কি উপস্থিত থাকলেও কাভানাকে ভোট দেননি। তিনি শুধু তাঁর উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন। এর আগের দিন ক্লোচার ভোটে তিনি কাভানার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে শুধু একজন জো মানচিন দলের বাইরে গিয়ে কাভানাকে ভোট দিয়েছেন। এতে ৫০-৪৮ ভোটে জিতেছেন কাভানা।

নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে কাভানার নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টিকে ট্রাম্পের রাজনৈতিক বিজয় বলে মনে করা হচ্ছে। ভোটের আগে কাভানার মনোনয়নের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেন।

ভোটের সময় সাধারণ গ্যালারি থেকে বিক্ষোভকারীরা ‘লজ্জা লজ্জা’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। ওই সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ‘অর্ডার’ করতে হয়।

ভোটের পর গতকাল সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস তাঁকে সাংবিধানিক শপথ করান এবং যাঁর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন কাভানা, সেই বিদায়ী বিচারপতি অ্যান্থনি কেনেডি তাঁকে বিচারবিষয়ক শপথ করান।

এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে ৫৩ বছর বয়সী ব্রেট কাভানা সারা জীবনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ পেয়ে গেলেন। তাঁর নিয়োগের মধ্যে দিয়ে নয় সদস্যের সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীলদের অবস্থান আরও শক্ত হলো। মার্কিন রাজনীতি ও সামাজিক অবস্থানে সুপ্রিম কোর্টের প্রভাব অপরিসীম। সুপ্রিম কোর্টের কথাই সেখানে শেষ কথা।

কাভানার নিয়োগের বিষয় নিশ্চিত করার পর সুপ্রিম কোর্টের বাইরে স্ট্যাচু অব জাস্টিসের ওপর বসে বিক্ষোভ করছেন এক নারী। ছবি: এএফপি
কাভানার নিয়োগের বিষয় নিশ্চিত করার পর সুপ্রিম কোর্টের বাইরে স্ট্যাচু অব জাস্টিসের ওপর বসে বিক্ষোভ করছেন এক নারী। ছবি: এএফপি

কাভানার নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার পর টুইটারে তাঁকে অভিনন্দন জানান ট্রাম্প। পরে তিনি এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, কাভানাকে ‘ডেমোক্র্যাটদের ভয়াবহ আক্রমণের’ মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ওই নারীকেও ( ক্রিস্টিন) ‘অপমানের’ মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি জানান, তিনি শতভাগ নিশ্চিত, যে নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন, তিনি ভুল করে কাভানার নাম বলেছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টিন ব্লেসি ফোর্ডের অভিযোগের কারণে কাভানার নিয়োগ জটিলতায় পড়ে যায়। ক্রিস্টিন অভিযোগ করেন, ১৯৮২ সালে হাইস্কুলে পড়ার সময় এক পার্টিতে কাভানা মাতাল অবস্থায় তাঁকে যৌন হয়রানি করেন। এরপর আরেক নারী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ডেবোরাহ রামিরেজ নামের ওই নারী অভিযোগ করেন, ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ডরমিটরি পার্টিতে কাভানা সম্মতি ছাড়াই তাঁর শরীর স্পর্শ ও যৌন হয়রানি করেন। একের পর এক আরও অভিযোগ এসেছে। জুলি নামের ওয়াশিংটন ডিসির এক নারী অভিযোগ করেছেন, ১৯৮২ সালে কাভানার উপস্থিতিতে এক পার্টিতে তিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। কলোরাডো সিনেটরের কাছে লেখা চিঠিতে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এক নারী জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে ১৯৯৮ সালে কাভানাকে এক নারীর সঙ্গে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করতে দেখেছেন।

সব কটি অভিযোগই অস্বীকার করেছেন কাভানা। তিনি অভিযোগ করেন, শুধু রাজনৈতিক কারণে তাঁর সুনাম নষ্ট করার জন্য ডেমোক্র্যাটরা এই ষড়যন্ত্র করছেন।

গত সপ্তাহে সিনেটের বিচারবিষয়ক কমিটিতে কাভানা ও ক্রিস্টিন দুজনই সাক্ষ্য দিয়েছেন। রিপাবলিকান জেফ ফ্লেকের দাবির মুখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাভানার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ এফবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।