যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগবিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুতই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। আগামী মা দিবসের আগেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। টিকাদান কর্মসূচির সফলতা, নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমে যাওয়াসহ নানা কারণে বিজ্ঞানীরা এখন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। যদিও ভাইরাসের নানা রূপান্তর জানান দিচ্ছে, করোনাভাইরাস শেষ হয়ে যায়নি।
কয়েক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে করোনায় সংক্রমিত রোগীর উপচে পড়া ভিড় ছিল। দেশের সর্বশেষ করোনা এপিসেন্টার হয়ে ওঠা এই রাজ্যেও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা এখন কমে এসেছে।
সম্প্রতি উইসকনসিন, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াসহ দেশের নানা অঙ্গরাজ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমেছে। বিষয়টি সাময়িক হলেও, গত বছরের ভাইরাস সংক্রমণের তুলনায় এটি একটি আশা জাগানিয়া খবর।
মহামারি বিষয়ে সাম্প্রতিক অগ্রগতির কারণে আশাবাদী হয়েছে নানা রাজ্যের কর্তৃপক্ষ। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিউইয়র্ক ও শিকাগো কর্তৃপক্ষ আগামী কয়েক সপ্তাহে নগরের সবকিছু পুরোদমে খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যস্ত। প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে নগরগুলোতে যেন আবার প্রাণ ফিরে আসছে।
মূলত টিকাদান কর্মসূচির সফলতার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এখন মহামারির এক নতুন আশাব্যঞ্জক অধ্যায়ে পদার্পণ করছে। করোনার সংক্রমণ অনেক কমছে—মানুষের মধ্যে এমন আশাবাদ কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন মানুষ মাস্ক ছাড়া চলাচল করছে, রাস্তাঘাটেও মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গভর্নর, মেয়র ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এক সময় নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে দুঃসংবাদ দিচ্ছিলেন, কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করছিলেন। তাঁরাও এখন নতুন আশাবাদে নিজেদের এলাকায় জারি করা বিধিনিষেধে দ্রুত ছাড় দিতে শুরু করেছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য সাবধানতা অবলম্বনের পক্ষে। আসছে সপ্তাহগুলোতে স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়ে অবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তবে আগের মতো এত মারাত্মক অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আশাবাদী তাঁরা।
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক ব্যাধি গবেষণা ও কর্মপন্থা কেন্দ্রের পরিচালক মাইকেল ওস্টারহোম বলেন, ‘আমরা স্পষ্টত মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছি। দেশব্যাপী মহামারির উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। দেশের নতুন সংক্রমণ এখন দৈনিক ৪৯ হাজার। গত অক্টোবরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এটি সর্বনিম্ন সংখ্যা। পুরো দেশে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা এখন ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। মৃত্যুর সংখ্যা গত জানুয়ারিতে গড়ে দৈনিক তিন হাজার ছিল।’
ইতিপূর্বে মহামারি সাময়িকভাবে স্থবির হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হয়। গত শীতে আবারও করোনা দেশের নানা এলাকায় প্রকট আকার ধারণ করে। তবে এবারের অগ্রগতির সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিন্নতা রয়েছে। তা হলো ১৫ কোটি বেশি মানুষের পূর্ণ ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।
দেশের প্রাপ্তবয়স্ক অর্ধেকের বেশি মানুষ অন্তত একটি টিকা দিয়েছেন। আর এটাই সম্ভবত মহামারির এই অগ্রগতি এবারে স্থায়ী হবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশান্বিত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিশ্বের নানা দেশের পরিস্থিতি ভালো নেই। টিকার দুষ্প্রাপ্যতায় ভুগছে অনেক দেশ। ভারতের পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। ব্রাজিলেও প্রতিদিন হাজারো মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে যদিও অবস্থার উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে, তবে সাবধানতা অবলম্বনের এখনো বিকল্প নেই বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। মানুষের টিকা নেওয়ার গতি শ্লথ হয়ে এসেছে। এসব কারণে অনেকে মনে করছেন, মহামারির ক্ষেত্রে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে সাবধানতার অভাবে তা ভেস্তে যেতে পারে।