২০২৪ সালে হোয়াইট হাউস হবে রিপাবলিকানদের: ট্রাম্প

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি: এএফপি

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ২০২৪ সালে হোয়াইট হাউস রিপাবলিকান পার্টির হবে। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো ক্লাবে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতা ও বড় তহবিল জোগানদাতাদের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজ-পরবর্তী বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ট্রাম্প।

মার-এ-লাগো ক্লাবের অদূরে ফোর সিজন রিসোর্টে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতা ও বড় তহবিল জোগানদাতাদের একটি সমাবেশ শুরু হয়েছে। সপ্তাহান্তজুড়ে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় নেতারা উপস্থিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দলের জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান রোনা ম্যাকড্যানিয়েল, কো-চেয়ারম্যান টমি হিকস প্রমুখ। সমাবেশে রিপাবলিকান পার্টির বড় অর্থ জোগানদাতারা যোগ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে থাকাকালে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ লোকজনও এই সমাবেশে আছেন। ফোর সিজন রিসোর্টের বলরুমে এই সম্মেলন হলেও গতকাল সন্ধ্যায় সেখান থেকে লোকজনকে নিয়ে যাওয়া হয় মার-এ-লাগো ক্লাবে। নানা নাটকীয়তা শেষে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকে পরিবার নিয়ে এখানেই বসবাস করছেন ট্রাম্প। তিনি সেখানে আমন্ত্রিত তহবিলদাতা ও রিপাবলিকান শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তাঁদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করেন। তাঁদের উদ্দেশে ট্রাম্প আগে থেকে প্রস্তুত করা একটি বক্তব্য দেন। তাঁর এই বক্তব্যের কপি আগেই সংগ্রহ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন করেছে।

ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘আমরা এখানে সমবেত হয়েছি রিপাবলিকান পার্টির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার জন্য। আমাদের অবশ্যই জয় নিশ্চিত করার জন্য প্রার্থী ঠিক করতে হবে।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আস্থার সঙ্গে দাঁড়িয়ে বলতে চাইছি, ২০২২ সালে আমরা প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব।’

২০২৪ সালে হোয়াইট হাউসে একজন রিপাবলিকানের প্রবেশ ঘটবে বলে ট্রাম্প আস্থার সঙ্গে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিবাসননীতির কড়া সমালোচনা করেন। ২০০৬ সালের পর সীমান্ত দিয়ে নথিপত্রহীন সবচেয়ে বেশি লোকের অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে দাবি করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, শুধু এই ইস্যুতেই রিপাবলিকান পার্টি প্রতিনিধি পরিষদ, সিনেট ও হোয়াইট হাউসের দখল নিয়ে নিতে পারবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কর্মসূচিগুলো আমেরিকার জনগণের কাছে খুবই অজনপ্রিয় বলে দাবি করেন ট্রাম্প। বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এখনো কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা না করায় তাঁর কড়া সমালোচনা করেন ট্রাম্প।

প্রথা অনুযায়ী শপথ গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা করেন। পদাধিকারবলে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমন যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করে থাকেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তাঁর অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচিগুলো এমন যৌথ অধিবেশনে তুলে ধরেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়ংকর হয়ে ওঠা করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা, টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে হোয়াইট হাউসে ব্যস্ততা চলছে। এই ব্যস্ততায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন অনেকটা দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। তিনি একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে তাঁর অগ্রাধিকারে থাকা কর্মসূচিগুলো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথ গ্রহণের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের সীমান্ত দিয়ে নথিপত্রহীন লোকজনের ব্যাপক প্রবাহ শুরু হয়েছে। অভিবাসীদের প্রতি মানবিক আচরণ করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

বর্তমান প্রশাসন সীমান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে দাবি করে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান পার্টি থেকেও এ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়েছে।

ক্ষমতা ত্যাগের পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সাধারণত রাজনৈতিক বিতর্ক এড়িয়ে চলেন। কিন্তু ট্রাম্প তার ব্যতিক্রম।

এক দফায় ক্ষমতায় থাকা ট্রাম্প গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে হেরে যান। কিন্তু এই পরাজয় এখন পর্যন্ত মেনে নেননি তিনি। নির্বাচনে কারচুপি করে তাঁকে হারানো হয়েছে বলে এখনো দাবি করছেন ট্রাম্প। তিনি নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অভিনন্দনও জানাননি।

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প আবারও প্রার্থী হবেন বলে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। রিপাবলিকান পার্টির সব তৎপরতা এখনো ট্রাম্পকে ঘিরেই চলছে। ক্ষমতা ছাড়ার দিন উড়োজাহাজের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘দেখা হবে শিগগিরই।’

নতুন প্রশাসনকে কোনো সময় না দিয়েই ক্ষমতা ছাড়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাইডেনের সমালোচনা শুরু করেন ট্রাম্প। পরে এই সমালোচনা আরও জোরদার করেন তিনি।