২০২৪ সালের বাছাইপর্বে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন ট্রাম্প

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: এএফপি

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ধারণাই করতে পারছেন না, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের বাছাইপর্বে তাঁকে কেউ হারাতে পারবেন।

রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম নিউজম্যাক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ কথা বলেছেন। সাংবাদিক মার্ক হ্যালপেরিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, নিজের কর্মদক্ষতা বিবেচনা করলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন না।

রিপাবলিকান পার্টির জন্য ভালো কাজ করেছেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতি ছিল তাঁর সময়ে। দেশের ভিত্তি এমনই মজবুত হয়েছে যে অন্য কোনো দেশ এমন করার চিন্তাও করতে পারবে না।

২৮ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে রক্ষণশীলদের সমাবেশে বক্তৃতা দেন ট্রাম্প। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার ৪০ দিনের মধ্যে ট্রাম্প নজিরবিহীনভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে এসে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কড়া সমালোচনা করেছেন।

ট্রাম্প শুধু ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টকেই সমালোচনা করে ক্ষান্ত হননি; তিনি রিপাবলিকান পার্টিতে তাঁর বিরোধিতা করেছেন—এমন লোকজনের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য দলীয় সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রিপাবলিকান পার্টিতে বাহ্যিকভাবে ট্রাম্পের বিরোধিতা এখনো খুব একটা জোরালো নয়। তবে দলের মধ্যপন্থী লোকজন ট্রাম্পের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উন্মুখ।

২৮ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে রক্ষণশীলদের সমাবেশে বক্তৃতা দেন ট্রাম্প
ছবি: এএফপি

প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবের সময় ১০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা তাঁর বিপক্ষে ভোট দেন। আর সিনেটে অভিশংসন আদালতে সাতজন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের দণ্ডের পক্ষে ভোট দেন। প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে এই ভোট প্রকাশ্য না হলে ট্রাম্পের বিপক্ষে আরও ভোট পড়ত বলে মনে করা হয়। ট্রাম্প নিজেই সে কথা জানেন। এ কারণেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় থেকে তিনি নিজ দলের লোকজনের ওপর চড়াও হয়ে আছেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও নেই। মাইক পেন্স বা শীর্ষ রিপাবলিকান সিনেটর মিচ ম্যাককনেল ফ্লোরিডায় রক্ষণশীল সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না।

প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে দুই দলের সদস্যদের মধ্যকার ব্যবধান খুব অল্প। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি সুবিধা পেতে পারে। তারা প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। এই সম্ভাবনাকে ট্রাম্প কাজে লাগাতে চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি। সঙ্গে রয়েছে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদের তাণ্ডব। প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের ওপর এখন জনগণের তেমন একটা আস্থা নেই। ফলে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বই এখন লোকজনের চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন এমন বৈরী বাস্তবতায় নিজের কর্মসূচিগুলো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কাজটা তাঁর জন্য সহজ হচ্ছে না। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও চলছে নানা টানাপোড়েন। অতিমারির মৃত্যুর পাহাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্বাভাবিক অবস্থা কবে নাগাদ ফেরে, তাও এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত।

পশ্চিমের অন্যান্য দেশের মতো গত এক দশকে আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে অভিবাসনবিরোধিতা চরম আকার ধারণ করেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধিতাকে উসকে দিয়ে শ্বেতাঙ্গদের সমর্থন পেয়েছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় এসেই অভিবাসন নিয়ে সংস্কারের কথা বলছেন।

ট্রাম্পের গত নির্বাচনী প্রচারে অভিবাসন নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য ছিল না। কিন্তু এখন তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেন–গৃহীত অভিবাসনসংক্রান্ত পদক্ষেপগুলোর সমালোচনা করছেন। অভিবাসনবিরোধী শ্বেতাঙ্গদের উসকে দেওয়ার জন্যই তিনি এ কাজ করছেন বলে অনুমান করা হয়।

ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো ঘোষণা দেননি
ছবি: এএফপি

ফ্লোরিডায় রক্ষণশীল সম্মেলনে বক্তৃতার আগে পাওয়া অনানুষ্ঠানিক জরিপের (স্ট্রো পোল) ফলাফলে দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ লোক ২০২৪ সালে ট্রাম্পের প্রার্থিতাকে সমর্থন জানাবেন। তাঁর পরে অবস্থান করছেন ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসেন্টিস। ২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাঁর পক্ষে ২১ শতাংশ লোকজনের সমর্থন রয়েছে।

ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো ঘোষণা দেননি। ফ্লোরিডায় রক্ষণশীলদের সম্মেলনে তিনি প্রার্থিতার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

নিউজম্যাক্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আবার বলেছেন, প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। আর যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন, তাহলে ট্রাম্পের ধারণা, রিপাবলিকান পার্টিতে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কেউ নেই।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন ঘোষণা বহু রিপাবলিকানদের কাছে দাম্ভিক উক্তি মনে হলেও তাঁরা এখনই সাবেক প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) বিরোধিতায় নামছেন না। আগামী দিনগুলোয় ট্রাম্প কী ধরনের আইনি সমস্যায় পড়েন, রিপাবলিকান পার্টির মূল কাঠামোর নেতা-কর্মীদের বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া কেমন হয়—এসব দেখা পর্যন্ত অনেকেই অপেক্ষা করছেন।

শুধু উগ্রবাদিতা উসকে দিয়ে ট্রাম্প সহজে এগিয়ে যেতে পারবেন—এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই বলে অভিমত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।