২০ বছরে জিমেইল

জিমেইলছবি: রয়টার্স

২০ বছর আগে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চালু হয়েছিল গুগলের মেইল সেবা জিমেইল। ১ এপ্রিল চালু হওয়ায় সবাই ভেবেছিল এটি হয়তো ‘এপ্রিল ফুল’ হিসেবে স্রেফ মজা করার উদ্দেশ্যে গুগল এটি চালু করেছে। কিন্তু গত দুই দশকে এটিই হয়ে উঠেছে মেইল সেবার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। এটি যখন চালু হয়, তখন মেইলের ইনবক্সে ১৫ মেগাবাইট তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার সুবিধা চালু ছিল। কিন্তু গুগল তখন ১ গিগাবাইট ইনবক্স সেবা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় দ্রুত তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ পথচলায় ইয়াহু মেইলের মতো একসময়ের জনপ্রিয় মেইল সেবাকে পেছনে ফেলে এসেছে গুগলের এ সেবাটি।

চালু হওয়ার তিন বছর পর ২০০৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় জিমেইল। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে জিমেইলের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ প্রকাশিত হয়। শুরুর দিকে জিমেইলে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে আগে জিমেইল ব্যবহার করছেন এমন ব্যবহারকারীর কাছ থেকে বিশেষ আমন্ত্রণের প্রয়োজন হতো।

বর্তমানে প্রায় ১৮০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছেন জিমেইলের। এক দশক আগে এর ব্যবহারকারী ছিল ৪৫ কোটি। অর্থাৎ গত এক দশকে দ্রুত বেড়েছে জিমেইলের ব্যবহার।

শুরুতেই ব্যবহারকারীদের জন্য বিনা মূল্যে এক গিগাবাইট জায়গা ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে চমক তৈরি করে জিমেইল কর্তৃপক্ষ। পরে এ জায়গা দুই ও চার গিগাবাইট করা হয়। পরে বিনা মূল্যে ১৫ গিগাবাইট জায়গা ব্যবহারের সুযোগ দিতে শুরু করে জিমেইল। গুগলের অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে এ জায়গা নির্দিষ্ট থাকলেও বর্তমানে অন্যান্য সেবাসহ যেকোনো সেবাতেই ইচ্ছেমতো ১৫ গিগাবাইট জায়গা ব্যবহার করা যায়। পরে যাঁদের বেশি জায়গা প্রয়োজন, তাঁরা গুগল থেকে অতিরক্ত জায়গা কিনে নিতে পারেন।

গুগল তাদের জিমেইল সেবাকে ক্রমে উন্নতি করেছে। এতে যুক্ত হয়েছে উন্নত সার্চ সেবা। এ ছাড়া মেইল ব্যবস্থাপনাতেও এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তবে বর্তমান সময়ে বার্তা আদান–প্রদানকারী অ্যাপ যেমন স্ল্যাক ও হোয়াটসঅ্যাপ ক্রমেই এর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে।

গুগলের জিমেইল সেবার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলিয়া ব্রাউন বলেন, ‘জিমেইল আমাদের কাছে বিশেষ যে মূল্য যুক্ত করে তা বিবেচনা করতে গেলে শুরুতেই দ্রুত এর সার্চ সুবিধার কথা বলতে হয়। আগে মানুষ মেইল ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিরক্ত ছিল। সবখানে স্প্যাম মেইলে ঠাসা ছিল। ইনবক্সে জায়গা ছিল কম। নতুন মেইল পেতে পুরোনো মেইল মুছে দিতে হতো। কিন্তু জিমেইল সে সমস্যার সমাধান করেছে।

কিন্তু এখন জিমেইলের সমস্যা অন্যটি। অনেক মানুষের কাছে মেইল আসে বেশি। এ কারণে তাকে মেইল খুঁজে বের করতে হয়। এখান থেকেই সার্চ সুবিধার বিষয়টি সামনে আসে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুগলে কিছু পরিবর্তন এসেছে। ২০০৮ সালে গুগল থিমস আসে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। ওই বছরেই আসে অ্যান্ড্রয়েডচালিত স্মার্টফোনের জন্য জিমেইল অ্যাপ৷ এ ছাড়া গুরুত্ব ই–মেইল ঠিক করা, দ্রুত উত্তর দেওয়া বা নিউজলেটার আনসাবসক্রাইবের মতো নানা ফিচার এতে যুক্ত হয়। তবে নানা পরিবর্তন সত্ত্বেও জিমেইল আগের মতোই মনে হয়। কারণ প্রথম এক দশকে গুগল তাদের মেইলে খুব বেশি পরিবর্তন আনেনি। শুরুতে গুগল তাদের ইচ্ছেমতো জিমেইলে পরীক্ষা–নীরিক্ষা করত। কিন্তু পরে গুগল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এ সেবাটি নিয়ে খুব বেশি নাড়াচাড়া করেনি।

জেমেইলের পণ্য ব্যবস্থাপক ও জ্যেষ্ঠ পরিচালক মারিয়া ফার্নান্দেজ বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তৈরির প্রয়োজনীয়তাকেই আমরা গুরুত্বসহকারে নিয়ে থাকি। জিমেইলের মতো পণ্যের সঙ্গে নির্ভরযোগ্যতার পাশাপাশি বড় প্রত্যাশা থাকে। নতুন ফিচার পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়, যাতে পণ্যের ওপর প্রভাব না পড়ে। এ কারণেই গুগল এত দিন মেইলে কোনো বড় পরিবর্তন আনেনি। অনলাইনে যোগাযোগ, গ্রুপ চ্যাট, করপোরেট বার্তা আদান–প্রদানের মতো প্রোগ্রাম চালু হলেও তা জিমেইলের বাইরে করা হয়েছে। ই–মেইল এখনো তার জায়গায় রয়েছে। এটাই এখনো যোগাযোগের কেন্দ্রে।

জিমেইলের বিরুদ্ধ এখন বড় অভিযোগ হচ্ছে এটি দৈনন্দিন যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেকটাই ধীরগতির হয়ে পড়েছে। তবে এটি এখনো ‘ইন্টারনেটের পাসপোর্ট’ হিসেবেই গণ্য করা হয়। একটি ই–মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে অনলাইনের নানা কাজ সারা যায়। এটা এখন একজনের অনলাইন পরিচয়। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেদের চোখে, জিমেইল বর্তমানে অনলাইনে কোনো কিছু করার বাস্তবিক প্রয়োজনীয় ঠিকানা হয়ে উঠেছে। এমন মনে হয়, অনেক দিন ধরেই জিমেইল ইন্টারনেটের অংশ হয়ে রয়েছে এবং অনেক দিন তার আবেদন ধরে রাখবে।

দ্য ভার্জ অবলম্বনে মো. মিন্টু হোসেন