দাবদাহে গোটা বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিরূপ আবহাওয়ার কবলে পড়ছে পৃথিবী। দাবদাহের জেরে তাপমাত্রার পারদ ভাঙছে আগের সব রেকর্ড। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। তাঁরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন, দাবদাহের কারণে মহাসাগরগুলোও ‘নীরব ক্ষতির’ মুখে পড়ছে। চোখের আড়ালেই এটা ঘটছে।
চলমান তাপপ্রবাহে নাকাল ইউরোপের জনজীবন। একই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও চীনে। চলতি মাসের শুরুতে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ দিন রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি বছর সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসবের জেরে শুধু মানুষই নয়, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পৃথিবীর স্থল ও জলভাগও হুমকির মুখে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিডসের অধ্যাপক জন মারশাম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। খাবারের জোগান ও দামের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। এই প্রভাব হয়তো আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি না। তবে সামনের দশকগুলোয় এটা আমার ভয়ের কারণগুলোর একটি হতে পারে।’
এর আগেও দাবদাহের প্রভাব দেখেছে বিশ্ব। ২০১৮ সালে ইউরোপে তাপপ্রবাহের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মধ্য ও উত্তর ইউরোপে ফসলের উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। আর ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে চরম ক্ষতির মুখে পড়ে ফল ও সবজির উৎপাদন।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০৪০ সাল নাগাদ এমন তাপপ্রবাহের সংখ্যা ১২ গুণ বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরেও তাপমাত্রা বাড়ছে। এতে সাগরে থাকা মানুষের খাদ্যের উৎসগুলোও হুমকির মুখে পড়েছে। বলা চলে কানাডার প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলজুড়ে ২০২১ সালের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা। এর জেরে সেবার সাগরের প্রায় ১০০ কোটি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছিল।
এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের অধ্যাপক ড্যানিয়েলা স্মিড বলেন, ‘মানুষ সাধারণত সাগরে তাপপ্রবাহের বিষয়ে অতটা চিন্তা করে না। তবে চোখের আড়ালে মহাসাগরগুলো নীরবে মারা যাচ্ছে, এটাই আমাকে মূলত শঙ্কিত করে।’