চির-অধূমপায়ী মানুষদের ফুসফুসের ক্যানসার বাড়ছে, কারণটা কী

আইএআরসি বলেছে, কখনো ধূমপান করেননি, এমন মানুষদের যাঁরা ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ৭০ শতাংশই অ্যাডেনোকার্সিনোমাতে আক্রান্তছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

কখনোই ধূমপান না করা মানুষদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার ক্রমাগত বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে বায়ুদূষণকে একটি উল্লেখজনক কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসারবিষয়ক গবেষণা সংস্থা আইএআরসি এসব তথ্য জানিয়েছে।

আইএআরসির তথ্য অনুসারে, চির-অধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যানসার এখন বিশ্বব্যাপী ক্যানসারে মৃত্যুর পঞ্চম সর্বোচ্চ কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

আইএআরসি বলছে, কখনো ধূমপান না করা ব্যক্তিদের ফুসফুসের ক্যানসার মূলত অ্যাডেনোকার্সিনোমা (ফুসফুস ক্যানসারের একটি ধরন) হিসেবে দেখা দিচ্ছে। ফুসফুস ক্যানসারের চারটি উপধরনের মধ্যে অ্যাডেনোকার্সিনোমা প্রধান।

ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত আইএআরসির এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালে প্রায় ২ লাখ মানুষের অ্যাডেনোকার্সিনোমার সঙ্গে বায়ুদূষণের সংস্পর্শে আসার সম্পৃক্ততা ছিল।

গবেষণা অনুযায়ী, অ্যাডেনোকার্সিনোমার সঙ্গে বায়ুদূষণের সম্পৃক্ততা বেশি পাওয়া গেছে পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে চীনে।

সমীক্ষাটির শীর্ষ লেখক আইএআরসির ক্যানসারবিষয়ক নজরদারি শাখার প্রধান ফ্রেডি ব্রে গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, গবেষণায় পাওয়া ফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকির ধরন বদলে যাওয়ার বিষয়টিকে জরুরি ভিত্তিতে নজরে আনা প্রয়োজন। ধূমপান যদি ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ না হয়ে থাকে, তবে বায়ুদূষণের মতো অন্য সম্ভাব্য কারণগুলো শনাক্ত করতে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ২০২২ সালে বিশ্বে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে।

ফুসফুস ক্যানসারের চারটি প্রধান উপধরন হলো অ্যাডেনোকার্সিনোমা, স্কুয়ামাওয়াস সেল কার্সিনোমা, স্মল সেল কার্সিনোমা ও লার্জ সেল কার্সিনোমা। আইএআরসি বলছে, অ্যাডেনোকার্সিনোমা নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রধান উপধরন হিসেবে আসছে।

২০২২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া পুরুষদের ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং নারীদের ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশ অ্যাডেনোকার্সিনোমা উপধরনে ভুগছিলেন। ২০২০ সালে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৩৯ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৫৭ দশমিক ১ শতাংশ।

আইএআরসি বলেছে, কখনো ধূমপান করেননি, এমন মানুষদের যাঁরা ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ৭০ শতাংশই অ্যাডেনোকার্সিনোমায় আক্রান্ত।

গত ৪০ বছরে বেশির ভাগ দেশে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত পুরুষদের হার কমলেও নারীদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ক্রমাগত বাড়তে দেখা গেছে।

এখনো ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই পুরুষ (২০২২ সালের হিসাব অনুসারে প্রায় ১৬ লাখ)। তবে নারী ও পুরুষদের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হারের মধ্যে ব্যবধান কমে আসছে। ২০২২ সালে প্রায় ৯ লাখ নারীর ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে।

২০২৩ সালে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা পুরুষের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। তখন নারীদের স্তন ক্যানসারের মতো করেই ফুসফুস ক্যানসারের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নারীদের যেমন স্তনে চাকা বোধ হলেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে, তেমনি ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণগুলো নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

বিশ্বে কখনোই ধূমপান করেননি, এমন মানুষদের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার শতকরা হার কত, তা জানা যায়নি। শুধু এই প্রবণতা যে বাড়ছে, সে আলামত পাওয়া গেছে। ধূমপান ছাড়াও আর কী কারণে ফুসফুসের ক্যানসার হয়, তা জানতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।