শরীরের উত্তাপ থেকে জ্বালানি উৎপাদন
ব্যক্তিগত স্তরে জ্বালানি সাশ্রয়ের ভাবনা অনেকের জন্যই অস্বস্তির বিষয়। স্কটল্যান্ডের এক ক্লাব গ্রাহকদের পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখার অভিনব সুযোগ করে দিচ্ছে। ক্লাবের জ্বালানির ব্যবহারও কমে চলেছে।
গ্লাসগো শহরের ‘এসডব্লিউজিথ্রি’ ক্লাব পার্টির অতিথিদের শরীরের উত্তাপ সংরক্ষণ করে পুনর্ব্যবহার করে। ‘বডিহিট’ নামের প্রণালির আওতায় ডান্স ফ্লোরকে ছোটখাটো জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়। প্রত্যেক মানুষের অবদান দেড় শ থেকে সাড়ে চার শ ওয়াট।
২০২২ সাল থেকে ক্লাবটি সারা দিন ধরে সেই জ্বালানি ব্যবহার করে। জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির মাত্রা শূন্যে নিয়ে আসাই ক্লাবের লক্ষ্যমাত্রা। ক্লাবের অপারেশনস ম্যানেজার বব জাভাহেরি বলেন, ‘আমরা উত্তাপের ফলে সৃষ্টি হওয়া শক্তি ধারণ করে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। সেই শক্তি সংরক্ষণ করে সেটি দিয়ে সরাসরি বা পরে কোনো সময়ে হিটিং বা এয়ারকন্ডিশনিং করার চেষ্টা করছি। এভাবে নিজেদের এনার্জি ফুটপ্রিন্ট এবং বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে চাই। সেই সঙ্গে গ্যাসের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে চাই।’
এই প্রক্রিয়ায় সিলিংয়ে বসানো বিশেষ ফ্যান তিনটি ডান্সফ্লোর থেকে উষ্ণ বাতাস শুষে নেয়। তারপর হিট পাম্প সেই শক্তি একধরনের তরলের মাধ্যমে উঠানে পাঠিয়ে দেয়। দুটি ১০০ মিটার গভীর গর্তে সেই তরল সংরক্ষণ করা হয় এবং পরে সেটির উত্তাপ ব্যবহার করা হয়।
এমন উদ্ভাবন সত্যি অনবদ্য। জ্বালানি ক্ষেত্রের প্রকৌশলী হিসেবে ডেভিড টাউন্সএন্ড তিন বছর ধরে সেটি তৈরি করেছেন। টাউনরক এনার্জি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি এই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এক মিনিট বা তারও কম সময়ে সিলিংয়ের বাক্স থেকে উত্তাপ সরাসরি গর্তে চলে যায়। সেই উত্তাপ প্রয়োজনমতো সময়ে ধারণ করা যায়। যেমন রাতে উত্তাপ ভরে দিনের বেলায় সেটা বের করতে পারি। অথবা গ্রীষ্মে আমরা অনেক পরিমাণ উত্তাপ সঞ্চয় করে শীতে তা ব্যবহার করতে পারি। অর্থাৎ সংরক্ষণের সময়কাল প্রয়োজন অনুযায়ী মানিয়ে নিতে পারি।’
কিন্তু সেই প্রণালি কত পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড কমাতে পারে এবং আদৌ কতটা টেকসই। এমন প্রশ্নের উত্তরে ডেভিড টাউন্সএন্ড বলেন, ‘হিট পাম্প সত্যি খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। তা ছাড়া সামান্য পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে অনেক হিটিং বা কুলিং করা সম্ভব। অর্থাৎ হিটিং সিস্টেম থেকে গ্যাস বয়লার সরিয়ে আমরা বছরে ৭০ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সাশ্রয় করছি। বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে আসে। কিন্তু এই ক্লাব ১০০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুতের ট্যারিফ বেছে নিয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ শুধু পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকেই আসছে। স্কটল্যান্ডে এমন বৃষ্টির দিনে সেই বিদ্যুৎ বায়ুশক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত হয়।’
প্রায় সাড়ে সাত লাখ ডলার মূল্যের ‘বডিহিট’ প্রণালি বসানোর খরচ মোটেই কম নয়। তা সত্ত্বেও অন্যান্য ক্লাবও সেই পথে অগ্রসর হতে চাইছে। বব জাভাহেরি মনে করেন, ‘বর্তমানে সবার কাছে টেকসই প্রক্রিয়া সত্যি গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পক্ষেত্রে সাসটেইনেবিলিটির পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে টিকে থাকার উপায় ভাবতে হবে। আমাদের জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে, সেই দিশায় আরও এগিয়ে যেতে হবে। “বডি হিটের” সুন্দর বিষয় হলো, গ্রাহকদের সেই কাজে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এবং তাদের নতুন করে কিছুই করতে হচ্ছে না। তারা ক্লাবে এসে নেচে আনন্দ পেলেই চলবে। তাঁরা সক্রিয়ভাবে এমন পরিবেশে জ্বালানির ব্যবহার কমাতে অবদান রাখছেন।’
পরিবেশ সংরক্ষণ যে বেশ আমোদ দিতে পারে, স্কটল্যান্ডের এই ক্লাব পথপ্রদর্শক হিসেবে তা দেখিয়ে দিচ্ছে। যত নৃত্য চলবে, পৃথিবীর ততই উপকার হবে।