১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর ভারত এক অন্ধকার অধ্যায়ে প্রবেশ করে। এ সময়ে নাগরিক অধিকার স্থগিত করা হয় এবং বিরোধী রাজনীতিকদের একে একে গ্রেপ্তার করা হয়।
সে সময় দৃশ্যমান দমন-পীড়নের আড়ালে কংগ্রেস সরকার নীরবে নতুনভাবে রাষ্ট্রচিন্তা শুরু করেছিল। ভারতকে তারা এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে নতুন করে কল্পনা করে, যেখানে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য ও জবাবদিহির ওপর দাঁড়িয়ে নয়, বরং কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণনির্ভর একটি কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার ওপর ভর করে গঠিত হবে। ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন তাঁর নতুন বইয়ে সেই রূপান্তরের আড়ালের গল্প তুলে ধরেছেন।
‘ইন্দিরা গান্ধী অ্যান্ড দ্য ইয়ার্স দ্যাট ট্রান্সফর্মড ইন্ডিয়া’ বইয়ে অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন বিশ্লেষণ করেছেন, জরুরি অবস্থার সময় কীভাবে ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ আমলা ও দলীয় অনুগামীরা একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত কাঠামোর পক্ষে চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেন। এই কাঠামোয় নির্বাহী ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকবে, ‘প্রতিবন্ধক’ বিচারব্যবস্থাকে পাশ কাটানো যাবে এবং সংসদ কেবল আনুগত্যের প্রতীকী একটি মঞ্চে রূপ নেবে।
বাস্তবে শার্ল দ্য গলের ফ্রান্স থেকে আংশিক অনুপ্রাণিত এই রাষ্ট্রপতিশাসিত কাঠামোর প্রস্তাব ছিল—সংসদীয় গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে শক্তিশালী রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে অগ্রসর হওয়ার স্পষ্ট প্রয়াস। যদিও শেষ পর্যন্ত এটা পূর্ণ বাস্তবতায় রূপ নেয়নি।
যদিও তখনো রাষ্ট্রপতি শাসন শুরু হয়নি, তবু এ শাসনব্যবস্থার মৌলিক বৈশিষ্ট্যের ছাপ ঠিকই দেখা যাচ্ছিল। অর্থাৎ একটি শক্তিশালী সরকার, দুর্বল বিচারব্যবস্থা এবং নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের ঘাটতি। দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকা এ নিয়ে সতর্ক করে লিখেছিল, ‘মাত্র এক ধাক্কায় এই সংশোধনী সাংবিধানিক ভারসাম্যকে সংসদের দিকে ভারী করে দেয়।’
অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন লিখেছেন, এ সবকিছুর শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে। তখন ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও অভিজ্ঞ কূটনীতিক বি কে নেহরু এক চিঠিতে জরুরি অবস্থাকে ‘জনসমর্থনভিত্তিক সাহস ও শক্তির এক অনন্য প্রদর্শন’ বলে উল্লেখ করেন। সেই চিঠিতে তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে পরামর্শ দেন, এ সুযোগ যেন কাজে লাগানো হয়।
নেহরু লিখেছিলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্র আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। এ ব্যবস্থায় সরকার সব সময় এমন একটি নির্বাচিত সংসদের ওপর নির্ভরশীল, যাঁরা জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর সিদ্ধান্তকে থামিয়ে দেয়।
অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন লিখেছেন, নেহরু মনে করতেন, ভারতের এমন এক রাষ্ট্রপতির প্রয়োজন, যিনি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন এবং সংসদীয় নির্ভরতা থেকে মুক্ত থেকে জাতীয় স্বার্থে ‘কঠিন, অপ্রিয় ও অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত’ নিতে পারবেন।
বি কে নেহরু যে রূপরেখার কথা বলেছিলেন, তা ছিল ফ্রান্সে শার্ল দ্য গলের শাসনব্যবস্থার মতো, যেখানে রাষ্ট্রপতি সব ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকেন। নেহরুর কল্পনায় ছিল সাত বছর মেয়াদি রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার, সংসদ ও রাজ্য বিধানসভায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, সীমিত ক্ষমতার বিচারব্যবস্থা এবং কঠোর মানহানি আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম। এমনকি তিনি মৌলিক অধিকার, যেমন সমতার অধিকার কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগও বাতিল করার প্রস্তাব দেন।
অধ্যাপক রাঘবনের মতে, ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার দিকে ঝোঁক দেখা যেত। বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের পর রাজনীতিতে অস্থিরতা ও দুর্বল জোটগুলোর কারণে এই প্রবণতা বেড়ে যায়। তখনই রব ওঠে, ভারতের জন্য রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বেশি উপযুক্ত হতে পারে। তবে যখন এই ধারণাগুলো রাজনৈতিক চিন্তায় পরিণত হয়, তখন বিষয়টি আরও চরম আকার ধারণ করে।
এই কূটনীতিক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, ‘আপনার কাছে যখন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, তখন সংবিধানে বড় পরিবর্তন করুন।’ এই ধারণা ইন্দিরা গান্ধীর সচিব পি এন ধর খুব উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেন। পরে ইন্দিরা গান্ধী কূটনীতিক নেহরুকে দলের নেতাদের সঙ্গে এসব ধারণা নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দেন। তবে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, যেন কেউ ভাবতে না পারে যে এসব তাঁর অনুমোদিত।
অধ্যাপক রাঘবন লিখেছেন, এসব প্রস্তাব সিনিয়র কংগ্রেস নেতা জগজীবন রাম ও স্মরণ সিংহ আগ্রহের সঙ্গে নিয়েছিলেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বলেছেন, ‘এসব নির্বাচনের বাজে আলাপ বাদ দিন। আমাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলব, আমাদের বোন ইন্দিরা গান্ধীকে আজীবন রাষ্ট্রপতি বানিয়ে দিন, আর অন্যকিছু করার দরকার নেই।’
অন্যদিকে কংগ্রেসের বাইরে থাকা দুই মুখ্যমন্ত্রীর একজন তামিলনাড়ুর এম করুণানিধি এ প্রস্তাবে তেমন আগ্রহ দেখাননি।
অধ্যাপক রাঘবন লিখেছেন, কূটনীতিক নেহরু যখন ইন্দিরা গান্ধীকে এসব বিষয় জানালেন, তখন তিনি কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি বরং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের নির্দেশ দেন, এসব প্রস্তাব যেন আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়।
‘জরুরি অবস্থার সময় তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল স্বল্পমেয়াদি; নিজের পদকে যেকোনো সংকট থেকে সুরক্ষিত রাখা। ৪২তম সংশোধনী এমনভাবে রচনা করা হয়েছিল, যাতে বিচার বিভাগ পর্যন্ত তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে।’অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন
এরপর গোপনে একটি নথি তৈরি করা হয়, যার শিরোনাম ছিল—‘নতুন দৃষ্টিতে আমাদের সংবিধান: কিছু প্রস্তাব’। নথিটি অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে কিছু নির্ভরযোগ্য উপদেষ্টার মধ্যে বিতরণ করা হয়। এতে এমন এক রাষ্ট্রপতির কথা বলা হয়, যাঁর হাতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির চেয়ে বেশি ক্ষমতা, যেমন বিচার বিভাগের নিয়োগ এবং আইন প্রণয়নের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে গঠিত হবে একটি নতুন ‘সুপিরিয়র কাউন্সিল অব জুডিশিয়ারি’, যার কাজ হবে আইন ও সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদান। ফলে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে।
ইন্দিরা গান্ধী নথিটি তাঁর সচিব পি এন ধরের কাছে পাঠান। ধর বুঝতে পারেন, এটি সংবিধানকে একধরনের অস্পষ্ট কিন্তু কর্তৃত্ববাদী পথে ঠেলে দিচ্ছে। এরপর কংগ্রেস সভাপতি ডি কে বরুয়া ১৯৭৫ সালের দলীয় সম্মেলনে প্রকাশ্যে সংবিধান ‘পুনর্বিবেচনার’ ডাক দিয়ে এমন প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া যাচাইয়ের চেষ্টা করেন।
ভাবনাটি কখনোই কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবে রূপ নেয়নি। কিন্তু ১৯৭৬ সালে পাস হওয়া ৪২তম সংবিধান সংশোধনীতে তার স্পষ্ট ছায়া পড়েছিল। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক নজরদারির ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে আরও বেশি কর্তৃত্ব তুলে দেওয়া হয়।
সংশোধনীর ফলে কোনো আইন বাতিল করতে হলে সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ বা সাতজন বিচারকের বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হতো। এর লক্ষ্য ছিল সংবিধানের ‘মূল কাঠামো তত্ত্ব’কে দুর্বল করা, যা সংসদের ক্ষমতার ওপর সাংবিধানিক সীমা আরোপ করেছিল।
এ সংশোধনীর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোতে সশস্ত্র বাহিনী পাঠানো, নির্দিষ্ট অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা এবং রাষ্ট্রপতির শাসনের মেয়াদ ছয় মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করার ক্ষমতা পায়। এমনকি নির্বাচন নিয়ে কোনো বিরোধ আদালতে তোলা যাবে না, এ ব্যবস্থাও চালু হয়।
তখনো রাষ্ট্রপতি শাসন শুরু হয়নি, তবু এ শাসনব্যবস্থার মৌলিক বৈশিষ্ট্যের ছাপ ঠিকই দেখা যাচ্ছিল। অর্থাৎ একটি শক্তিশালী সরকার, দুর্বল বিচারব্যবস্থা এবং নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের ঘাটতি। দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকা এ নিয়ে সতর্ক করে লিখেছিল, ‘মাত্র এক ধাক্কায় এই সংশোধনী সাংবিধানিক ভারসাম্যকে সংসদের পক্ষে নিয়ে গেছে।’
এ সময়ের মধ্যে গান্ধীর অনুগামীরা আরও চরম অবস্থান নেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বানসি লাল ইন্দিরা গান্ধীকে আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকার আহ্বান জানান। আর ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশের কংগ্রেস নেতারা একজোট হয়ে একটি নতুন গণপরিষদের আহ্বান জানান।
অধ্যাপক রাঘবন লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এসব কথাবার্তায় বেশ হতচকিত হয়েছিলেন। তিনি ঠিক করলেন, এসব প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে সংসদে সংশোধনী বিল দ্রুত পাস করাতে হবে।’
১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিলটি সংসদের উভয় কক্ষে পাস হয়ে ১৩টি রাজ্যের বিধানসভায় অনুমোদিত হয় এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হয়।
১৯৭৭ সালে গান্ধীর আকস্মিক পরাজয়ের পর অল্প দিনের জন্য টিকে থাকা জনতা পার্টি (গান্ধীবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত) দ্রুত সেই ক্ষতি মেরামত করে। তাঁরা ৪৪ ও ৪৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে ৪২তম সংশোধনীর স্বৈরতান্ত্রিক অনেক বিধান বাতিল করে গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে।
জনতা পার্টি সরকারের ভেতরে চলা অন্তর্দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব সংকটের কারণে পতনের পর ১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে ইন্দিরা গান্ধী আবার ক্ষমতায় ফেরেন। আশ্চর্যের বিষয়, দুই বছর পর সেই দলের কিছু শীর্ষ নেতা আবার রাষ্ট্রপতি শাসনের ধারণা উত্থাপন করেন।
১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপতি সঞ্জীবা রেড্ডির মেয়াদ শেষের সময় ইন্দিরা গান্ধী গুরুত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে গিয়ে রাষ্ট্রপতির পদ নেওয়ার কথা বিবেচনা করেছিলেন।
ইন্দিরার মুখ্যসচিব পরে জানিয়েছিলেন, তিনি এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ‘খুবই সিরিয়াস’ ছিলেন। কংগ্রেস পার্টির ভার বহন করতে করতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি দলকে নতুন শক্তি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির পদটিকে ‘একধরনের শক থেরাপি’ হিসেবে দেখতেন।
অবশেষে ইন্দিরা গান্ধী পিছিয়ে যান। নিজের পরিবর্তে তিনি তাঁর বিশ্বস্ত গৃহমন্ত্রী জৈল সিংকে রাষ্ট্রপতির পদে উন্নীত করেন।
রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে গুরুতর আলোচনা চললেও ভারত কখনো সেই পথে পা বাড়ায়নি। অত্যন্ত বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ইন্দিরা গান্ধী কি তখন নিজেকে থামিয়েছিলেন, নাকি দেশের মানুষের মনে এমন বড় পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ছিল না, নাকি ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থা বেশ মজবুত ছিল?
অধ্যাপক রাঘবনের মতে, ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার দিকে ঝোঁক দেখা যেত। বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের পর রাজনীতিতে অস্থিরতা ও দুর্বল জোটগুলোর কারণে এই প্রবণতা বেড়ে যায়। তখনই রব ওঠে, ভারতের জন্য রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বেশি উপযুক্ত হতে পারে। তবে যখন এই ধারণাগুলো রাজনৈতিক চিন্তায় পরিণত হয়, তখন বিষয়টি আরও চরম আকার ধারণ করে।
অধ্যাপক রাঘবন বিবিসিকে বলেন, ‘গান্ধীর লক্ষ্য ছিল এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা তৎক্ষণাৎ তাঁর ক্ষমতাকে আরও সুদৃঢ় করবে। তাঁর কোনো বড় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল না। ইন্দিরার শাসনের বেশির ভাগ স্থায়ী প্রভাব সম্ভবত তাঁর ইচ্ছার বাইরে ছিল।’
রাঘবন বলেন, ‘জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরার মূল লক্ষ্য ছিল স্বল্পমেয়াদি—নিজের পদকে যেকোনো সংকট থেকে সুরক্ষিত রাখা। ৪২তম সংশোধনী এমনভাবে রচনা করা হয়েছিল, যাতে বিচার বিভাগ পর্যন্ত তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে।’
কংগ্রেসের ভেতরে রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থার প্রতি আকর্ষণ কোনো দিনই পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। এমনকি ১৯৮৪ সালের এপ্রিলে যখন দলটি ক্ষমতায় ছিল, তখনো সিনিয়র মন্ত্রী বসন্ত সাঠে রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থার পক্ষে কথা বলে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্কের সূচনা করেন।
কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন। আর তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই সেই আলোচনা আচমকা থেমে যায়। এভাবে ভারত সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে অটল থেকেছিল।