ডিজিটাল দুনিয়া কাঁপানো ১০ ইউটিউবার

ইউটিউব এখন আর শুধু একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সংস্কৃতির অংশ, যেখানে কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতারা বিনোদন, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও মানবিক গল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি দর্শকের হৃদয় জয় করছেন। সেই সঙ্গে ইউটিউবাররা কনটেন্ট তৈরি করে আয় করছেন বিপুল অর্থ। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ ইউটিউবারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরছি, যাঁরা নিজেদের প্রতিভা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অনন্য এক জগৎ গড়ে তুলেছেন।

মিস্টারবিস্ট

মিস্টারবিস্টের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৩৯ কোটি ৯০ লাখের বেশি
ছবি: অ্যাটমিস্টারবিস্ট এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে

মিস্টারবিস্টের প্রকৃত নাম জিমি ডোনাল্ডসন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউটিউবারদের একজন। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউটিউবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৩৯ কোটি ৯০ লাখের বেশি। মজার, কঠিন, অদ্ভুত বা অবিশ্বাস্য বিষয়, মানবিক সাহায্য ও সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে তিনি কাজ করেন। প্রতিটি ভিডিওর জন্য তিনি বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেন। তাঁর দানশীলতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। অন্ধদের চোখের চিকিৎসা, দরিদ্রদের খাদ্য বিতরণ কিংবা গাছ লাগানোর মতো প্রকল্পে ২৭ বছর বয়সী এ ইউটিউবার নেতৃত্ব দিয়েছেন। মাসে আনুমানিক ৩০ থেকে ৬০ লাখ ডলার আয় করেন তিনি। তাঁর ভিডিওতে বিনোদনের খোরাক জোগানোর পাশাপাশি ইতিবাচক প্রভাব তৈরির চেষ্টাও রয়েছে।

পিউডাইপাই

পিউডাইপাইয়ের প্রকৃত নাম ফেলিক্স কজেলবার্গ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পিউডাইপাইয়ের প্রকৃত নাম ফেলিক্স কজেলবার্গ। সুইডেনের এই ইউটিউবার ২০১০ সালে তাঁর চ্যানেল শুরু করেন। তিনি মূলত গেমিং, মিম রিভিউ ও কমেডি কনটেন্ট তৈরি করে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। মিম রিভিউ বলতে বোঝায় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া মজার ছবি, ভিডিও, লেখা বা গ্রাফিকস নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো, বিশ্লেষণ বা মন্তব্য করাকে। পিউডাইপাইয়ের সাবস্ক্রাইবার ১১ কোটি ১০ লাখের বেশি। ইউটিউবের ইতিহাসে তিনি অন্যতম প্রভাবশালী নির্মাতা হিসেবে বিবেচিত। তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থাপনভঙ্গি ও ব্যতিক্রমী রসবোধ দর্শকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। তিনি ‘লেট’স প্লে’ ভিডিও ধারার পথিকৃৎ বলে পরিচিত। লেট’স প্লে ভিডিও বলতে এমন একধরনের গেমিং কনটেন্টকে বোঝায়, যেখানে একজন গেমার কোনো ভিডিও গেম খেলার সময়কার পুরো অভিজ্ঞতা রেকর্ড করেন। ৩৫ বছর বয়সী পিউডাইপাই মাসে আনুমানিক ১০ থেকে ২০ লাখ ডলার আয় করেন।

লাইক নাস্তিয়া

লাইক নাস্তিয়ার প্রকৃত নাম আনাস্তাসিয়া রাদজিনস্কায়া। ১১ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়া রাদজিনস্কায়া জন্মগতভাবে সেরেব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত ছিল
ছবি: অ্যাটলাইটআন্ডারস্কোরনাস্তিয়া

রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ইউটিউবার লাইক নাস্তিয়ার প্রকৃত নাম আনাস্তাসিয়া রাদজিনস্কায়া। ২০১৬ সালে সে তার ইউটিউব চ্যানেল শুরু করে। তার সাবস্ক্রাইবার ১০ কোটি ৫৯ লাখের বেশি। আনাস্তাসিয়া তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন রঙা ও শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করে, যা শিশুদের আনন্দের মাধ্যমে নানা কিছু শেখায়। ভিডিওগুলো সহজবোধ্য ও শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখে, যা তার ব্যাপক জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ। তার মাসিক আয় আনুমানিক ১০ থেকে ২০ লাখ ডলার।
১১ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়া রাদজিনস্কায়া জন্মগতভাবে সেরেব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত ছিল। রোগটি মস্তিষ্কের বিকাশজনিত একধরনের অক্ষমতা, যা শরীরের গতি, পেশির টান ও অন্যান্য কার্যক্ষমতা প্রভাবিত করে। চিকিৎসকেরা প্রথমে ধারণা করেছিলেন, সে হয়তো কখনো কথা বলতে পারবে না। কিন্তু বাবা-মায়ের কঠোর পরিশ্রম এবং বিভিন্ন থেরাপি তার জীবনধারা বদলে দেয়। লাইক নাস্তিয়া ইউটিউবে বিশ্বের শিশু দর্শকদের একটি বিশাল সম্প্রদায় গড়ে তুলেছে।

কিডস ডায়ানা শো

কিডস ডায়ানা শো নামের ইউটিউব চ্যানেলটি শুরু হয়েছিল ইউক্রেন থেকে
ছবি: কিডসডায়ানাশো ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে

কিডস ডায়ানা শো নামের ইউটিউব চ্যানেলটি শুরু হয়েছিল ইউক্রেন থেকে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চ্যালেনটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করা চ্যানেলটি মূলত শিশুদের জন্য তৈরি। এতে ডায়ানা ও তার ভাই রোমা মিলে শিশুদের খেলা, গল্প ও শিক্ষামূলক বিষয় নিয়ে ভিডিও বানিয়ে আপলোড করে। তাদের ভিডিওগুলো নানা রঙের, মজার ও সহজবোধ্য, যা ছোট শিশুদের কাছে খুবই প্রিয়। কিডস ডায়ানা শোর সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১২ কোটির বেশি। মাসিক আয় প্রায় ১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ ডলার। তাদের কনটেন্ট শিশুদের বিনোদন ও শেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভ্লাদ অ্যান্ড নিকি

ভ্লাদ অ্যান্ড নিকি ইউটিউব চ্যানেলটি ২০১৮ সালে রাশিয়ায় যাত্রা শুরু করে। পরে চ্যানেলটির উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ভ্লাদ অ্যান্ড নিকি দুই ভাই মিলে শিশুদের জন্য খেলাধুলা, গল্প ও শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করে থাকেন। তাঁদের ভিডিওগুলো রঙিন ও আনন্দদায়ক হওয়ায় বিশ্বজুড়ে শিশুদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ১০ কোটির বেশি। মাসিক আয় ১০ থেকে ২০ লাখ ডলার।

জি মিউজিক কোম্পানি

জি মিউজিক কোম্পানি ২০১৪ সালে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়। বলিউড সংগীতের অন্যতম প্রধান এ প্ল্যাটফর্মের সাবস্ক্রাইবার ৯০ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। মাসিক আয় প্রায় ১০ থেকে ২০ লাখ ডলার। ভারতের অন্যতম বৃহৎ সংগীতবিষয়ক এ চ্যানেলে বলিউডের নতুন, ক্ল্যাসিক গান ও মিউজিক ভিডিও আপলোড করা হয়। জি মিউজিক কোম্পানি ভারতীয় সংগীতের বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরে এবং তরুণ ও প্রতিষ্ঠিত কণ্ঠশিল্পীদের কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়।

ফাইভ মিনিট ক্র্যাফটস

ফাইভ মিনিট ক্র্যাফটস ২০১৬ সালে সাইপ্রাস থেকে যাত্রা শুরু করে। এ চ্যানেলে দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট কাজ সহজ ও বুদ্ধিদীপ্তভাবে করার কৌশল বা পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়। এতে জীবনযাপনের টিপসের পাশাপাশি ডাই বা ডু ইট ইয়োর সেলফ প্রজেক্টের মাধ্যমে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়। এ চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ৭ কোটি ৫০ লাখের বেশি। মাসিক আয় আনুমানিক ১০ থেকে ২০ লাখ ডলার।

ডুডে পারফেক্ট

ডুডে পারফেক্ট ইউটিউব চ্যানেলটি ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ শুরু করে। মূলত স্পোর্টস স্টান্ট ও চ্যালেঞ্জিং ভিডিওর মাধ্যমে চ্যানেলটি পরিচিতি লাভ করেছে। পাঁচ বন্ধুর একটি দল চ্যানেলটি পরিচালনা করে এবং তাঁদের ট্রিক শট ও ক্রীড়াভিত্তিক বিনোদন বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মুগ্ধ করে। বর্তমানে তাঁদের সাবস্ক্রাইবার ৬ কোটির বেশি। মাসিক আয় আনুমানিক ১০ থেকে ২০ লাখ ডলার। ডুডে পারফেক্ট ক্রীড়া ও মজার চ্যালেঞ্জকে মিশিয়ে এমন ভিডিও তৈরি করে, যা সব বয়সী দর্শকদের আকর্ষণ করে। তাঁদের উদ্ভাবনী ধারণা ও উপস্থাপন ক্রীড়াজগতকে নতুন এক বিনোদনের মাত্রা দিয়েছে।

উইন্ডারসন নুনেস

উইন্ডারসন নুনেস ব্রাজিলের একজন বিখ্যাত ইউটিউবার
ছবি: উইন্ডারসন ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে

উইন্ডারসন নুনেস ব্রাজিলের একজন বিখ্যাত ইউটিউবার। নিজের নামেই তিনি ২০১৩ সালে ইউটিউব চ্যানেলটি খোলেন। কৌতুকপূর্ণ ভিডিও, গান ও ব্লগ কনটেন্টের জন্য বিখ্যাত এ চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৪ কোটি ৫০ লাখের বেশি। মাসিক আয় আনুমানিক প্রায় ১০ লাখ ডলার। ৩০ বছর বয়সী উইন্ডারসনের স্বাভাবিক ভঙ্গি ও হাস্যরস দর্শকদের সঙ্গে সহজেই সংযোগ তৈরি করে। তাঁর ভিডিওগুলো বিনোদনের পাশাপাশি ব্রাজিলের তরুণ সমাজের মধ্যে হাসি ও প্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিত।

১০

ফেলিপে নেটো

ব্রাজিলের বিখ্যাত ইউটিউবার ফেলিপে নেটো ২০১০ সালে নিজের নামেই চ্যানেল তৈরি করেন। তাঁর ভিডিওগুলো মূলত কমেডি ও সামাজিক মন্তব্যের জন্য পরিচিত। চ্যানেলটিতে ৪ কোটি ৪০ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। মাসিক আয় আনুমানিক ৫ থেকে ১০ লাখ ডলার। স্পষ্টভাষী উপস্থাপনা, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে হাস্যরসাত্মক বিশ্লেষণ ও সামাজিক ইস্যুতে সাহসী মতামতের জন্য ফেলিপে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়। তরুণ সমাজের ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর কনটেন্ট বিনোদনের পাশাপাশি সচেতনতা ও আলোচনা উসকে দেয়, যা তাঁকে অনন্য করে তুলেছে।

সূত্র: স্যোসালকাউন্টসডটওআরজি, হাইপঅডিটর, ইনভেস্টোপেডিয়া, বিজনেস ইনসাইডার