সৈকতে যায় মানুষ একটু আরাম করতে, মজা করতে, সাঁতার কাটতে, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তবে সব সৈকত বিশেষ করে সাঁতারুদের জন্য নিরাপদ নয়। তীব্র স্রোত, বিপজ্জনক সামুদ্রিক প্রাণীর উপস্থিতি, দ্রুত বদলে যাওয়া আবহাওয়াসহ কয়েকটি কারণে কিছু সৈকত বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১০ সৈকত এবং কী কারণে সেগুলো মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
আমাজন নদীর সৈকত দেখতে বেশ শান্ত মনে হলেও পানির নিচে লুকিয়ে আছে অসংখ্য বিপদ; যার মধ্যে রাক্ষুসে মাছ পিরানহা ও কুখ্যাত খুদে মাছ ক্যান্ডিরু অন্যতম। এ ছাড়া এ নদীতে সাঁতার কাটতে গেলে তীব্র স্রোত ও ভাসমান আবর্জনার মুখোমুখি হতে হবে। আমাজনে রয়েছে সমৃদ্ধ এক জীববৈচিত্র্য। এটিও সেখানকার সৈকতে সাঁতার বা গোসলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
নানা উৎসব ও আয়োজনে বহু মানুষ ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বাইয়ের চৌপাটি সৈকতে ভিড় করেন। যদিও সৈকতটি ভয়াবহ দূষণের শিকার এবং এখানকার পানি সাঁতার কাটার জন্য নিরাপদ নয়। দূষিত পানির কারণে সৈকতে পানিতে নামলে নানা রকম স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কারণে চৌপাটি সৈকতে বেড়াতে গেলেও সাঁতার বা গোসলের জন্য পানিতে না নামার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
সার্ফিংয়ের জন্য চমৎকার পরিবেশের কারণে একসময় ভারত মহাসাগরের রিইউনিয়ন দ্বীপের সৈকতের বেশ সুনাম ছিল। কিন্তু হাঙরের আক্রমণ অস্বাভাবিক রকমে বেড়ে যাওয়ায় সৈকতটি বিপজ্জনক তালিকায় উঠে এসেছে। যেসব জায়গায় হাঙরের আক্রমণ ঘন ঘন হয়েছে, ওই সব জায়গায় সরকারের পক্ষ থেকে সাঁতার কাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও দ্বীপটির চারপাশের প্রকৃতি খুবই মনোমুগ্ধকর, কিন্তু পানির নিচে ঢেউয়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ‘যমদূতের’ কারণে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার কারণে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের কেপ ট্রিবুলেশনের সৈকত পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারত। কিন্তু পানির নিচে থাকা বিপদের কারণে এ সৈকত সাঁতারুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কেপ ট্রিবুলেশনে সৈকত এলাকায় সমুদ্রের পানিতে প্রচুর বিষাক্ত জেলিফিশ ঘুরে বেড়ায়, সঙ্গে আছে নোনাপানির কুমির। বিশেষ করে গ্রীষ্মে যত বক্স জেলিফিশ সৈকতের পানিতে ভেসে আসে, তা সত্যি ভয়জাগানো। সঙ্গে কুমির দেখতে পাওয়া যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয় এবং কয়েকটি জায়গায় পানিতে সাঁতার কাটতে নিরুৎসাহিত করা হয়।
হাওয়াইয়ের কাউয়াই দ্বীপের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের অংশ হানাকাপিআই সৈকত। নৈসর্গিক এ সৈকত ঘিরে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর বিপদ। আপাতদৃষ্টর এই উপকূলরেখা দেখতে খুবই শান্ত মনে হলেও এখানে পানিতে রয়েছে শক্তিশালী ও অপ্রত্যাশিত চোরাস্রোত। সাঁতার কাটতে গিয়ে এ চোরাস্রোতে পড়ে গেলে তা আপনাকে নিমেষেই ভাসিয়ে সমুদ্রে নিয়ে ফেলবে। কুখ্যাত এ চোরাস্রোতে ৮০ জনের বেশি মারা গেছেন। প্রশান্ত মহাসাগরের এই বিপজ্জনক স্রোতের বিষয়ে সৈকতে সতর্কবার্তা টানানো আছে।
ফ্রেজার আইল্যান্ডের মনোরম পরিবেশ সেখানে লুকিয়ে থাকা প্রাকৃতিক বিপদের কথা ক্ষণিকের জন্য ভুলিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এ দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের বিশেষ করে সাঁতারুদের জন্য ওত পেতে থাকা বিপদ নিয়ে সতর্ক হতে ভুলে গেলে চলবে না। ফ্রেজার দ্বীপের সৈকতে ভেসে বেড়ায় অসংখ্য জেলিফিশ। হাঙরের আনাগোনা নিয়মিত দেখতে পাওয়া যায়, মাঝেমধ্যে নোনাপানির কুমিরের দেখাও মেলে। আছে শক্তিশালী ঢেউও। এসব কারণে এ দ্বীপের সৈকতে সাঁতার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, যেকোনো সময় বিপদে পড়তে হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার গান্সবাইকে প্রায়ই ‘বৃহৎ আকারের সাদা হাঙরের রাজধানী’ বলা হয়। কুখ্যাত এই সৈকতে অনেক সাদা হাঙর দেখতে পাওয়া যায়। ঠান্ডা পানি আর প্রচুর সামুদ্রিক প্রাণী থাকায় সাদা হাঙর দলে দলে গান্সবাইতে চলে আসে। সাদা হাঙর, সঙ্গে পানির নিচে ধারলো পাথর ও শক্তিশালী ঢেউয়ে অভিজ্ঞ ডুবুরিদের কাছে খাঁচায় ঢুকে সমুদ্রে ডুব দিতে গান্সবাই দারুণ পছন্দের জায়গা। কিন্তু সাধারণ সাঁতারুরা বিপদের কথা মাথায় রেখে এ সৈকত এড়িয়ে চলেন।
প্লায়া সিপোলিতে সৈকত ‘বিচ অব দ্য ডেড’ (মৃতদের সৈকত) নামও পরিচিত। এ সৈকতে থাকা শক্তিশালী চোরাস্রোত এমনকি দক্ষ সাঁতারুদেরও প্রচণ্ড টানে সমুদ্রে নিয়ে ফেলতে পারে।
তাই মনোরম পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও সৈকতের তলদেশে লুকানো ওই প্রচণ্ড শক্তি সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন সতর্ক থাকেন এবং পর্যটকদের জন্য সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি উদ্ধারকর্মীদের এ সৈকতে দেখা গেলেও নিজেদের সতর্ক থাকা সব সময় জরুরি।
চারপাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর চমৎকার জলরাশি থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার নিউ স্মায়ার্না সৈকতকে ‘শার্ক বাইট ক্যাপিটাল অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বলা হয়। কারণ, এ সৈকতে অনেক হাঙর ঘুরে বেড়ায়। সৈকতে থাকা বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়ার লোভে হাঙরের দল সৈকতে চলে আসে। সাঁতারুদের তাই সতর্ক থাকতে এবং হাঙরের খাওয়ার সময় সৈকতে সাঁতার এড়িয়ে চলতে বলা হয়।
কাছেই একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি থাকার কারণে হাওয়াই দ্বীপের কিলাওয়েয়া সৈকত বিপজ্জনক হিসেবে কুখ্যাত। সক্রিয় ওই আগ্নেয়গিরিতে কোনো কার্যকলাপ শুরু হলেই সৈকতটিতে বিপজ্জনক মাত্রায় প্রভাব পড়ে। এর ফলে সৈকতের ভূপ্রকৃতি হঠাৎ করে পাল্টে যেতে পারে, প্রভাবিত হতে পারে পানির অবস্থা। বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি এবং হঠাৎ করেই লাভার উদ্গিরণ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে সৈকতটি সাঁতারুদের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়।
তথ্যসূত্র: এমএসএন ডটকম