আকাশচুম্বী বৌদ্ধমন্দির, সোনালি বালুর সৈকত, চিরহরিৎ বনে মোড়ানো পাহাড়ি পথ, আর গ্রীষ্মময় দ্বীপের বুকে শান্ত সমুদ্রের ঢেউ—এ যেন এক স্বপ্নের দেশ। থাইল্যান্ড শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, মুখরোচক খাবার আর উষ্ণ আতিথেয়তা মোহিত করে বিশ্বের লাখো পর্যটককে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। ভ্রমণবিষয়ক সাময়িকী ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার অবলম্বনে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এই লেখায় থাকছে থাইল্যান্ডের ১০টি দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক—একদিকে বিশাল আর আধুনিক, অন্যদিকে ঐতিহ্যে ভরপুর। ৫৫ লাখ মানুষের এই শহরে আপনি পাবেন চাও ফ্রায়া নদীর ধারে শান্তির ছোঁয়া, বৌদ্ধমন্দিরের মহিমা আর রাতের রাস্তায় বাহারি খাবারের স্বাদ। এই শহরের বড় দুটি আকর্ষণ হলো চাই ওয়াট অরুন ও ওয়াট ফ্রা কেও নামের দুটি বিখ্যাত মন্দির।
কোলাহলপূর্ণ ব্যাংককের তুলনায় চিয়াং মাই অনেকটাই শান্ত আর পাহাড়ে ঘেরা। এখানে আছে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু পর্বত—দোই ইনথানন। এ ছাড়া আছে ঐতিহ্যবাহী লান্না সংস্কৃতির ছোঁয়া। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে গেলে উপভোগ করা যাবে থাই নববর্ষ ‘সংক্রান’ উৎসব। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানিখেলা হয় এ উৎসবে। আর নভেম্বরে দেখতে পাওয়া যাবে বিখ্যাত লন্ঠন উৎসব ‘ই পেং’। চিয়াং মাইতে গেলে বুয়া তং ঝরনা দেখতে ভুলবেন না। কোনো গাইড বা সরঞ্জাম ছাড়াই এই ঝরনার ওপরে ওঠা যায়।
থাইল্যান্ডের উত্তরের এই শহর অনেকটাই উপেক্ষিত রয়ে গেছে। তবে যাঁরা প্রকৃত থাই সংস্কৃতির স্বাদ নির্জনতার ছোঁয়া নিতে চান, তাঁরা অবশ্যই এ শহরকে ভ্রমণের তালিকায় রাখতে পারেন। এখানকার প্রধান আকর্ষণ শ্বেত মন্দির (ওয়াট রং খান), নীল মন্দির (ওয়াট রং সুয়া টেন) এবং রাতের বাজার। ঘুরে দেখতে পারেন গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের আশপাশের পল্লি এলাকা। পাহাড়ি আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় ভাষা ও মনোরম সংস্কৃতি আপনার মন কাড়তে পারে।
৪০০ মাইল দীর্ঘ আঁকাবাঁকা পাহাড়ি এই পথ নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চপ্রেমীদের মন কাড়বে। থাইল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমের অনন্য সৌন্দর্য দেখার জন্য এই পথের জুড়ি নেই। তিন দিনে এই এলাকা ঘুরে দেখা সম্ভব। অনেকে মোটরসাইকেলে এই পথে ঘুরতে যান।
মায় হং সন লুপের মাঝেই পাই নামে ছোট্ট একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা অবস্থিত। এই শহরের জনসংখ্যা মাত্রা তিন হাজার। হাজারো প্রকৃতিক সৌন্দর্যপ্রেমী প্রতিবছর এখানে ঘুরতে আসেন। এখানকার গরম পানির ঝরনা, জলপ্রপাত এবং পাই ক্যানিয়ন থেকে পাহাড়-উপত্যকার অপূর্ব দৃশ্য দেখে মন ভরে যাবে।
থাইল্যান্ডের অন্য দ্বীপগুলোর তুলনায় তুলনামূলক কম পরিচিত হলেও কো লান্টা তার শান্ত সমুদ্রতট, ম্যানগ্রোভ বন আর গ্রামীণ পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। এখানে পাকা রাস্তার সংখ্যা খুবই কম। স্থানীয় মানুষের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঘর দেখে আপনার মন ভরে যেতে পারে সহজেই।
থাইল্যান্ডের নজরকাড়া সৌন্দর্যের সঙ্গে অনেক পর্যটক প্রথম পরিচিত হন ফুকেটে। আর এ জন্য এই দ্বীপকে পর্যটকদের প্রবেশদ্বারও বলা হয়ে থাকে। এখানে প্রতিদিন ৩০০টি ফ্লাইট আসা-যাওয়া করে। রয়েছে অসংখ্য হোটেল-মোটেল এবং বিনোদনের নানা সুযোগ। দ্বীপটির প্রাণকেন্দ্র পাতোং সমুদ্রসৈকত। তবে এই সৈকতের গণ্ডি পেরিয়ে স্কুটারে করে আশপাশে ঘুরলে চোখে পড়বে সাদা বালুর সৈকত ও ম্যানগ্রোভ বনের নিঃশব্দতা।
এক দিনে মোটরসাইকেলে ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় ৬০ মাইল দীর্ঘ পাহাড়ি পথ সামোয়েং লুপ। তবে এখানকার সব সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য কমপক্ষে দু-তিন দিন সময় লাগবে। এখানে আছে হাতির অভয়ারণ্য, মন চাম পাহাড়ি গ্রাম ও থাই রানির নামে প্রতিষ্ঠিত বোটানিক্যাল গার্ডেন।
চুনাপাথরের পাহাড়, নির্জন সাদা বালুর সৈকত আর ফিরোজা রঙের জল—এ সবকিছু মিলিয়ে কো ফি ফি যেন এক স্বর্গরাজ্য। এখানে ২০০০ সালের ‘দ্য বিচ’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল। দ্বীপপুঞ্জটি নৌকায় করে খুব ভালোভাবে ঘুরে দেখা যায়। এখানকার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র মায়া বে, মানকি বিচ ও ফি ফি ডন।
ক্রাবিতে পৌঁছানো সহজ, কিন্তু মনোরম সৌন্দর্যের কারণে সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন। এখানকার প্রধান আকর্ষণ রেইলে সমুদ্রসৈকত। ক্রাবি থেকে এই সৈকতে নৌকায় চড়ে যেতে সময় লাগে মাত্রা ২০ মিনিট। এখানে গুহা অভিযান, চুনাপাথরের পাহাড়ে চড়ার পাশাপাশি ১ হাজার ২৬০ ধাপের সিঁড়ি বেয়ে উঠে দেখা যায় ওয়াট থাম সুয়া মন্দিরের সৌন্দর্য।