পরিচয় সংকটে ভুগে ঝুঁকেছিলেন মাদকে, পরে তিনিই হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট

মা অ্যান ডানহামের কোলে ছোট্ট বারাক ওবামা। এই ছবিটি ১৯৬০ এর দশকে তোলা
ছবি: রয়টার্স

জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে। মা শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান, বাবা কেনীয় কৃষ্ণাঙ্গ। তাঁর বয়স যখন মাত্র দুই বছর, তখন বাবা তাঁদের ছেড়ে কেনিয়া চলে যান। বাবা-মায়ের সংসার টিকেছিল মাত্র চার বছর। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের কারণে একেবারে ভিন্ন এক দেশে ভিন্ন এক সাংস্কৃতিক পরিবেশে শৈশব কেটেছে ছেলেটির।

বলছি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেইন ওবামার কথা। শৈশবে বিচিত্র পরিবেশ ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা স্মরণ করে পরে ওবামা বলেছেন, ‘আমি একজন ইন্দোনেশীয় শিশু হিসেবে, একজন হাওয়াইয়ান শিশু হিসেবে, একজন কৃষ্ণাঙ্গ শিশু হিসেবে ও একজন শ্বেতাঙ্গ শিশু হিসেবে বড় হয়েছি।’

ছোট বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ আর একেবারে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার লড়াই করতে করতে শিশু ওবামা একটা সময় অস্তিত্বের সংকটে পড়েছিলেন। কিন্তু শৈশবের ওই বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তী জীবনে উপকৃত হয়েছেন বলে তিনি নিজেই পরে জানান।

ওবামার জন্ম ১৯৬১ সালের ৪ আগস্ট। সদ্যই ৬৪ পেরিয়ে ৬৫ বছরে পা রেখেছেন তিনি। শৈশবে নিজের পরিচয় হাতড়ে বেড়ানো শিশুটি জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ হয়ে ওঠেন, তা নিয়েই ফিরে দেখায় আজকের আয়োজন।

ওবামার মা স্ট্যানলি অ্যান ডানহাম ছিলেন ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত একজন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান। ডানহাম পরিবার বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস, টেক্সাস ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেছে। পর তারা হাওয়াইয়ের হনলুলুতে বসবাস শুরু করে। ১৯৬০ সালে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ ভাষা শেখার একটি ক্লাসে অ্যান ডানহামের দেখা হয় বারাক ওবামা সিনিয়রের সঙ্গে।

শ্বেতাঙ্গ মায়ের কৃষ্ণাঙ্গ ছেলে

ওবামার মা স্ট্যানলি অ্যান ডানহাম ছিলেন ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত একজন শ্বেতাঙ্গ মার্কিন। ডানহাম পরিবার বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস, টেক্সাস ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেছে। পর তারা হাওয়াইয়ের হনলুলুতে বসবাস শুরু করে। ১৯৬০ সালে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ ভাষা শেখার একটি ক্লাসে অ্যান ডানহামের দেখা হয় বারাক ওবামা সিনিয়রের সঙ্গে। কিশোর বয়স পর্যন্ত কেনিয়ার একটি গ্রামে বড় হওয়া ওবামা সিনিয়র বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন।

দেখা থেকে আলাপ-পরিচয়, পরিচয়ের এক বছরের মাথায় তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের বছরই জন্ম হয় ওবামার। ছোট্ট ওবামার বয়স যখন মাত্র দুই বছর, তখন বারাক সিনিয়র হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে চলে যান।

তার কিছুদিন পর ১৯৬৪ সালে অ্যান ও বারাক সিনিয়রের বিচ্ছেদ ঘটে। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর ওবামা তাঁর বাবাকে জীবনে আর মাত্র একবার দেখেছিলেন। ১৯৭১ সালে ওবামা সিনিয়র খুব সংক্ষিপ্ত সফরে যখন হাওয়াই এসেছিলেন, তখন শেষবার বাবা-ছেলের দেখা হয়। সে সময় ওবামার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর।

পরে অ্যান দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। এবারও এক বিদেশি ছাত্র, ইন্দোনেশিয়ার লোলো সোয়েতোরোকে। মায়ের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা চলে যান ওবামা। সেখানে সৎবাবা, মা ও সৎবোন মায়ার সঙ্গে কয়েক বছর বসবাস করেন ওবামা। ইন্দোনেশিয়ায় একটি সরকারি স্কুলে পড়ার সময় ইসলাম ধর্মের শিক্ষা নেন, পাশাপাশি একটি ক্যাথলিক বেসরকারি স্কুলেও ভর্তি ছিলেন, যেখানে তিনি খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষা পেয়েছেন।

ওবামার মা ছিলেন একজন নৃবিজ্ঞানী। ছেলের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বেগ থেকে তিনি ওবামাকে যুক্তরাষ্ট্রে নানা-নানির কাছে পাঠিয়ে দেন। ওবামা স্কুলে পড়ার সময়ই তাঁর মা দ্বিতীয়বার বিবাহবিচ্ছেদ করে হাওয়াই ফিরে যান। সেখানে লেখাপড়া শেষে অ্যান আবারও কাজের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় চলে যান।

বাবা বারাক ওবামা সিনিয়রের সঙ্গে ১০ বছরের বালক বারাক ওবামা। সেবারই বাবা ছেলের শেষবার দেখা হয়
ছবি: রয়টার্স

নানা-নানির দেখভালে বড় হতে থাকেন ওবামা। হাওয়াই সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় হলেও সেখানে আফ্রিকান আমেরিকান জনসংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য। সেখানে বাবাহীন এক কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর, তাঁর বড় হওয়ার যাত্রায় পরিবারের অন্য কাউকেও রোল মডেল হিসেবে সামনে পাচ্ছেন না। শ্বেতাঙ্গ নানার সঙ্গেও ওবামার সম্পর্কের সমীকরণ ছিল জটিল।

অল্প বয়সে এই মানসিক টানাপোড়েন থেকে স্কুলে থাকার সময় মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন বলে পরে ওবামা নিজেই জানান। নিজের পরিচয় সংকট, সামাজিক অবস্থান এবং আত্মপরিচয় গঠনের জটিল বাস্তবতার সঙ্গে তাঁকে যে লড়াই করতে হয়েছে, তা নিয়ে তিনি পরে নিজের স্মৃতিকথামূলক বই ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার: আ স্টোরি অব রেস অ্যান্ড ইনহ্যারিট্যান্স’–এ খোলাখুলি কথা বলেন।

বইয়ে সে সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ওবামা লেখেন, ‘আমি নিজেকে আমেরিকায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলাম। আর এ যাত্রায় আমার বাহ্যিক চেহারার বাইরে আমার আশপাশে কেউই যেন ঠিক জানত না, এর অর্থ আসল কী।’

হাওয়াই সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় হলেও সেখানে আফ্রিকান আমেরিকান জনসংখ্যা ছিল অত্যন্ত নগণ্য। সেখানে বাবাহীন এক কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর, তার বড় হওয়ায় যাত্রায় পরিবারের অন্য কাউকেও রোল মডেল হিসেবে সামনে পাচ্ছে না। শ্বেতাঙ্গ নানার সঙ্গেও ওবামার সম্পর্কের সমীকরণ ছিল জটিল।

নিজেকে আবিষ্কারের পথে যাত্রা

কলেজে লেখাপড়া করতে হাওয়াই ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পাড়ি জমান ওবামা। তিনি প্রথমে লস অ্যাঞ্জেলেসের অক্সিডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে দুই বছর পড়ার পর নিউইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। কলাম্বিয়ায় তিনি রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে গভীর ও বিস্তৃত পড়াশোনা করেন।

১৯৮৩ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে আরও এক বছর একটি বৈশ্বিক ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। এরপর তিনি শিকাগোর দরিদ্র ও কৃষ্ণাঙ্গপ্রধান দক্ষিণাংশে কমিউনিটি অর্গানাইজার হিসেবে কাজ করতে চলে যান।

সৎ বাবা, মা ও সৎবোন মায়ার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ায় কয়েক বছর বসবাস করেন ওবামা
ছবি: রয়টার্স

১৯৮৮ সালে ওবামা হার্ভার্ড ল স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান এবং অত্যন্ত প্রশংসনীয় ফলসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ওবামা প্রথম অন্যদের নজরের আসেন গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে। ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে তিনি বিখ্যাত হার্ভার্ড ল রিভিউর সভাপতি নির্বাচিত হয়ে হইচই ফেলে দেন।

১৯৮৮ সালে ওবামা হার্ভার্ড ল স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান এবং অত্যন্ত প্রশংসনীয় ফলাফলসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ওবামা প্রথম অন্যদের নজরের আসেন গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে। ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে তিনি বিখ্যাত হার্ভার্ড ল রিভিউর সভাপতি নির্বাচিত হয়ে হইচই ফেলে দেন।

ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার: আ স্টোরি অব রেস অ্যান্ড ইনহ্যারিট্যান্স

হার্ভার্ড ল রিভিউয়ের দীর্ঘ ইতিহাসে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান সভাপতি হিসেবে ওবামা ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং র‍্যানডম হাউস প্রকাশনা সংস্থা থেকে একটি বই লেখার চুক্তিও পান। বিষয় ছিল—জাতিগত সম্পর্ক।

১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় ওবামার লেখা বই ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার: আ স্টোরি অব রেস অ্যান্ড ইনহ্যারিট্যান্স’। বইটি শেষপর্যন্ত তাঁর শৈশব ও কৈশোরের একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণামূলক রচনা হয়ে ওঠে।

বইয়ে তিনি একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ হিসেবে আত্মপরিচয়ের সন্ধানে শিশু ও কিশোর বয়সে তাঁর ভেতরকার সংগ্রাম বিশেষভাবে তুলে ধরেন। সেখানে তুলে এনেছেন এমন এক শিশুর সংগ্রাম, যে কিনা কৃষ্ণাঙ্গ চেহারা নিয়ে বড় হয়েছে একটি শ্বেতাঙ্গ পরিবারে। যার বড় হওয়ার যাত্রায় তাঁর আফ্রিকান বাবা সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত থেকেও গভীর ছাপ রেখে গেছেন।

সে সময়ে মার্কিন সমাজে জাতিগত পরিচিতি ও ভিন্নতার উপলব্ধি তাঁকে কতটা নাড়িয়ে দিয়েছিল, তা স্মরণ করতে গিয়ে ওবামা লেখেন, ‘আমি লক্ষ করেছিলাম, ক্রিসমাস ক্যাটালগেও আমার মতো দেখতে কেউ নেই…এবং সান্তা ক্লজও একজন শ্বেতাঙ্গ।’

ওবামা আরও লেখেন, তিনি বাথরুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজেকে আয়নায় দেখতে দেখতে তাঁর মনে হতো, তাঁর ভেতরে হয়তো কোনো সমস্যা আছে।

‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার: আ স্টোরি অব রেস অ্যান্ড ইনহ্যারিট্যান্স’ বইয়ে ওবামা লেখেন, ‘আমি কবর দুটির মাঝে বসে অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছিলাম। আমি আমার আমেরিকান জীবনের কথা ভাবছিলাম, যেখানে জীবন সাদা আর কালো রঙে বিভক্ত। বাল্যকালে আমার বঞ্চনার অনুভূতি, শিকাগোয় আমার সেই হতাশা আর আশার অনুভূতি—সবই মহাসাগর পাড়ি দেওয়া দূরত্বে থাকা এই দুই টুকরা জমির সঙ্গে জড়িয়ে আছে।’

শিকড়ের খোঁজে কেনিয়ায়

ওবামা বাবার সান্নিধ্য পাননি। তাঁর মা ও নানা-নানি কোনো ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে পরে ওবামা বলেছেন, তিনি কোনো ধর্মীয় পরিবেশে বড় হননি। যদিও পরে তিনি ট্রিনিটি চার্চের সদস্য হন। বড় হওয়ার পর বাবা ও দাদার কবর দেখতে ওবামা কেনিয়া গিয়েছিলেন।

‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার: আ স্টোরি অব রেস অ্যান্ড ইনহ্যারিট্যান্স’ বইয়ে ওবামা লেখেন, ‘আমি কবর দুটির মাঝে বসে অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছিলাম। আমি আমার আমেরিকান জীবনের কথা ভাবছিলাম, যেখানে জীবন সাদা আর কালো রঙে বিভক্ত। বাল্যকালে আমার বঞ্চনার অনুভূতি, শিকাগোয় আমার সেই হতাশা আর আশার অনুভূতি—সবই মহাসাগর পাড়ি দেওয়া দূরত্বের এই দুই টুকরা জমির সঙ্গে জড়িয়ে আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট

বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সিনেটে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।

২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন বারাক ওবামা। পাশে তাঁর স্ত্রী মিশেল ওবামা
ছবি: রয়টার্স

ওবামা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। কৃষ্ণাঙ্গ এক শিশু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে তাঁর এ যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন পেতে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওবামা যখন প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, তখন তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন।

সে সময়ে হিলারির তুমুল জনপ্রিয়তার ছায়ায় ঢাকা পড়ে থাকা কোনো কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি যে শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পেয়ে যাবেন, তা শুরুতে অনেকে বিশ্বাসই করেননি।

কিন্তু শৈশব থেকেই সামাজিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া ওবামা আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, উদ্দীপনামূলক ভাষণ ও প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণ ও সংখ্যালঘু ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটারদের মন জয় করে নেন।

তাই শুরুতে হিলারির থেকে পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ওবামা ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে যান। ওবামা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোনো দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হওয়া প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ। প্রায় ৫৩ শতাংশ পপুলার ভোট পেয়ে নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যখন ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন, সে সময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪৭ বছর। দুই মেয়াদে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।