প্রচণ্ড গরম হয়ে উঠছে নীরব ঘাতক

তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ সাদা বাঘটি একটু প্রশান্তি পেতে পানিতে নেমেছে। কমলা নেহরু জুওলোজিক্যাল গার্ডেন, আহমেদাবাদ, ভারত, ২৯ এপ্রিলছবি: এএফপি

দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও এল নিনোর প্রভাবে তাপপ্রবাহ ধীরে ধীরে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, যা নীরব ঘাতকে পরিণত হচ্ছে।

বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া এই তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে। সব দেশেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে গরমের কারণে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

মিয়ানমারে গতকাল রোববার তাপমাত্রা ওঠে ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলিয়াসে, যা দেশটির ৫৬ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একই দিনে দেশটির বাণিজ্যিক শহর ইয়াঙ্গুনের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি আর মান্দালয়ে ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহের কারণে ইয়াঙ্গুনে মোটরসাইকেল ও স্কুটার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। চাউক শহরের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে প্রচণ্ড গরম। আমরা ঘর থেকে বের হচ্ছি না। এ অবস্থায় আমাদের আর কিছু করার নেই।’

মিয়ানমারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষকদের তথ্যমতে, এপ্রিলে সাধারণত যে গড় তাপমাত্রা থাকে, তার চেয়ে গত বৃহস্পতিবারের তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী, তীব্র ও বারবার হতে পারে। জাতিসংঘের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক সংস্থা গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এর মধ্যে বিশেষ করে এশিয়া দ্রুতগতিতে উষ্ণ হয়ে উঠছে।

গরমে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কমে, কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিদ্যুতের ওপর চাপ পড়ে। পরিসংখ্যানে এসব বিষয়ে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। প্রচণ্ড গরম ধীরে ধীরে বড় ধরনের নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে।
কো ব্যারেট, উপমহাসচিব, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা

কম্বোডিয়ার পানি ও আবহাওয়াবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সামনের দিনগুলোতে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। এই পূর্বাভাসের পর দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশবাসীকে গরমে স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

ভিয়েতনামে তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়ে দেশটির সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। পুরো এপ্রিলে প্রচণ্ড গরম থাকতে পারে উল্লেখ করে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী মাসে তাপমাত্রা কমে আসতে পারে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) এশিয়া ও দক্ষিণ–পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক বেন চার্চিল বলেন, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চল সাধারণত এপ্রিল মাসে উষ্ণ থাকে। কিন্তু এল নিনো (আবহাওয়ার বিশেষ অবস্থা) ও জলবায়ু পরিবর্তন এই অঞ্চলের তাপমাত্রাকে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। ডব্লিউএমওর ওয়েবসাইটে গত শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি এ কথা বলেন।

মিয়ানমারে গতকাল রোববার তাপমাত্রা ওঠে ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলিয়াসে, যা দেশটির ৫৬ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একই দিনে দেশটির বাণিজ্যিক শহর ইয়াঙ্গুনের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি আর মান্দালয়ে ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে রয়েছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর গত শনিবার জানায়, এই পরিস্থিতিতে কোনো কোনো অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে।

তাপপ্রবাহে ভারতের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেঙ্গালুরুর একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা অনন্ত (৩৭) বলেন, ‘জীবনে এত গরমের অভিজ্ঞতা হয়নি। খুবই অস্বস্তিকর। এই গরম আপনার কাজের সমস্ত শক্তি নিংড়ে নেয়।’

ভারতের আবহাওয়া দপ্তর আগেই পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে তাপপ্রবাহ বেশি দিন থাকতে পারে। দেশটির বেশির ভাগ অঞ্চলে এই তাপপ্রবাহ থাকতে পারে।

ডব্লিউএমওর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি থাইল্যান্ডের লামপাং প্রদেশে তাপমাত্রা ৪৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বুধবার জানায়, তাপপ্রবাহে দেশটিতে চলতি বছর ইতিমধ্যে ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

ডব্লিউএমওর উপমহাসচিব কো ব্যারেট গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডে এক অনুষ্ঠানে বলেন, গরমের কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার পুরো চিত্র উঠে আসে না। এ ছাড়া গরমে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কমে, কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিদ্যুতের ওপর চাপ পড়ে। পরিসংখ্যানে এসব বিষয়ে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। প্রচণ্ড গরম ধীরে ধীরে বড় ধরনের নীরব ঘাতক হয়ে উঠছে।