সৌদি আরব ও প্রতিবেশী দেশে কবে ঈদ হতে পারে জানালেন জ্যোতির্বিদেরা

ঈদের খুশিতে প্রিয়জনের সঙ্গে সেলফিতে স্মৃতি ধরে রাখেন অনেকেই। তুরস্কের ইস্তাম্বুলেফাইল ছবি: এএফপি

পবিত্র রমজান মাস শেষের দিকে। দেশে দেশে মুসলমানরা পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এক মাসের রোজা শেষে ঈদের খুশিতে মাতবেন সবাই।
জ্যোতির্বিদদের হিসাব–নিকাশ বলছে, এ বছর পবিত্র রমজান মাস ৩০ দিনের হতে পারে। সেই হিসাবে, সৌদি আরব ও প্রতিবেশী দেশগুলোয় আগামী বুধবার (১০ এপ্রিল) ঈদ।

হিজরি বর্ষপঞ্জিতে রমজান মাসের পর শুরু হয় পবিত্র শাওয়াল মাস। বর্ষপঞ্জির দশম মাস এটি। এক মাসের সিয়াম সাধনার পর পশ্চিম আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখে ঈদ উৎসবে মেতে ওঠেন।

চান্দ্রমাস ২৯ কিংবা ৩০ দিনের হয়। তাই ঈদ কবে হবে, সেটা নিশ্চিত করে জানার জন্য মুসলমানদের ২৯ রমজানের ইফতারের পর অর্থাৎ সন্ধ্যার আকাশে চাঁদ দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এর আগে জানার সুযোগ নেই।

সৌদি আরব ও আশপাশের দেশগুলোয় আজ সোমবার (৮ এপ্রিল) ২৯ রমজান। ইফতারের পর এসব দেশের মানুষ চাঁদ দেখার জন্য পশ্চিম আকাশে চোখ রাখবেন।

চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল ফিতর হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে জ্যোতির্বিদদের হিসাব সত্যি করে, ঈদ হবে বুধবার। সে ক্ষেত্রে আগামীকাল এসব দেশের মানুষ আরও এক দিন রোজা রাখবেন।

বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ অনেক দেশে নারীরা ঈদে মেহেদিতে হাত রাঙান
ফাইল ছবি: এএফপি

বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলো নিজস্ব পন্থায় চাঁদ দেখে ঈদের তারিখ ঘোষণা করে থাকে। চাঁদ দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট দেশের রেডিও–টিভিতে তা প্রচার করা হয়। ঘোষণা করা হয় মসজিদে।

সাধারণত ঈদকে কেন্দ্র করে তিন দিনের উৎসব হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় ঈদের দিন এবং ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট তিন দিনের সাধারণ ছুটি থাকে। তবে দেশভেদে ছুটির তারতম্য দেখা যায়।

ঈদের দিন সকালে জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসলিমরা। সাধারণত খোলামাঠ, ঈদগাহ বা মসজিদে নামাজ হয়। ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে নামাজের জায়গাটি। নামাজ শেষে কোলাকুলি করেন সবাই।

আরও পড়ুন

ঈদের নামাজের আগে–পরে মিষ্টিমুখ করার রেওয়াজ আছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ঈদের সকালে খাওয়ার জন্য মামৌল নামে খেজুর দিয়ে একধরনের বিশেষ বিস্কুট বানানো হয়। মুসলিম বিশ্বে ঈদুল ফিতরে মিষ্টি বিতরণ করেন অনেকেই। এ জন্য এ ঈদকে ‘মিষ্টি’ ঈদও বলা হয়।

অনেকেই ঈদের দিন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীর বাসায় যান। ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি বিলান। নিজেরাও খান। কুশল বিনিময় করেন। অনেক দেশে সেলামি দেওয়া–নেওয়ার রেওয়াজ আছে।

ইসরায়েলের বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছে ফিলিস্তিনি এই পরিবারের বাড়িটি। বাড়িটির ধ্বংসস্তূপের ওপর ইফতার সেরে নিচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি গাজার রাফায়
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ঈদ মানে আনন্দ। আর ঈদে সবচেয়ে বেশি আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। রংবেরঙের নতুন পোশাক পরে শিশুরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। এ বাড়ি–ও বাড়ি যায়। অনেকেই শিশুদের সেলামি কিংবা উপহার দেন।

বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ অনেক দেশে নারীরা ঈদে মেহেদিতে হাত রাঙান। এটা সাধারণত চাঁদরাত অর্থাৎ ঈদের আগের রাতে করা হয়। এ জন্য প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের বাড়িতে নারীরা জড়ো হন। গল্পগুজব, আনন্দে মেতে ওঠার পাশাপাশি চলে মেহেদি পরা।  

আরও পড়ুন

অনেক দেশে ঈদের দিনে কবরস্থানে যাওয়ার রেওয়া আছে। প্রিয়জনের কবরে গিয়ে দোয়া করেন স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা। সাধারণত ঈদের নামাজের পরপর অনেকে কবরস্থানে যান।

ঈদের আগে থেকে বিভিন্ন শহরে আলোকসজ্জা করা হয়। বিপণিবিতান, সরকারি–বেসরকারি ভবন, সুউচ্চ স্থাপনা আলোর রোশনাইয়ে ঢেকে ফেলা হয়। উপহার বিনিময় ঈদের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। শুভেচ্ছা জানাতে দেশে দেশে মুসলিমরা একে অপরকে ‘ঈদ মোবারক’ বলেন।

ঈদের আনন্দ ও রোশনাইয়ে যখন ঝলমলিয়ে উঠবে পুরো মুসলিম বিশ্ব, তখন ফিলিস্তিনিদের জন্য এবারের ঈদের আনন্দ থাকবে কিছুটা ফিকে। এর কারণ, কয়েক মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা। ইসরায়েলি হামলায় সেখানে ৩৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। বেশির ভাগই নারী–শিশু।

যুদ্ধে গাজায় লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন তাঁবুতে। খাবার নেই। পানির জন্য হাহাকার। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছেন অনেকে। ধ্বংস হয়েছে বাড়িঘর। এর ওপর রয়েছে যেকোনো সময় হামলার শঙ্কা। প্রাণ হারানোর ভয়। এমনই ভীতিকর পরিবেশে এবার ঈদ এসেছে গাজায়। তাই আনন্দটাও হবে অনেক ফিকে।  

আরও পড়ুন