অদৃশ্য যাত্রী স্নোডেন

লাখো সাধারণ মানুষের ওপর মার্কিন গোয়েন্দাগিরির তথ্য ফাঁস করে ফেরারি এডওয়ার্ড স্নোডেন এখন কোথায়? বিশ্বজুড়ে এখন এক বিরাট প্রশ্ন এটি। হংকং থেকে আকাশপথে রাশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন অদৃশ্য হয়ে গেলেন তিনি। নির্দিষ্ট উড়োজাহাজটি গত রোববার মস্কোয় পৌঁছেছে ঠিকই, কিন্তু স্নোডেনের খোঁজ মেলেনি।
বৈধ কোনো পাসপোর্ট ছাড়াই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে স্নোডেনের বিচরণের ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয় জেমস বন্ডের গল্প। জনপ্রিয় থ্রিলারের নায়ক জেমস বন্ডকে এভাবেই গোপন অভিযানে যেতে দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষের গোপন নজরদারির তথ্য ফাঁসের পর থেকে এ পর্যন্ত স্নোডেনের অবস্থান সম্পর্কে নানা রকম তথ্য পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁস করে বহুল আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস জানায়, রুশ বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লটের একটি উড়োজাহাজে চড়ে হংকং ছেড়ে যান স্নোডেন। উইকিলিকস বলছে, তিনি ইকুয়েডরের কাছ থেকে শরণার্থী হিসেবে জরুরি ভ্রমণসংক্রান্ত কাগজপত্র পেয়েছেন এবং ওই দেশেই রাজনৈতিক আশ্রয় চান। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্মী স্নোডেনের পাসপোর্ট ইতিমধ্যেই বাতিল করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অনুরোধও করা হয়েছিল হংকংয়ের কাছে। কিন্তু তার আগেই স্নোডেন সেখান থেকে চলে যেতে সক্ষম হন। হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাঁকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করে ওয়াশিংটন যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছে, তা অসম্পূর্ণ। 
মস্কোর বিমানবন্দরে স্নোডেনের অপেক্ষায় ছিলেন বহু সাংবাদিক। কিন্তু যাত্রীদের ভিড়ে তাঁকে শনাক্ত করতে পারেননি কেউই। এরপর খবর পাওয়া যায়, স্নোডেনকে রাশিয়ায় প্রবেশ করতেই দেওয়া হয়নি। তাই তিনি বিমানবন্দরের ‘ট্রানজিট অঞ্চলে’ অবস্থান করছেন।
এদিকে স্নোডেনের গত সোমবার কিউবাগামী একটি উড়োজাহাজে চড়ার কথা থাকলেও তাঁকে সেখানে দেখা যায়নি। কেউ কেউ বলেন, হাভানায় যাওয়ার কোনো উদ্দেশ্যই স্নোডেনের নেই। তিনি কেবল সাংবাদিকদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, মস্কোয় নামার পর স্নোডেন সম্ভবত গোপনে অন্য কোথাও চলে গেছেন। কারণ, তাঁকে খুঁজে বের করার চেয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়াটাই ছিল মস্কোর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আবার এমনও ধারণা করা হচ্ছে, মস্কোর কোনো গোপন স্থানে রাখা হয়েছে স্নোডেনকে। অথবা হয়তো তাঁকে দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশের দূতাবাসে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আবার তিনি হয়তো সাংবাদিকদের চলে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন। নিরিবিলি অন্য কোনো উড়োজাহাজে চড়ে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাবেন। এএফপি।