অসম প্রেমের পরিণতি নৃশংসতা আর কারা প্রকোষ্ঠ

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের বেশে রুশ ইতিহাসবিদ সোকোলভ
ছবি: এএফপি

রাশিয়া সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াতেন ওলেগ সোকোলভ। তাঁর ছাত্রী ছিলেন আনাস্তাসিয়া ইয়েশচেঙ্কো। পড়ালেখার ফাঁকে কোনো এক সময় দুজনের মধ্যে গড়ে উঠেছিল প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু তাঁদের সেই প্রেমের পরিণতি হলো নৃশংসতা আর কারাদণ্ডাদেশের মধ্য দিয়ে।

প্রেমিকা ইয়েশচেঙ্কোকে হত্যার দায়ে সোকোলভের সাড়ে ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপির এক খবরে জানানো হয়েছে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি আদালত গতকাল শুক্রবার এই রায় দিয়েছেন।

ওলেগ সোকোলভ সুপরিচিত ইতিহাসবিদ। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ওপর বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন তিনি। ২০০৩ সালে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা লিজিয়ন অব অনার পেয়েছিলেন ৬৩ বছর বয়সী এই ইতিহাসবিদ। সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটির অনেক শিক্ষকের চেয়েই ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ছিলেন ওলেগ সোকোলভ। কারণ, রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে তাঁর ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

আনাস্তাসিয়া ইয়েশচেঙ্কোর বয়স ২৪ বছর। প্রেমিক সোকোলভের চেয়ে তিনি ছিলেন ৩৯ বছরের ছোট। তবে বয়স তাঁদের প্রেমে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সর্বশেষ তিন বছর একসঙ্গেও থেকেছেন তাঁরা। নেপোলিয়নকে নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল সোকোলভের। তাঁকে নিয়ে নাটকও নির্মাণ করেছেন তিনি। সেই নাটকে ইয়েশচেঙ্কো অভিনয় করেছেন। করেছেন নেপোলিয়নের প্রথম স্ত্রী জোসেফিনের চরিত্র। এ ছাড়া সোকোলভ বেশ কিছু গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন, যার সহলেখক ছিলেন ইয়েশচেঙ্কো।

কিন্তু হঠাৎ ঝগড়ার মুহূর্তে সোকোলভ হত্যা করেন ইয়েশচেঙ্কোকে। আদালতে সোকোলভ বলেছেন, ইয়েশচেঙ্কো তাঁকে ছুরি নিয়ে হামলা করেছিলেন। তারপরই তিনি গুলি চালান।

তবে সোকোলভের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে ইয়েশচেঙ্কোর পরিবার।

আদালতে সোকোলভ স্বীকার করেছেন, তিনি গুলি করে ইয়েশচেঙ্কোকে হত্যা করেছেন। এ জন্য খরচ করেছিলেন চারটি বুলেট। কিন্তু এখানেই ক্ষান্ত হননি তিনি। রান্নার কাজে ব্যবহারের ছুরি দিয়ে ইয়েশচেঙ্কোর শরীর টুকরা টুকরা করেন। সেই মরদেহ গুম করে প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আদালতে সোকোলভ স্বীকার করেছেন, তিনি গুলি করে ইয়েশচেঙ্কোকে হত্যা করেছেন। এ জন্য খরচ করেছিলেন চারটি বুলেট। কিন্তু এখানেই ক্ষান্ত হননি তিনি। রান্নার কাজে ব্যবহারের ছুরি দিয়ে ইয়েশচেঙ্কোর শরীর টুকরা টুকরা করেন। সেই মরদেহ গুম করে প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ধরা পড়ে যান সোকোলভ। একটি নদীর পাড় থেকে তাঁকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁর ব্যাগে ইয়েশচেঙ্কোর হাতের অংশবিশেষ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ব্যাগে পিস্তলও ছিল। সোকোলভ সে সময় মাতাল ছিলেন। আটকের পরে তাঁর বাসা থেকে ইয়েশচেঙ্কোর শরীরের বাকি খণ্ডাংশগুলো পাওয়া যায়।

২০১৯ সালের নভেম্বরের ঘটনা এটি। এরপর থেকে কারাগারে ছিলেন সোকোলভ। করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে তাঁর বিচার পিছিয়ে যায়। অবশেষে গতকাল শুক্রবার সেই মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত।