কৃষক আন্দোলনের ভার নিলেন নারীরা

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ভারতে কৃষি বিক্ষোভের ভার হাতে তুলে নিলেন হাজার হাজার নারী। আজ দিল্লির সীমান্তেছবি: এএফপি

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার দিল্লির তিন সীমান্তে অবস্থানরত কৃষকদের যাবতীয় ভার হাতে তুলে নিলেন হাজার হাজার নারী। দুদিন ধরে ট্রাক-ট্রাক্টরে চেপে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম-উত্তর প্রদেশের কৃষক পরিবারের নারী সদস্যরা নারী দিবস পালনে রওনা হন সিংঘু, টিকরি ও গাজিপুর সীমান্তে। পুরুষ বিক্ষোভকারীদের অব্যাহতি দিয়ে অবস্থান মঞ্চসহ সীমান্তের সব ধরনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নারীরা নিজেরাই হাতে তুলে নেন। সীমান্তে দিনভর সে ছিল এক অন্যচিত্র।

সারা দিন ধরে তিন সীমান্তে কৃষি আইন প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে যা যা কিছু ঘটে, যেমন ভাষণ, স্লোগান, দেশাত্মবোধক গান, সংগ্রামের কাহিনি শোনানোর পাশাপাশি লঙ্গরখানা পরিচালনা, নিরাপত্তাসহ সব দায়িত্বই পালন করেন কৃষক পরিবারের নারীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও ছাত্র সংগঠনের নারী সদস্যরাও, যাঁরা কৃষকদের এই আন্দোলনকে শুরু থেকে সমর্থন করে আসছেন। দিল্লি সীমান্তে আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ আক্ষরিক অর্থেই হয়ে ওঠে অর্থবহ।

দিল্লি অবরোধের ১০০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কৃষকনেতারা আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা ঠিক করেছেন, সংযুক্ত কিষান মোর্চার (এসকেএম) পক্ষে নেতারা দলে দলে ছড়িয়ে পড়বেন সেই পাঁচ রাজ্যে, যেখানে বিধানসভার ভোট চলতি মাস থেকে শুরু হতে চলেছে। এসকেএমের নজরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালা। এই রাজ্যে বিজেপিকে হারাতে তাঁরা সফর শুরু করছেন বৃহস্পতিবার থেকে। কৃষকনেতা দর্শন পাল সিং বলেছেন, ‘আমাদের বক্তব্য একটাই, যে বিজেপি কৃষি আইন এনে কৃষকদের সর্বনাশের পথ প্রশস্ত করেছে, তাদের একটিও ভোট যেন কেউ না দেন।’ দর্শন পাল সিং বলেন, ‘আমরা কোনো বিশেষ দলের হয়ে ভোট চাইব না। শুধু বলব, বিজেপি যেন ভোট না পায়।’

কৃষকনেতারা এই মুহূর্তে বিশেষ জোর দিচ্ছেন হরিয়ানায়। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী মনোহররাল খাট্টারের সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। রাজ্যবাসীর জন্য এসকেএম নেতৃত্ব এক ভিডিও বার্তা তৈরি করেছে। তাতে শাসক বিজেপি ও জেজেপির বিধায়কদের ওপর জনগণকে চাপ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে তাঁরা ভোট দিতে বাধ্য হন। কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর নিং হুডা বলেছেন, প্রস্তাবের ভোটাভুটিতেই বোঝা যাবে কোন বিধায়ক কৃষকদের পক্ষে, কে বিপক্ষে। যাঁরা সরকারের পক্ষে ভোট দেবেন, রাজ্যের কৃষকদের চোখে তাঁরা বেইমান হয়ে থাকবেন।

হরিয়ানা বিধানসভার মোট আসন ৯০। দুটি আসন খালি। বিজেপি, জেজেপি ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে সরকারের পক্ষে রয়েছেন ৫০ বিধায়ক। রাজ্যে নির্বাচনের বাকি প্রায় চার বছর। কৃষকদের মন জিততে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী জেজেপি নেতা দুষ্মন্ত চৌটালা গত রোববার জানান, ১ এপ্রিল থেকে রাজ্যে মোট ৪০০ কেন্দ্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে গম কেনা হবে। বেচা-কেনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কৃষক তাঁর প্রাপ্য পেয়ে যাবেন। গত বছর গম কেনা শুরু হয়েছিল ১০ এপ্রিল থেকে।

ভারতে কৃষি বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার নারী। আজ দিল্লির সীমান্তে
ছবি: রয়টার্স

সংসদের অধিবেশন মুলতবি

সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন দুই কক্ষের অধিবেশনই দফায় দফায় মুলতবি হয়ে গেল। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে বসে রাজ্যসভার অধিবেশন।

কিন্তু সভা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই পেট্রল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানায় কংগ্রেসসহ বিরোধীরা। অবিলম্বে আলোচনার দাবি না মেনে রাজ্যসভা সারা দিনের মতো মুলতবি করে দেওয়া হয়। বিকেল ৪টায় বসে লোকসভার অধিবেশন। সেখানেও কংগ্রেসসহ বিরোধীদের সম্মিলিত দাবির মুখে বারবার সভা মুলতবি করে দেওয়া হয়। দেশের কোনো কোনো রাজ্যে লিটারপিছু পেট্রলের দাম ১০০ রুপিতে পৌঁছেছে। ডিজেল প্রায় ৯০ রুপির কাছাকাছি। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ৯০০ রুপি ছুঁতে চলেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, কোষাগার ঘাটতি কমাতে সরকার বারবার দাম বাড়িয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের ব্যারেলপ্রতি দাম যখন ৫০ রুপির নিচে ছিল, তখনো যা করেছে, এখনো তাই করছে ভ্রুক্ষেপহীনভাবে।