আপনি নেতা না কর্মী?
শুধু সংগঠন নয়, কর্মক্ষেত্রেও নেতা ও কর্মীর পার্থক্যটি খুব সহজেই চোখে পড়ে। নেতা বলতে চোখে ভেসে ওঠে এমন এক ব্যক্তির কথা, যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন পুরো কর্মপ্রক্রিয়া। তিনি একদিকে যেমন কর্মীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেন, অন্যদিকে কর্মীদের কথা শোনার দায়িত্বটিও তাঁর কাঁধেই বর্তায়। তিনি কর্মীদের স্বপ্ন দেখান ঠিকই, কিন্তু আগে স্বপ্নটি দেখতে হয় নেতাকেই। নেতৃত্বের কিছু গুণ আছে, যা দেখে সহজেই নেতা ও কর্মীকে আলাদা করা যায়। আসুন, জেনে নিই তেমনই কিছু বিষয়। হয়তো এ দিয়ে খুঁজে নিতে পারবেন নিজের পরিচয়ও।
১. কর্মীরা সব সময় শুধু গৎবাঁধা কাজই করে যান। সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ও প্রয়োগ তাঁদের দ্বারা হয় না। এমনকি প্রতিদিনের কাজের বাইরে কিছু করতেও অনীহা থাকে তাঁদের। অন্যদিকে নেতারা তাঁদের কাজের ক্ষেত্রটিকে অনেক বড় করে দেখেন। অফিস থেকে দেওয়া দায়িত্বকে তাঁরা ন্যূনতম ভেবে এর পরিসর বাড়িয়ে নেন। নিজেদের অতিরিক্ত কাজকেই আসল দায়িত্ব মনে করেন তাঁরা। যেখানেই সুযোগ মেলে, বাড়তি কিছু যোগ করার দায়িত্বটা নেতাদেরই থাকে।
২. আত্মবিশ্বাসই একজন কর্মীকে নেতা হিসেবে পরিচিতি দেয়। কর্মীরা অন্যের প্রতিভা ও কাজের স্বীকৃতিকে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে। আর নেতা সেটিকে সম্পদ হিসেবে নিয়ে তাঁর সঠিক ব্যবহার করতে চান। নেতারা মনে করেন, সব বিষয়েই উন্নতির সুযোগ আছে। নেতারা একটি দল হয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। অন্যের উন্নতিতে তাঁরা কখনোই ঈর্ষান্বিত হন না। বরং সেখান থেকে নিজের জন্য ইতিবাচক বিষয় খুঁজে নিতে ভালোবাসেন। আত্মবিশ্বাসই তাঁদের মূল অস্ত্র।
৩. আশাবাদী হওয়া নেতৃত্বের একটি গুণ। অনুগামী বা সাধারণ কর্মীরা সব কাজেই সীমাবদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে আগে ভাবেন। অন্যদিকে নেতারা খোঁজেন সম্ভাবনা। যখন পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকে, নেতারা তা অনুকূলে আনার চেষ্টায় থাকেন। সেই পরিশ্রমের পুরস্কারও মেলে হাতেনাতে।
৪. পরিবর্তন কেমনভাবে নিচ্ছেন, সেটি নির্ধারণ করে দেবে আপনার পরিচয়। নেতারা কখনো পরিবর্তনকে ভয় পান না। তাঁরা যেকোনো পরিবর্তনের ইতিবাচক দিকটি নিয়ে আগে ভাবেন। তবে তাঁর অনুগামীরা পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে পারেন না বলেই নেতার স্থান দখল করতে পারেন না। এক অর্থে চ্যালেঞ্জ নিতে কখনো পিছপা হন না নেতা।
৫. সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারলেই হতে পারবেন নেতা। সবার আগে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় নেতাদের, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হয় আগে থেকেই। কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকলেও, নেতার সেই সুযোগ নেই। ফলাফল ভালো হোক বা মন্দ—সিদ্ধান্ত নিতেই হবে তাঁকে।
৬. নেতা হতে হলে নিজের ভুলের পাশাপাশি কর্মীর ভুলের দায়িত্বও নিতে হবে। অফিসের উচ্চপদে আসীন অনেকেই আছেন, যাঁরা অধীনদের ভুলের দায়িত্ব নিতে চান না। এতে করে সেই উচ্চপদে থাকা ব্যক্তি বসগিরি ফলালেও ভালো নেতা হতে পারেন না। সত্যিকারের নেতা সব সময় যেকোনো ভুলের দায় নিজের কাঁধে নেন এবং দ্রুত ভুলটিকে সঠিক করার চেষ্টায় থাকেন।
৭. নেতাকে হতে হয় বিনয়ী। নিজেকে জাহির করেন না তিনি। তবে প্রয়োজনে ইচ্ছার বিরুদ্ধেও কাজ করতে হয় তাঁকে। কিন্তু কর্মীদের কখনো তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করান না প্রকৃত নেতা। কারণ তিনি জানেন, অসন্তুষ্ট কর্মীকে দিয়ে কখনো অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা যায় না।
৮. নেতৃত্বগুণ যাঁর মধ্যে থাকে, তাঁর শেখার কোনো শেষ নেই। নেতা কখনোই মনে করেন না যে তিনি সব জানেন। কোনো বিষয়ে কিছু জানা না থাকলে অবলীলায় তা মেনে নেন তাঁরা। এমনকি অধস্তনদের কাছ থেকে শিখতেও আপত্তি নেই তাঁর। অন্যদিকে সাধারণ অনুগামীরা নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করতেই ব্যস্ত থাকেন। নতুন করে কিছু শেখাকেও অযোগ্যতা মনে করেন তাঁরা।
সূত্র: হাফিংটন পোস্ট অবলম্বনে অর্ণব সান্যাল