আরও ৩১ দেশে যাচ্ছে কোভ্যাক্সের টিকা

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে বিমানবন্দরে কোভ্যাক্সের টিকার চালান নিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও শুল্ক কর্মকর্তারা
ছবি: রয়টার্স

আগামী সপ্তাহ নাগাদ আরও ৩১টি দেশে ১ কোটি ৪৪ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহ করবে কোভ্যাক্স। গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে মানুষকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, টিকা যে আশা জাগিয়েছে, তা যেন আত্মতুষ্টিতে ভুগে নষ্ট করা না হয়।

বৈশ্বিক টিকা সরবরাহের উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিশ্বের ২০টি দেশে ২ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। কোভ্যাক্সের লক্ষ্য হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলোতে এ সপ্তাহের মধ্যে টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হচ্ছে, যদি মানুষ মনে করে টিকা চলে আসার অর্থ করোনা সমস্যার সমাধান, তবে করোনা মহামারির আরও ঢেউ আসতে পারে।

‘টিকা চলে আসা বিষয়টি বেশ আশা জাগিয়েছে। কিন্তু এর কারণে করোনা মোকাবিলায় আমাদের যে উদ্যোগ নেওয়ার কথা, সেখানে থেকে হয়তো সরে যাচ্ছি। আমি এ বিষয়ে সত্যি উদ্বেগে রয়েছি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পরিচালক মাইকেল রায়ান

রায়ান সতর্ক করে বলেন, ‘যদি দেশগুলো যত্নবান না হয়, তবে করোনা মহামারির তৃতীয় ও চতুর্থ ঢেউ আঘাত হানতে পারে। তাই টিকা যে আশা জাগিয়েছে, তা করোনা মোকাবিলায় গৃহীত সুরক্ষা সরিয়ে নষ্ট করা উচিত নয়।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস কোভ্যাক্সের উদ্যোগে প্রথম পূর্ণ ডোজ সরবরাহের প্রশংসা করেছেন। তবে ধনী দেশগুলো টিকা দেওয়ার তাড়নায় অন্যদের পেছনে ফেলে রাখছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তেদরোস বলেন, আগামী সপ্তাহে আরও ৩১টি দেশে টিকা সরবরাহের মাধ্যমে মোট ৫১টি দেশে কোভ্যাক্সের টিকা পৌঁছাবে। এটা আশাপ্রদক অগ্রগতি। তারপরও কোভ্যাক্সের উদ্যোগে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তা তুলনামূলকভাবে সামান্যই।

তেদরোস আরও বলেন, কোভ্যাক্সের প্রথম রাউন্ডের টিকা মে মাসের শেষ পর্যন্ত সরবরাহ করা হচ্ছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২ থেকে ৩ শতাংশের কাছে টিকা পৌঁছানো হচ্ছে।

করোনা প্রতিরোধে দরিদ্র এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিনা মূল্যে টিকা সরবরাহ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে বৈশ্বিক উদ্যোগ হলো কোভ্যাক্স। এই উদ্যোগে প্রথম টিকা পেয়েছে আফ্রিকার দেশ ঘানা। কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে ১৯৮টি দেশ অংশ নিয়েছে। তবে সব দেশই প্রথম দফায় টিকা সরবরাহের আওতায় আসছে না।

গরিব দেশগুলো ধনীদের চেয়ে টিকাদানে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। টিকা মজুত করে রাখার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস গত সপ্তাহে ধনী দেশগুলোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বের সব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সুরক্ষা দিতে চাই।’

বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার তথ্য অনুযায়ী, এ সপ্তাহের শুরুর দিকে কোভ্যাক্স থেকে যে দেশগুলো টিকা পেয়েছে, তার বেশির ভাগ আফ্রিকার দেশ।

কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় জুনের আগে বাংলাদেশ পাবে ১ কোটি ৯ লাখ ৮ হাজার টিকা। এ ছাড়া বেশি টিকা পেতে যাওয়া অপর দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার, নাইজেরিয়া ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার, ইন্দোনেশিয়া ১ কোটি ১৭ লাখ ৪ হাজার ৮০০ ও ব্রাজিল ৯১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ টিকা পাবে।

তালিকায় এর পরে পাঁচটি দেশ রয়েছে। এর মধ্যে ইথিওপিয়া ৭৬ লাখ ২০ হাজার, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো ৫৯ লাখ ২৮ হাজার, মেক্সিকো ৫৫ লাখ ৩২ হাজার, মিসর ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ ও ভিয়েতনাম ৪১ লাখ ৭৬ হাজার টিকা পাবে।
ইরান, মিয়ানমার, কেনিয়া ও উগান্ডাও টিকা পাওয়ার তালিকায় রয়েছে। প্রতিটি দেশ ৩০ লাখের বেশি টিকা পাবে। মে মাসের শেষ দিকে ভারতও কোভ্যাক্সের টিকার বড় সরবরাহ পেতে পারে।

কোভ্যাক্স প্রথম দফায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ডের ২৩ কোটি ৭ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করবে। ফাইজার ও বায়োএনটেকের ১২ লাখ ডোজ টিকাও এর মধ্যে থাকবে। তবে ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকা বিশেষ তাপমাত্রায় সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন। দুই ধরনের টিকার ক্ষেত্রেই দুটি ডোজ নেওয়া প্রয়োজন।

ঘানা, আইভরি কোস্ট, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও কলম্বিয়া প্রথম দফায় কোভ্যাক্সের টিকা পেয়েছে। নাইজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, কম্বোডিয়াতেও কোভ্যাক্সের প্রথম দফার টিকা পৌঁছেছে। কঙ্গোতেও টিকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

নোভাভ্যাক্স কোভ্যাক্সকে ১১০ কোটি ডোজ টিকা দেবে। সানোফি-জিএসকে, জনসন অ্যান্ড জনসনের সঙ্গেও কোভ্যাক্সের চুক্তি রয়েছে।