এইউর সদস্যপদ হারাল সুদান

  • যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বব্যাংকও তাদের সহায়তা স্থগিত করেছে।

  • সেনাশাসনের বিরুদ্ধে গণ–অনাস্থায় শামিল হওয়ার ঘোষণা রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানির কর্মী ও চিকিৎসকদের।

সুদানে সেনা অভু্যত্থানের প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথ দখল করে বিক্ষোভ চলছে। প্রতিদিনই রাজধানী খার্তুমসহ বিভিন্ন রাজপথে নামছেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। গতকাল দেশটির আতবারা শহরে
ছবি: রয়টার্স

সেনা অভ্যুত্থানের জেরে সুদানের সদস্যপদ স্থগিত করেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)। বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর তারা সদস্যপদ ফিরে পাবে। গতকাল বুধবার ৫৫ সদস্য দেশের জোটটি এক টুইটে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

এদিকে সেনাদের কঠোর অবস্থান উপেক্ষা করে সামরিক শাসনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই রাজধানী খার্তুমসহ বিভিন্ন রাজপথে নামছেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। বাড়ছে সেনাদের বিরুদ্ধে গণ–অনাস্থাও। এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সস্ত্রীক তিনি নিজ বাসভবনে ফিরেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হামদককে মুক্তি দিয়েছে সেনাবাহিনী। প্রতিদিনই রাজধানী খার্তুমসহ বিভিন্ন শহরের রাজপথে নামছেন বিক্ষুব্ধ মানুষ।

এর আগের দিন সোমবার অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নিজের হাতে শাসনক্ষমতা নেন সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল–বুরহান। গ্রেপ্তার করা হয় প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে। এর জেরে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরব হয়। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অভ্যুত্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন সেনাপ্রধান আল–বুরহান। তিনি দাবি করেন, গৃহযুদ্ধ ঠেকাতেই সামরিক বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয়েছে। জেনারেল আল–বুরহান বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে যে বিপদ দেখেছি, তাতে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যেতে পারত। গৃহযুদ্ধ ঠেকাতেই ক্ষমতা নিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।’

তবে সেনা অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সোমবারই তাদের সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দেয়। বুধবার বিশ্বব্যাংকও একই পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে গতকাল বিক্ষোভকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী শনিবার ‘মার্চ অব মিলিয়নস’ নামে কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানির কর্মীরা ও চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগে শামিল হবেন।

রাজধানী খার্তুমসহ সুদানের বিভিন্ন শহরে চলমান অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে বেশির ভাগ দোকানপাট ও রাস্তাঘাট বন্ধ রয়েছে। দেশটিতে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবাও পুরো সচল হয়নি। সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সুদানে চলমান বিক্ষোভে সেনাদের গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।

২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ক্ষমতা ভাগাভাগি করে দেশ শাসন করছিল সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক সরকার। তবে গত সেপ্টেম্বরে বশিরের অনুসারীদের একটি অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ে।

এ মাসের শুরুর দিকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের বিরোধীরা রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় নামে। তারা সেনাবাহিনীকে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে আহ্বান জানায়। তবে গত সপ্তাহে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের রাজপথে নেমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সংহতি জানান হাজারো মানুষ। এতে অংশ নিয়েছিলেন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও। এ অবস্থায় ক্ষমতা নিল সেনাবাহিনী। তবে সুদানের অর্থনীতি ধুঁকতে থাকায় দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন কমতির দিকে ছিল।