একটি রূপকথার সমাপ্তি

প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়েও ছিল ভীষণ আলোচিত
প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়েও ছিল ভীষণ আলোচিত

ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন খুব একটা সুখের ছিল না ডায়ানার। ছেলেবেলায় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ দেখেছেন। তাই আজীবন স্বপ্ন ছিল, হবেন সুখী-সংসারী মানুষ। কিন্তু তা পূরণ হলো না। ১৯৯৫ সালে বিবিসি প্যানারোমাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ডায়ানা মেলে ধরেছিলেন তাঁর রাজবধূ-জীবনের নানা কথা। পাকিস্তান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্টিন বশির নিয়েছিলেন আলোচিত-সমালোচিত সাক্ষাৎকারটি। রাজপরিবারের অন্তঃপুর এই প্রথম সবার সামনে এল।

সাক্ষাৎকারে ডায়ানা বলেন, বিয়ের পর প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনাম হতে থাকলেন তিনি। হবু রাজার চেয়ে হবু রানির প্রতি মিডিয়ার এই অত্যধিক বাড়তি মনোযোগ চার্লসকে উৎকণ্ঠায় ফেলে দেয়।

প্রিন্সেস অব ওয়েলস হওয়ার চাপ ডায়ানাকে অস্থির করে তুলেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে ডায়ানা নিজের করণীয় ঠিক করে ফেলেন। তাদের কাছে যেতে শুরু করেন, সমাজ যাদের গ্রহণ করেনি। এই দাতব্য ও জনসেবামূলক কাজগুলো ডায়ানাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।

এরই মধ্যে ডায়ানা জেনে গিয়েছিলেন, চার্লস ভালোবাসেন বন্ধুপত্নী ক্যামিলা পার্কার বোলসকে। প্রিন্সেস অব ওয়েলসের নতুন দায়িত্ব ও স্বামী চার্লসের পরকীয়া—দুই মিলেই ডায়ানা ভুগতে শুরু করলেন ‘বুলিমিয়া’ (অবসাদে বেশি খাওয়া) রোগে। চাপ সইতে না পেরে কিছুদিনের জন্য আড়ালেও চলে গিয়েছিলেন তিনি।

১৯৯২ সালে এন্ড্রু মর্টনের বই ডায়ানা: হার ট্রু স্টোরি বেরোলে রাজপরিবার খুবই বিস্মিত হয়। এত দিন যা কিছু গোপন ছিল, হঠাৎ সবকিছু সামনে চলে এল।

মার্টিন বশিরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারটি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভিতও নাড়িয়ে দেয়। ডায়ানা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি ব্রিটেনের রানি হবেন, এমনটা কখনো ভাবেননি। বরং মানুষের হৃদয়ের রানি হতে চেয়েছেন। তিনি এও মনে করেন, রাজপরিবারের অনেকেই চাইবেন না যে তিনি রানি হন। আর তাঁর মনে হয় না, প্রিন্স চার্লস রাজা হওয়ার চাপ নিতে পারবেন।

সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয় ১৯৯৫ সালের ২০ নভেম্বর। এর কিছুদিন পরেই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানাকে চিঠি লিখে বিবাহ বিচ্ছেদের আদেশ দেন।

ডায়ানার মৃত্যুর ২০ বছর উপলক্ষে সম্প্রতি নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ডায়ানা, আওয়ার মাদার: হার লাইফ অ্যান্ড লিগেসিতে মাকে নিয়ে বলেছেন দুই ভাই। হ্যারি বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে শেষ ফোনালাপটি খুবই সংক্ষিপ্ত ছিল। এর জন্য বাকি জীবন আফসোস থাকবে আমার।’

আর উইলিয়াম বলেন, ‘স্কটল্যান্ডে রানির বালমোরাল প্রাসাদে অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে আমরা দুই ভাই খেলছিলাম। এ সময় মায়ের ফোন আসে। খেলব বলে সেদিন আমরা তাড়াতাড়ি বিদায় দেওয়ার জন্য মরিয়া ছিলাম।’