এবার রাশিয়ার লক্ষ্য ইজিয়াম

ইজিয়ামের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুদিন ধরে রুশ বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। দেশটির পূর্বাঞ্চলের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই চলছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পূর্বাঞ্চলের  ইজিয়াম শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপরতা শুরু করেছে রুশ বাহিনী। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে নতুন করে এই তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক টুইট বার্তায় উল্লেখ করা হয়, মূলত দোনেৎস্ক অঞ্চলের আরও ভেতরের দিকে ও সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের উত্তর দিক থেকে প্রবেশের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নিয়েছে রুশ বাহিনী। ইজিয়াম শহরের বাসিন্দার অনেকেই আটকে পড়েছেন সেখানে।

সেভেরোদোনেৎস্কের পরিপূর্ণ দখল নিতে বিমান হামলাও চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। এদিকে লুহানস্কের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, লুহানস্কও ব্যাপক হামলা চালাচ্ছেন রুশ সেনারা। একই সঙ্গে সেভেরোদোনেৎস্ক এলাকার সিরোতিন গ্রাম ও ছোট শহর বরিভস্ক দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ সিনিহুবোভ বলেন, রুশ সেনারা খারকিভের শহরতলি এলাকায় রকেট হামলা চালিয়েছেন। এতে পৌর ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে রাশিয়াও উল্টো হামলার অভিযোগ এনেছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। দেশটির বার্তা সংস্থা আরআইএর খবরে বলা হয়, দোনেৎস্কে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এই হামলার কারণে একটি খনির বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এতে ওই কয়লাখনিতে ৭৭ জন খনিশ্রমিক আটকা পড়েছেন। তবে এই অভিযোগ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি কিয়েভ।

‘দুই হাজার বিদেশি যোদ্ধা নিহত’

এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গত শুক্রবার নতুন তথ্য দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনে চলমান সংঘাতে ৬৪টি দেশ থেকে আসা ভাড়াটে যোদ্ধা ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় দুই হাজার বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেঙ্কভ বলেন, ‘১৭ জুন নাগাদ ৬৪টি দেশ থেকে আসা ভাড়াটে যোদ্ধা ও অস্ত্র পরিচালনা বিশেষজ্ঞের তালিকা আমাদের কাছে আছে। বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে এ ধরনের ৬ হাজার ৯৫৬ জন সেনা পৌঁছেছেন।’

ইগর কোনাশেঙ্কভ বলেন, এই সেনাদের ১ হাজার ৯৫৬ জন ইতিমধ্যে নিহত হয়েছেন। ১ হাজার ৭৭৯ জন ইউক্রেন ছেড়ে গেছেন। এখন ৩ হাজার ২২১ জন ভাড়াটে যোদ্ধা জীবিত আছেন।

ইইউর সদস্যপদ পেতে অগ্রগতি

এই যখন পরিস্থিতি, তখন ইউক্রেনকে সদস্যপদ দিতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই ইউনিয়নের সদস্যপদ দেওয়ার আগে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো দেশকে আগে সদস্যপদ প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

ইউক্রেনকে গত শুক্রবার সেই প্রার্থিতার মর্যাদা দিতে সুপারিশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। প্রার্থিতার মর্যাদার সুপারিশ পেতে যেকোনো দেশের বেশ কয়েক বছর সময় লেগে যায়। তবে ইউক্রেন অল্প সময়েই তা পেয়ে গেল। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ হামলার শুরুর চার দিন পর ইইউর সদস্যপদ পেতে আবেদন করেছিল ইউক্রেন। বছর না ঘুরতেই ইইউর সদস্যপদ প্রার্থিতার মর্যাদা পেতে যাচ্ছে দেশটি। ২৩ ও ২৪ জুন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ইইউর সম্মেলনে।

এদিকে ইউক্রেনীয় নিরাপত্তাবাহিনীগুলোর জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত শুক্রবার কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কিয়েভ সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এ প্রস্তাব দেন তিনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এটি তাঁর দ্বিতীয়বারের মতো কিয়েভ সফর। বরিসকে ‘বড় বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাগত জানান জেলেনস্কি।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত শুক্রবার ইউক্রেনে অভিযান শেষে দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত এক অর্থনৈতিক ফোরামে এসব কথা বলেন তিনি। পুতিনের আজকের বক্তব্য টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। সেখানে এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে চলমান অর্থনৈতিক–সংকট নিয়ে কথা বলেন তিনি। পুতিনের ভাষ্য, নানা দেশে মূল্যস্ফীতির জন্য ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান দায়ী নয়। পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের ভুলগুলো ঢাকতেই দায় মস্কোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে।