করোনার কোন টিকার দাম কেমন

করোনার টিকা পরীক্ষা করছেন গবেষকেরাপ্রতীকী ছবি : রয়টার্স

করোনাভাইরাসের (কোভিড–১৯) প্রকোপ ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে টিকা তৈরির তোড়জোড় চলছে। সম্প্রতি বেশ কটি টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি করোনা টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছে। সেই সঙ্গে টিকাগুলোর সম্ভাব্য বাজারদর সম্পর্কেও ধারণা মিলছে। বলা হচ্ছে, ডিসেম্বরেই টিকা দিতে শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য।
এবার এমনই কয়েকটি সম্ভাব্য করোনা টিকার দাম কত হতে পারে, তা জেনে নেওয়া যাক:


মডার্না
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি মডার্না ইনকরপোরেশনের দাবি, তাদের তৈরি টিকা করোনা ঠেকাতে ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকর। তৃতীয় পর্যায়ের ফলের ওপর ভিত্তি করে পাওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি এমন দাবি করেছে মডার্না।
মডার্নার আশা, তাদের টিকা রেফ্রিজারেটরে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। আর মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এটা সংরক্ষণ করা যাবে ৬ মাস।

সম্প্রতি মডার্না দাবি করে, তাদের টিকা ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকর।
ফাইল ছবি: রয়টার্স


ক্রয়াদেশের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে সরকারের কাছে প্রতি ডোজ করোনা টিকার দাম ২৫ থেকে ৩৭ ডলার করে রাখবে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি মডার্না। মডার্নার প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ব্যানসেল জার্মানির একটি সাপ্তাহিককে এ কথা জানিয়েছেন। তবে গত আগস্ট মাসে মডার্না জানিয়েছিল, টিকার প্রতিটি ডোজের দাম তারা রাখতে পারে ৩২ থেকে ৩৭ ডলার। তবে উৎপাদন বেশি হলে দাম কমে আসতে পারে।

ফাইজার-বায়োএনটেক
প্রথমে নতুন টিকা দিয়ে কোভিড-১৯ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষার দাবি করেছিল ফাইজার-বায়োএনটেক। পরে মডার্নার টিকার কার্যকারিতার ফল প্রকাশের পর আরেক বক্তব্যে ফাইজার কার্যকারিতার নতুন তথ্য জানায়। ফাইজার দাবি করে, তাদের টিকা করোনা ঠেকাতে প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকার। তবে তাদের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পরিবহন ও সংরক্ষণ করতে হবে।

ফাইজার ও বায়োএনটেকের করোনার টিকা অনুমোদন পেতে পারে শিগগিরই
ফাইল ছবি: রয়টার্স


ফাইজার-বায়োএনটেক জানিয়েছে, তাদের তৈরি টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়তে পারে ২০ ডলার করে। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি বলছে, সেটি সত্যি হলে মডার্নার চেয়ে ফাইজারের টিকার দাম কম হতে পারে।


স্পুতনিক ফাইভ
ফাইজারের করোনা টিকার কার্যকারিতাবিষয়ক ঘোষণার পরপরই রাশিয়া ঘোষণা দিয়ে জানায় যে তাদের তৈরি স্পুতনিক ফাইভ টিকা ৯২ শতাংশ কার্যকর। তবে রাশিয়ার করোনা টিকার কার্যকারিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব সন্দিহান।
স্পুতনিক ফাইভ টিকার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে গতকাল রোববার বলা হয়েছে, মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও মডার্নার চেয়ে রাশিয়ার করোনা টিকার প্রতি ডোজের দাম অনেক কম পড়বে।

স্পুতনিক ফাইভ টিকা তৈরি করেছে গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট
ফাইল ছবি: রয়টার্স

টুইটার অ্যাকাউন্টে বলা হয়, ফাইজার ও মডার্না—এই দুটি টিকারই দুটি করে ডোজ নিতে হবে। সে হিসাবে ফাইজারের টিকা নিতে খরচ হবে ৩৯ মার্কিন ডলারের মতো। মডার্নার টিকা নিতে খরচ হবে ৫০ থেকে ৭০ ডলারের বেশি। স্পুতনিক ফাইভ টিকারও দুটি ডোজ নিতে হবে। কিন্তু ফাইজার ও মডার্নার চেয়ে এর দাম অনেক কম পড়বে। তবে কত কম পড়বে, তা এখনো জানানো হয়নি।


অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। সদ্যই এ খবর পাওয়া গেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও মডার্না তাদের তৈরি টিকা ৯৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে বলে দাবি করে। তবে ওই দুই টিকার চেয়ে অক্সফোর্ডের টিকার দাম বেশ কম। আর এর সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও জটিলতা কম।

করোনার টিকা পরীক্ষা করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা
ফাইল ছবি : রয়টার্স


‘দ্য ল্যানসেট’-এ অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের দেহেও এই টিকার রোগ প্রতিরোধসংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া ভালো। গবেষকেরা বলছেন, বয়স্ক মানুষের দেহে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাসের টিকার প্রতিক্রিয়া ‘উৎসাহব্যঞ্জক’।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বরাত দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, তাদের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়তে পারে ৩ থেকে ৪ ডলার। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, অক্সফোর্ডের টিকা অলাভজনকভাবে বাজারজাত করা হবে এবং একই সঙ্গে বিশ্বের সব প্রান্তে প্রয়োজন অনুযায়ী পৌঁছে দেওয়া হবে এ টিকা।


ভারতের টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ডের টিকা উৎপাদন করবে বলে জানিয়েছে। সেরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালা গত বৃহস্পতিবার এক সম্মেলনে বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ভারতে অক্সফোর্ডের টিকা পাওয়া যেতে পারে। তবে তখন সেই টিকা বরাদ্দ থাকবে শুধু স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য। আর আগামী এপ্রিলের মধ্যে ভারতের সাধারণ জনগণের জন্য অক্সফোর্ডের টিকা সহজলভ্য হতে পারে। ওই টিকার দুই ডোজের দাম পড়বে সর্বোচ্চ ১ হাজার রুপি।

জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

জনসন অ্যান্ড জনসন
এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে এখনো স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে টিকাটি এক ডোজের হওয়ার কথা। সেদিক থেকে অন্যান্য টিকার তুলনায় জনসনের টিকা একটু আলাদা। এরই মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ৬০ হাজার মানুষের ওপর এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে।
সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির খবরে জানা গেছে, জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা স্বাভাবিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যাবে। প্রতি ডোজের দাম পড়তে পারে ১০ ডলার করে। এরই মধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো দেশ আগাম ফরমাশ দিয়েছে।