করোনার টিকার ডোজ বাড়াতে কতই না কসরত

ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার শিশি থেকে তরল বের করা হচ্ছে। ১০ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে একটি টিকাকেন্দ্রে
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকার ডোজের সংখ্যা বাড়াতে ভিন্ন এক পদক্ষেপ নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। টিকা প্রয়োগের শিশিতে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট তরলটুকুও বিশেষ সিরিঞ্জ দিয়ে বের করে নেওয়া হচ্ছে। ফলে আরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিকার উৎপাদকেরা।

করোনা মহামারির শুরু থেকে বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এখন সেখানে ফাইজার-বায়োএনটের এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া জনসংখ্যার তুলনায় সীমিতসংখ্যক টিকা হাতে পেয়েছে। আর তাই বেশ কিছু হাসপাতাল অভিনব ওই কৌশল নিয়েছে।

রাজধানী সিউলের ন্যাশনাল মেডিকেল সেন্টারের ইন্ট্রাভেনাস থেরাপি বিশেষজ্ঞ কিম ইউন-সুক বলেন, এ কৌশলের কারণে তাঁরা অতিরিক্ত মানুষকে টিকা দিতে পারছেন। যেমন ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকার একটি শিশি থেকে ছয়জনকে টিকা দেওয়া যায়। কিন্তু গত মঙ্গলবার তাঁরা ফাইজারের ৯০টি শিশি থেকে ৬২৯ জনকে টিকা দিয়েছেন। ফাইজার-বায়োএনটেকের নির্দেশনা মোতাবেক এই ৯০ শিশি থেকে ৫৪০ জনকে টিকা দেওয়া যেত। বিশেষ সিরিঞ্জ দিয়ে শিশিতে থাকা অবশিষ্ট টিকা শুষে নেওয়ার কারণেই অতিরিক্ত ওই মানুষগুলোকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

এই বিশেষ কায়দায় টিকা দিতে দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কিম ইউন-সুক জানান, তাঁদের হাসপাতালে আপাতত প্রতি পালায় একজন করে প্রশিক্ষিত নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। এ নার্সের কাজ হলো টিকার শিশিতে থাকা অবশিষ্ট তরলটুকু বিশেষ সিরিঞ্জ দিয়ে বের করে আনা।

তবে এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে টিকা উৎপাদকেরা। তারা মূলত টিকার ডোজের ভিত্তিতেই মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। অর্থাৎ ফাইজার-বায়োএনটেক তাদের টিকার শিশিতে থাকা ছয় ডোজের ভিত্তিতেই মূল্য নির্ধারণ করেছে। এদিকে কিছু বিশেষজ্ঞ এভাবে টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

অবশ্য সম্মুখসারির নার্সদের প্রতি এক পরামর্শে দক্ষিণ কোরিয়ার রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (কেডিসিএ) বলেছে, শিশি থেকে টিকার সবটুকু তরল বের করে নেওয়া হবে কি না, তা টিকা সরবরাহকারীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। এর জন্য নতুন কোনো নীতিমালা দেওয়া হবে না। কারণ, এতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চাপ বেড়ে যেতে পারে।

কেডিসিএ জানায়, মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪১ জনকে করোনার টিকার প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত দেশটিতে ৯৩ হাজার ৭৩৩ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৬৪৮ জন।