করোনার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শিখছে ইউরোপ

করোনাভাইরাস ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করছেন ফরাসিরা
এএফপির ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিরুদ্ধে লড়াই করবে ফ্রান্স। মহামারি শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর বার্তা ছিল এমনই। এখন তিনি বলছেন, ‘কীভাবে এই ভাইরাসের সঙ্গে বাস করতে হয়, শিখে নিন।’

পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ বা স্নায়ুযুদ্ধ, যা-ই বলেন, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই সব সময় সহাবস্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এখন করোনাকাল নিয়ে যুদ্ধ। প্রথম দফার সংক্রমণের ধকল কিছুটা সামলালেও সামনে ঝুঁকিপূর্ণ শরৎকাল। ফলে দ্বিতীয় দফার আঘাতের শঙ্কা দরজায় কড়া নাড়ছে। এই ভাইরাসকে চিরতরে মুছে ফেলার আশা ছেড়ে দিচ্ছেন ইউরোপীয়রা; কয়েক সপ্তাহের মধ্যে টিকা হাতে পাওয়ার আশাও নেই। এর মধ্যেই তাঁরা কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে শুরু করেছেন। যে ভাইরাস ইতিমধ্যে ইউরোপের ২ লাখ ১৫ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে, তার সঙ্গেই যতটা মানিয়ে নিয়ে বাস করা যায়, সেই প্রচেষ্টার অংশ এটা।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয়রা এই মহামারির প্রথম ধাপ থেকে নেওয়া বিভিন্ন শিক্ষা এখন কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে মাস্ক পরা, ব্যবহারিক অর্থেই সামাজিক দূরত্ব রাখা, আক্রান্ত ব্যক্তির সংম্পর্শে আসা ব্যক্তিকে শনাক্ত করা (কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং) ওপর গুরুত্ব দেওয়া। এসব পদক্ষেপ মাঝেমধ্যে দৃঢ় করা হচ্ছে, কখনো ঢিল দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই—দেশজুড়ে লকডাউন দেওয়ার কারণে চলতি বছরের শুরুতে মহাদেশজুড়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি এড়ানো।

এই ভাইরাস থামিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এ কথা বলছেন এমানুয়েল আন্দ্রে। তিনি বেলজিয়ামের শীর্ষস্থানীয় ভাইরাসবিদ। দেশটির সরকারের কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের মুখপাত্র ছিলেন তিনি। এমানুয়েল বলেন, ‘এটা এখন ভারসাম্য বজায় রাখার একটা বিষয়। আর সেটা করতে আমাদের হাতে অস্ত্র আছে যৎসামান্য। মানুষজন ক্লান্ত। তারা আর যুদ্ধে নামতে চায় না।’

করোনাভাইরাস ঠেকাতে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। মিলান, ইতালি
রয়টার্সের ফাইল ছবি

জাতীয়ভাবে লকডাউনে যাওয়া ইউরোপের প্রথম দেশ ইতালি। তারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামলানোর কাজে এখন যথেষ্ট পারদর্শী। এই দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরানজাও মানছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শূন্যে নামবে, এটা ভাবা অবান্তর।

লা স্তাম্পা পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখন ভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান পর্যায়ে আছি। নতুন করে লকডাউনের পথে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
সম্প্রতি বিশেষ করে ফ্রান্স ও স্পেনে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। গত সপ্তাহে ফ্রান্সে এক দিনেই ১০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। দিনে করোনায় মৃত্যুর ঘটনা গড়ে ৩০, একটা সময়ে যা উঠেছিল ১ হাজারের বেশি। করোনা যখন ব্যাপকভাবে হানা দিয়েছিল, তখন পরীক্ষার কিট সংকটে পড়েছিল ফ্রান্স। এখন তারা সপ্তাহে ১০ লাখের বেশি পরীক্ষা করছে। জার্মানিতেও সংক্রমণ বাড়ছে; বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ বেশি। দেশটিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে; দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অবশ্য কার্নিভ্যাল বা বড়দিনের মতো দিবসগুলোর আনুষ্ঠানিকতা সংকুচিত করা বা বাতিল করার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। অন্তত অক্টোবর পর্যন্ত মাঠে দর্শক ছাড়াই খেলতে হচ্ছে ফুটবল।

ইতালিতে কোথাও কোথাও নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে। তা রুখতে পুরো গ্রাম, হাসপাতাল, এমনকি অভিবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র অবরুদ্ধ করছে সরকার। দেশটির সরকার করোনা রুখতে জোর দিয়েছে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে। ফ্রান্সও এ ক্ষেত্র বেশ সাফল্য দেখাচ্ছে। দেশটি সামাজিক নিরাপত্তা পদ্ধতি নামের এক কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মাধ্যমে মানবদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সংম্পর্শে আসা ব্যক্তিকে শনাক্ত করা (ম্যানুয়াল কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং) করা হচ্ছে।

উত্তর ফ্রান্সের শহর মেৎজ থেকে প্যারিসে বেড়াতে এসেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা জে রোম কারি রে। তিনি বলেন, ‘এটা ভালো লক্ষণ যে মানুষজন এখন মাস্ক পরছে। শুরুতে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। এখন নিজেদের মানিয়ে নিয়েছি। আমরা সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি।’