কৃষি আইন স্থগিতই করলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে যোগ দিতে দিল্লির পথে পাঞ্জাবের কয়েকজন কৃষক। ১২ জানুয়ারি পাঞ্জাবের অমৃতসরে
ছবি: এএফপি

কেন্দ্রীয় সরকারের আপত্তি অগ্রাহ্য করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত তিন কৃষি আইনের প্রয়োগ স্থগিত করে দিলেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। এর পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের বেঞ্চ একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ওই কমিটি তার রিপোর্ট সর্বোচ্চ আদালতের কাছে পেশ করবে।

কৃষক সংগঠনের নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা ওই কমিটিতে হাজিরা দেবেন না। আইন প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁরা অটল।

আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের তিন মন্ত্রী গত দেড় মাসে আট দফা বৈঠক করেছেন। কিন্তু সমাধান হয়নি। সরকার একাধিক সংশোধনে প্রস্তুত থাকার কথা জানালেও কৃষকনেতারা আইন বাতিল ছাড়া অন্য কোনো সমাধানে নারাজ। সরকারও আইন বাতিলে রাজি নয়। এই অচলাবস্থা অবসানে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করেন। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি এ এস বোপান্না ও বিচারপতি ভি রামসুব্রামানিয়ামের বেঞ্চ গত সোমবার আইন স্থগিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কেন্দ্রের আপত্তি উপেক্ষা করে আজ মঙ্গলবার তাঁরা সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট চারজনের একটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছেন। তাতে রয়েছেন ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের নেতা ভূপিন্দর সিং মান, মহারাষ্ট্রের শেতকারী সংগঠনের নেতা অনিল ঘানওয়াত, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রমোদ কুমার যোশি এবং কৃষি বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটি। চারজনই কৃষি সংস্কারের পক্ষে নানা সময়ে মত প্রকাশ করেছেন। এই কমিটির চেয়ারম্যান হতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি আর এম লোধাকে। কিন্তু এনডিটিভি জানিয়েছে, তিনি দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছেন।

কৃষক সংগঠনের আইনজীবী আদালতে জানান, কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তে তাঁদের সায় নেই। তাঁদের দাবি একটাই, তিন আইন প্রত্যাহার করা হোক। কোনো সংশোধন নয়, কোনো কমিটির সামনে হাজিরাও নয়। ‘কৃষকদের স্বার্থহানিকর ও করপোরেটদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে’ আনা তিন আইন সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। কৃষকেরা এ কথাও বলেন, প্রধানমন্ত্রী একবারের জন্যও তাঁদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি। বিচারপতিরা এই যুক্তি শুনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই মামলায় কোনো পক্ষ নন। এটা রাজনীতি নয়। রাজনীতি ও বিচারব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আছে। তাঁরা চান সবার সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, তিন আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতেই এই কমিটি গঠন। এই আইন ও আন্দোলনের যে প্রভাব পড়েছে, তাতে তাঁরা উদ্বিগ্ন। কৃষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অনির্দিষ্টকাল ধরে আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন। যাঁরা সমাধানে আগ্রহী, তাঁরা কমিটির কাছে যাবেন। কমিটি কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। তারা সব পক্ষের অভিমত শুনে আদালতকে রিপোর্ট দেবে।’

এদিকে আদালতে অপর এক আবেদনে বলা হয়েছে, এই আন্দোলনে খলিস্তানিদের মদদ রয়েছে। এতে সমর্থন জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল। সর্বোচ্চ আদালত আবেদনকারীকে বলেছেন, কিসের ভিত্তিতে তাঁদের এই দাবি, আগামীকাল বুধবারের মধ্যে তা হলফনামায় জানাতে হবে।