কৃষ্ণগহ্বরের আরও কাছে পৃথিবী

কৃষ্ণগহ্বর হলো মহাবিশ্বের এমন একটি এলাকা, যেখানে প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বল বিরাজমান। এ বল এতটাই শক্তিশালী যে ওই এলাকা থেকে আলোকরশ্মিও বের হতে পারে না। বিজ্ঞানীদের মতে, বিপুল ভরের কোনো নক্ষত্রের মৃত্যুর পর তা কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়।

শিল্পীর চোখে কৃষ্ণগহ্বরছবি: নাসা
আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে সর্বশেষ ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ বছর আগে। ওই ঘটনার ৬ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।

সূর্যের পরিবারের অন্যতম সদস্য পৃথিবী। আর সূর্যসহ তার পুরো পরিবার ভেসে বেড়াচ্ছে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা নামের একটি ছায়াপথে। এ ছায়াপথের ঠিক মাঝখানে রয়েছে বিশাল এক কৃষ্ণগহ্বর। ওই কৃষ্ণগহ্বর থেকে পৃথিবীর দূরত্ব এত দিন যা জানা ছিল, তা ঠিক নয় বলে নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পৃথিবী ওই কৃষ্ণগহ্বরের আরও কাছে।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, নতুন গবেষণাটি প্রকাশ করেছে জাপান থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী পাবলিকেশনস অব দ্য অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অব জাপান। গবেষণাটি করেছেন জাপানের মহাকাশ প্রকল্প ভিএলবিআই এক্সপ্লোরেশন অব রেডিও অ্যাস্ট্রমেট্রির (ভিইআরএ) বিজ্ঞানীরা। ২০০০ সাল থেকে এ প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা আকাশগঙ্গায় বিভিন্ন বস্তুর বেগ ও বিশেষ কাঠামোর ত্রিমাত্রিক ছবি দাঁড় করানোর কাজ করে যাচ্ছেন।
এ ক্ষেত্রে আকাশের বিশদ ছবি পেতে দূরবীক্ষণযন্ত্রের মাধ্যমে আলোর ব্যতিচার, রেডিও বা শব্দতরঙ্গ কাজে লাগানো হয়েছে। এ জন্য জাপানজুড়ে বসানো হয়েছে রেডিও টেলিস্কোপ। এতে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণক্ষমতা এতটাই বেড়েছে যে চাঁদের বুকে একটি কয়েন পড়ে থাকলেও তা তাঁরা শনাক্ত করতে পারবেন।

গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য–উপাত্ত কাজে লাগিয়ে ভিইআরএ প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা আকাশগঙ্গার বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান ও বেগ নির্ণয় করেছেন। তাঁরা আকাশগঙ্গার কেন্দ্রের অবস্থানও শনাক্ত করেছেন। ঠিক এ কেন্দ্রেই রয়েছে বিশাল কৃষ্ণগহ্বর স্যাগিটেরিয়াস–এ স্টার।

নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, স্যাগিটেরিয়াস-এ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব আসলে ২৫ হাজার ৮০০ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ প্রচলিত ধারণার চেয়ে পৃথিবী ওই কৃষ্ণগহ্বরের আরও দুই হাজার আলোকবর্ষ কাছে অবস্থান করছে।

কৃষ্ণগহ্বর হলো মহাবিশ্বের এমন একটি এলাকা, যেখানে প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বল বিরাজমান। এ বল এতটাই শক্তিশালী যে ওই এলাকা থেকে আলোকরশ্মিও বের হতে পারে না। বিজ্ঞানীদের মতে, বিপুল ভরের কোনো নক্ষত্রের মৃত্যুর পর তা কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়। এরপর ক্রমেই আশপাশের অন্যান্য বস্তু গিলে নিয়ে এবং তাদের ভর নিজের মধ্যে ধারণ করে কৃষ্ণগহ্বরটি বড় হতে থাকে। আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে যে কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে, তা সূর্যের চেয়ে ৪২ লাখ গুণ বড়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বেশির ভাগ ছায়াপথেরই কেন্দ্রে এমন বিশাল আকৃতির কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে।

বিশ্বজুড়ে মহাকাশবিজ্ঞানীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন ১৯৮৫ সাল থেকে বলে আসছে, আকাশগঙ্গার কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বর স্যাগিটেরিয়াস–এ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ২৭ হাজার ৭০০ আলোকবর্ষ। শূন্য মাধ্যমে আলো প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। এভাবে এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তা–ই এক আলোকবর্ষ।

নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, স্যাগিটেরিয়াস–এ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব আসলে ২৫ হাজার ৮০০ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ প্রচলিত ধারণার চেয়ে পৃথিবী ওই কৃষ্ণগহ্বরের আরও দুই হাজার আলোকবর্ষ কাছে অবস্থান করছে।

এ গবেষণায় আরও চমকপ্রদ তথ্য জানা গেছে। আকাশগঙ্গার কেন্দ্রের চারপাশ ঘিরে পৃথিবীর গতি এত দিন জানা ছিল প্রতি সেকেন্ডে ২২০ কিলোমিটার। কিন্তু নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, পৃথিবীর এ গতি আসলে প্রতি সেকেন্ডে ২২৭ কিলোমিটার।
বিজ্ঞানীদের দাবি, স্যাগিটেরিয়াস-এ আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে সর্বশেষ ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ বছর আগে। ওই ঘটনার ৬ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়। স্যাগিটেরিয়াস-এ–এর কারণে ওই বিস্ফোরণের পর আকাশগঙ্গার কেন্দ্র থেকে দুই দিকে মেঘের মতো চোঙাকৃতির দুটি পারমাণবিক রেখা ২ লাখ আলোকবর্ষ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ওই বিস্ফোরণের পর কৃষ্ণগহ্বরটির আচরণ যেন অনেকটা ‘ঘুমন্ত ড্রাগনের’ মতো।

তবে গত বছর স্যাগিটেরিয়াস-এ থেকে অদ্ভুত ঝলক ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি লক্ষ করেছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও এর কোনো ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত দিতে পারেননি তাঁরা।
ভিইআরএ প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা এখন আকাশগঙ্গার আরও অনেক বস্তুর কাঠামো ও গতি পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ইস্ট এশিয়ান ভিএলবিআই নেটওয়ার্কের (ইএভিএন) তথ্য ব্যবহার করতে চাইছেন। ইএভিএন প্রকল্প জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে স্থাপিত দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলো থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করে।