কোক কি ধরে রেখেছে ১২৭ বছরের স্বাদ?

বিশ্বখ্যাত কোমল পানীয় কোকা-কোলা বানানোর ফর্মুলা ১২৭ বছর ধরে অজানা। কোকা-কোলা কর্তৃপক্ষের দাবি, আদি প্রণালি অনুযায়ীই তারা এই পানীয় বানিয়ে যাচ্ছে। তবে নানা সময়ে নানাজন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দাবি করেছেন, কোকের স্বাদে পরিবর্তন এসেছে। আর সেটা হয়েছে উপাদানে পরিবর্তন আনার কারণে।
সম্প্রতি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা এপি। ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আটলান্টায় স্থাপিত ওয়ার্ল্ড অব কোকা-কোলা মিউজিয়ামে রাখা রহস্যঘেরা কোক প্রণালির কথা। কোকা-কোলার রহস্যঘেরা নানা তথ্য জানতে গত এক বছরে প্রায় ১০ লাখ দর্শনার্থী এই জাদুঘর পরিদর্শনে গেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২৭ বছরের পুরোনো ফর্মুলার কাগজটি কড়া নিরাপত্তায় ইস্পাতের ভোল্টে রাখা হয়েছে। কেউ লুকিয়ে কৌশলটি জানার চেষ্টা করছে কি না, তা তদারকির জন্য আছে বেশ কিছু ক্যামেরা। তবে এগুলো খানিকটা মানুষকে দেখানোর জন্য বলে মন্তব্য করেছেন এক নিরাপত্তাকর্মী।
কোকের এই রহস্যঘেরা অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান যখন তাদের পানীয় নিয়ে ক্রেতার মন জোগাতে বাজারে এল, তখন ক্রেতা ধরে রাখার কৌশল হিসেবেই এক ধরনের ব্র্যান্ডমূল্য তৈরি করতে কোকা-কোলা কোম্পানি এই রহস্যঘেরা অবস্থার সৃষ্টি করল।
ক্রাফট ফুডসের সাবেক গবেষণা ও উন্নয়ন প্রধান জন রফ মনে করেন, ব্যাপক হারে পণ্য উত্পাদন করতে গেলে নতুন নতুন অনেক কিছুই মূল রেসিপিতে যোগ করা হয়।
খাদ্যবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা ইনস্টিটিউট অব ফুড টেকনোলজিস্টসের সভাপতি মনে করেন, কোক বানানোর গোপন কৌশলটি এখন অনেকটা কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। তবে কোকের মতো বড় ব্র্যান্ডের ফর্মুলা অপরিবর্তিত থাকলে সেটি সত্যিই বেশ ভালো হবে।
কোকা-কোলার সাবেক নির্বাহীদের সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে ফ্রেডারিক অ্যালেন ১৯৯৪ সালে ‘সিক্রেট ফর্মুলা’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়, সময়ের সঙ্গে সংগতি রেখে কোক বানানোর প্রণালিতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, এক সময় কোকে ক্যাফেইনের ব্যবহার এতটাই বাড়িয়ে দেওয়া হলো যে, সাধারণ মাত্রার চেয়ে এটি চার গুণ বেশি হয়েছিল। ব্যবহার করা হয়েছিল উল্লেখ করার মতো কোকেইন, যে কারণে অন্যতম মূল উপাদান কোকাই লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিল।
তবে এ ব্যাপারে পাঠানো এক ই-মেইল বিবৃতিতে কোকা-কোলা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ১৮৮৬ সালে কোকের ফর্মুলা আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে এটি একই রকম আছে। এই পানীয়তে কখনো কোকেইন ব্যবহার করার কথা তাঁরা অস্বীকার করেছেন।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত বিশেষ কর্মকর্তা টেরি পারহেম বলেন, চাকরিজীবনে তিনি কোকা-কোলায় মাত্রাতিরিক্ত কোকেইন ব্যবহারের অভিযোগের ব্যাপারে শুনেছেন।
আশির দশকে কোকা-কোলায় সস্তা মিষ্টি ব্যবহারের বিষয়টি খুব আলোচিত হয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, মিষ্টি বা ক্যারামেলের কারণে কোকের মূল ফর্মুলা বা স্বাদে কোনো পরিবর্তন আসে না।
মূল ফর্মুলায় কোক বানানো হয়, নাকি পরিবর্তিত ফর্মুলায় বানানো হয়; সে রহস্য জানতে আজও উন্মুখ বহু মানুষ। আর সেই কৌতূহল থেকেই তাঁরা ওয়ার্ল্ড অব কোকা-কোলা মিউজিয়ামে যান। এক দর্শনার্থীর ভাষ্য, ফর্মুলাটা দেখতে পেলেও কেউ বুঝতে পারবে বলে মনে হয় না। আরেকজন বললেন, এটি সর্বকালের সর্বসেরা রহস্য।