ক্রাইস্টচার্চে বন্দুকের দোকান খোলা নিয়ে উদ্বেগ

নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপ শহরে বড় পরিসরে নতুন দোকান খোলার পরিকল্পনা করছে গান সিটি। ছবি: রয়টার্স।
নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপ শহরে বড় পরিসরে নতুন দোকান খোলার পরিকল্পনা করছে গান সিটি। ছবি: রয়টার্স।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলাকারী শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী ব্রেনটন টারান্টকে অস্ত্র সরবরাহ করে দেশটির খুচরা বন্দুক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান গান সিটি। দক্ষিণ দ্বীপ শহরে বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠানটির নতুন দোকান খোলার পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল বুধবার দেশটির গণমাধ্যম এ কথা জানায়।

রেডিও নিউজিল্যান্ড জানিয়েছে, প্রস্তাবিত এলাকার কাছাকাছি থাকা নাগরিকেরা এই দোকান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। প্রায় ৩০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে গুদাম, অফিস, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাসহ আগামী আগস্ট মাসে উদ্বোধন হবে দোকানটি।

সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা হ্যারি সিং গণমাধ্যমটিকে বলেন, আবাসিক এলাকায় নিজেদের বাড়ির চারপাশে বন্দুকের উপস্থিতি অনেকের জন্যই অস্বস্তির কারণ হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে গান সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত শনিবার নিউজিল্যান্ড যে ঘোড়দৌড়ের মাঠে প্রথমবারের মতো আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত নেয়, সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে দোকানটির অবস্থান। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার চার মাস পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গান সিটির মালিক ডেভিড টিপল গত মার্চ মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অভিযুক্ত বন্দুকধারী ব্রেনটন টারান্ট ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের মার্চ মাসের মধ্যে চারটি বন্দুক এবং গুলি কিনেছেন।’ নিউজিল্যান্ডের প্রথম সন্ত্রাসবাদের অভিযোগসহ ৯২টি অভিযোগে গত মে মাসে ব্রেনটন টারান্টকে আদালতে হাজির করা হয়। নিজেকে তিনি নির্দোষ দাবি করেছেন।

টিপল রেডিও নিউজিল্যান্ডকে বলেছেন, নতুন দোকানটির ব্যাপারে কতিপয় মানুষের উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে চেইনশপটি ‘খুশিমনে আগ্নেয়াস্ত্রের ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে ইচ্ছুক’।

গত এপ্রিল মাসে নিউজিল্যান্ডের আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংস্কার করা হয়। নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের সামরিক ধাঁচের আধা স্বয়ংক্রিয় ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র পুলিশের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এ ধরনের অস্ত্র জমা না দিলে এর মালিককে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশটির নাগরিকেরা সীমিতসংখ্যক কার্তুজ নিজের কাছে রাখতে পারবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব অস্ত্র জমা দিতে হবে।

আইন সংশোধনের যে প্রস্তাব আনা হয়েছে, তাতে শটগান (পাঁচটির বেশি গুলিসহ) এবং আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই অস্ত্র জনসমক্ষে ব্যবহার করলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারে বাধা সৃষ্টি করলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বিক্রি, সরবরাহ, তৈরি ও আমদানি করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। অস্ত্রের মালিকদের কাছ থেকে নিষিদ্ধ অস্ত্র কিনে নেওয়ার জন্য ১৩৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রেখেছে সরকার। গত শনিবার ২২৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত নিয়েছে পুলিশ। এ সপ্তাহে এ ধরনের আরও ২২টি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পাঁচ মিলিয়ন নাগরিকের দেশ নিউজিল্যান্ডে আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা প্রায় দেড় মিলিয়ন। স্মল আর্মি সার্ভের জরিপ অনুযায়ী, সাধারণ নাগরিকদের অস্ত্র মালিকানার সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বে দেশটি ১৭তম স্থানে।

গত ১৫ মার্চ ব্রেনটন টারান্ট নামে অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ২৮ বছর বয়সী তরুণ ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে জুমার নামাজ চলাকালে মুসল্লিদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এরপর কাছাকাছি লিনউড মসজিদে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। দুই মসজিদে হামলায় প্রাণ হারান ৫১ জন। আহত হন আরও ৪৮ জন। ব্রেনটনকে গ্রেপ্তার করেছে নিউজিল্যান্ডের পুলিশ।