ক্ষমা চাইলেন কিম

কিম জং-উন
রয়টার্স ফাইল ছবি

দক্ষিণ কোরিয়ার এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনকে এ ধরনের ‘লজ্জাজনক ঘটনা’ আর ঘটবে না বলে জানিয়েছেন উন। বিবিসির আজ শুক্রবারের খবরে এ তথ্য জানা যায়।

দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় সে দেশের সেনাদের হাতে দক্ষিণ কোরীয় ওই ব্যক্তি ধরা পড়েন। সিউল বলছে, এরপর তাঁকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁর শরীর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর এই আচরণ দক্ষিণ কোরিয়ায় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। দুই কোরিয়ার সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে।

ক্ষমা চেয়ে কী বললেন কিম?

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানের আবাসিক ভবন ও নির্বাহী কার্যালয় ব্লু হাউস বলছে, প্রেসিডেন্ট জায়ে ইন মুনকে একটি চিঠি পাঠিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিম এটিকে লজ্জাজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। মুন ও দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণকে এভাবে হতাশ করায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এ ঘটনার পরে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক মন্তব্য।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক পরিচালক সুহ হুন বলেন, হত্যার তদন্ত প্রতিবেদনও দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। উত্তর কোরিয়া বলেছে, তাদের জলসীমায় প্রবেশের পর ওই ব্যক্তি নিজের পরিচয় দিতে পারেননি। তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ কারণে তাঁর মাথায় ১০টির বেশি গুলি করা হয়। উত্তর কোরিয়ার দাবি, তাঁরা দক্ষিণ কোরীয় ওই ব্যক্তির শরীর পোড়াননি। সুহ ওই চিঠির বরাত দিয়ে ব্রিফিংয়ে জানান, সেনাবাহিনী গুলি করার পর তল্লাশি চালিয়ে ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পাননি।

কী ঘটেছিল ওই ব্যক্তির সঙ্গে?

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, গত সোমবার নিখোঁজ হওয়ার সময় ইয়োনপিয়ং দ্বীপের কাছে ওই ব্যক্তি একটি টহল নৌকায় ছিলেন। ওই দ্বীপটি উত্তর কোরিয়া সীমান্তের ১০ কিলোমিটার অদূরে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার মৎস্য বিভাগে কাজ করতেন। তিনি দুই সন্তানের জনক। নৌকায় তিনি জুতা খুলে রেখেছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমের খবর বলছে, ওই ব্যক্তির সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। তাঁর অর্থনৈতিক সংকট ছিল।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার লাইফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় উত্তর কোরিয়ার টহলরত একটি নৌকা ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পায়। তাঁরা ওই ব্যক্তিকে দূর থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাঁকে গুলি করে পানির মধ্যে হত্যা করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়া বলছে, উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী তাঁর শরীর পুড়িয়ে দেয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন এই হত্যাকাণ্ডকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি এ হত্যার ঘটনায় দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল বলছে, নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা করে তাঁর দেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনার কারণ জানাতে পারেনি উত্তর কোরিয়া।

উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যেকার সম্পর্ক ভালো নয়। পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটনের মধ্যেও উত্তেজনা রয়েছে। ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধজাহাজডুবির ঘটনায় ক্ষমা চায়নি উত্তর কোরিয়া। ওই জাহাজডুবিতে ৪৬ জন নাবিক নিহত হন। এ ঘটনায় দায় নিতেও রাজি হয়নি উত্তর কোরিয়া। একই বছর দক্ষিণ কোরিয়ার একটি দ্বীপে শেল হামলা চালানোর ঘটনায় ক্ষমা চাইতে রাজি হয়নি উত্তর কোরিয়া। ওই হামলায় দুজন সেনা ও দুজন নির্মাণকর্মী নিহত হন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের প্রবেশপথে অতিরিক্ত নজরদারি নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ১০ অক্টোবর দেশটির ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির ৭৫তম বার্ষিকীতে বড় ধরনের সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। সে কারণেই নজরদারি বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনা ঠেকাতে পিয়ংইয়ং চীনের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে। উত্তর কোরিয়ার সরকারি গণমাধ্যম জুলাই মাসে জানায় জরুরি অবস্থা আরও বাড়ানো হয়েছে।

গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন সেনা কমান্ডার রবার্ট আব্রামস বলেন, চীনা সীমান্তে এক থেকে দুই কিলোমিটার এলাকা বিশেষ জোন ঘোষণা করেছে উত্তর কোরিয়া। সীমান্ত দিয়ে কেউ এলে দেশটির বিশেষ বাহিনীকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।