ক্ষুধা, খরা ও রোগে ভুগবে কোটি মানুষ

আগামী কয়েক দশকের মর্মান্তিক বাস্তবতার পূর্বাভাস দিচ্ছে জাতিসংঘ
ছবি : রয়টার্স

আগামী কয়েক দশকে বিশ্বে ক্ষুধা, খরা ও রোগে ভুগবে কয়েক কোটির বেশি মানুষ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাবের কারণে মানবস্বাস্থ্য এই ভোগান্তিতে পড়বে বলে জাতিসংঘের একটি খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব একটি ভয়াবহ বছর পার করেছে। এর মধ্যেই ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) প্রতিবেদনে আগামী কয়েক দশকের মর্মান্তিক বাস্তবতার পূর্বাভাস এসেছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী দশকগুলোতে অপুষ্টি, পানির নিরাপত্তাহীনতা ও মড়কের মতো বিষয়গুলো মানুষকে ভোগাবে।

সম্ভাব্য সংকটের মাত্রা কমিয়ে আনতে উদ্ভিদ থেকে পাওয়া খাবারের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর মতো নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের নীতি গ্রহণ করা হলে সেগুলো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে পারে। তবে স্বল্প মেয়াদে অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে না। এ ছাড়া শস্য উৎপাদন কমে যাওয়া, মৌলিক খাবারের পুষ্টিগুণ কমে যাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় মানুষগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, মানুষ কতটা কার্যকরভাবে কার্বন নিঃসরণ ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়টি সামাল দিতে পারবে, তার ওপরই ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। আজ যে শিশুটি জন্ম নিচ্ছে, ৩০ বছর বয়স হওয়ার আগেই তাকে নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে।

আইপিসিসির ৪ হাজার পৃষ্ঠার এই খসড়া প্রতিবেদন আগামী বছর চূড়ান্ত আকারে প্রকাশ হওয়ার কথা। এই প্রতিবেদনেই এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত সবচেয়ে বেশি বিস্তারিত তথ্য থাকতে পারে। প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে বর্তমানের তুলনায় আরও প্রায় ৮ কোটি মানুষ খাবারের অভাবে পড়বে।

প্রতিবেদনে পানি চক্র ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে। তা হলে সাব-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চলে বৃষ্টিনির্ভর শস্য উৎপাদন কমে যাবে। এ ছাড়া ভারতের যেসব এলাকায় ধান উৎপাদন হয়, তার ৪০ শতাংশের মতো এলাকায় উৎপাদনক্ষমতা কমে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ১৯৮১ সালের তুলনায় বিশ্বে ভুট্টা উৎপাদন ইতিমধ্যে ৪ শতাংশ কমে গেছে।

পাঁচ দশক ধরে হঠাৎ খাদ্য উত্পাদন কমার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক (জনস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যের ওপর পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাববিষয়ক) মারিয়া নেইরা বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যের মূল ভিত্তি তিনটি খুঁটির ওপর নির্ভর করে। এগুলো হচ্ছে আমরা যা খাই, পানির প্রাপ্যতা ও আশ্রয়। এই খুঁটিগুলো পুরোপুরি নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে এবং সেগুলো ভেঙে পড়তে পারে।’