ঘুষিতে মুখ ভেঙে দিতে ইচ্ছে করছে, সাংবাদিককে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট

করোনাভাইরাসকে ‘লিটল ফ্লু’ বলে সমালোচনায় পড়েছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। ‘লিটল ফ্লু’তে আক্রান্ত হয়ে ছিলেন গৃহবন্দী। সুস্থ হয়ে আবার আগের মতোই অসংযত আচরণ ও কথা চালিয়ে যাচ্ছেন বলসোনারো। এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিককে ঘুষি মারতে চাইলেন তিনি।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো
ছবি: টুইটার

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো নানা কারণে আলোচনায় থাকেন সব সময়। বিতর্কিত সব মন্তব্য করে তিনি সমালোচনায় পড়লেও বন্ধ থাকে না তাঁর নানান তির্যক মন্তব্য। পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করায় এবার তাঁর কোপানলে পড়লেন সাংবাদিক। তিনি ঘুষি মেরে সাংবাদিকের মুখ ভেঙে দেওয়ার হুমকিও দিলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণের জন্য বেশ পরিচিত জইর বলসোনারো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে জেরবার অবস্থা দেশটির। এখন পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৬ হাজারের মতো মানুষের এ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৪ জনের। আর এই করোনা পরিস্থিতিসংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এক সাংবাদিক। এতে ওই সাংবাদিক রোষানলে পড়েন প্রেসিডেন্টের।

করোনাভাইরাসকে ‘লিটল ফ্লু’ বলে সমালোচনায় পড়েছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। এরপর সেই ‘লিটল ফ্লু’তে আক্রান্ত হয়ে কয়েক সপ্তাহ গৃহবন্দী ছিলেন। এর মধ্যে বারবার করোনা পরীক্ষাও করতে হয়েছে। সুস্থ হয়ে কাজে ফিরে আবার আগের মতোই অসংযত আচরণ ও কথা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিককে ঘুষি মারতে চাইলেন তিনি।

গতকাল রোববার রাজধানী ব্রাসিলিয়ার এক গির্জায় জইর বলসোনারো গিয়েছিলেন প্রার্থনার জন্য। প্রার্থনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এই মুহূর্তে মৃত্যুতে বিশ্বে করোনায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিয়ে প্রশ্নোত্তর চলছিল। এরই মাঝে এক সাংবাদিক ব্রাজিলের ফার্স্ট লেডি মিশেল বলসোনারো ও তাঁর সন্তানের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। খেই হারিয়ে ফেলে উত্তেজিত হয়ে বলসোনারো বলেন, ‘ইচ্ছে করছে ঘুষিতে তোমার মুখ ভেঙে দিই।’ এরপরই দ্রুতই সেখান থেকে চলে যান বলসোনারো।

জইর বলসোনারো
ছবি: রয়টার্স

ব্রাজিলের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফার্স্ট লেডি এবং তাঁর দুই সহকারী এক প্রকল্প চালানোর নাম করে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই অর্থ গত কয়েক বছর ধরে জমা পড়েছে মিশেলের ব্যাংক হিসাবে। এ ছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ আছে প্রেসিডেন্টের ছেলেদের বিরুদ্ধেও। এ প্রতিবেদনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট দুই সন্তানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন। ফার্স্ট লেডির দুই সহকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেই প্রসঙ্গেই গতকাল রোববার প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিক। তাতেই তাঁকে ঘুষির হুমকি শুনতে হয়েছে।

ব্রাসিলিয়ার গির্জায় প্রার্থনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জইর বলসোনারো। সেখানে এক সাংবাদিক ব্রাজিলের ফার্স্ট লেডি মিশেল বলসোনারো ও তাঁর সন্তানের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। উত্তেজিত হয়ে বলসোনারো বলেন, ‘ইচ্ছে করছে ঘুষিতে তোমার মুখ ভেঙে দিই।’ এরপর দ্রুতই চলে যান বলসোনারো।

প্রেসিডেন্টের আচরণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দেশটির সাংবাদিকেরা। ঘটনাস্থলেই সাংবাদিকেরা প্রেসিডেন্টের কথার প্রতিবাদ করেন। তাঁদের মতে, সাংবাদিক নিজের পেশার প্রতি দায়বদ্ধ থেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেছেন।

ব্রাজিলের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জার্নালিস্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আবারও প্রেসিডেন্ট আক্রমণাত্মক হলেন এবং সাংবাদিককে হুমকি দিলেন। এটা সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার অধিকারের প্রতিও হুমকি। এমন ব্যবহার গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য শুভ নয়। তথ্যসূত্র: সিএনএন