চার দফাতেই বিজেপির সেঞ্চুরি, তৃণমূল সাফ: মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ফাইল ছবি: এএনআই

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গে এসে বিজেপি আয়োজিত তিনটি নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিলেন। এর আগে মোদির একই দিনে দুটি জনসভায় যোগদানের রেকর্ড থাকলেও আজ সেই রেকর্ড ভাঙলেন। মোদি তিন জনসভা করেছেন পূর্ব বর্ধমানের তালিত, নদীয়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ময়দান এবং উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসাতের কাছারি ময়দানে। তিনটি জনসভা থেকেই মোদি ঘোষণা দেন, দিদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের) সময় শেষ। আগামী ২ মে দিদি বিদায় নেবেন এই বাংলা থেকে। আসবে এই বাংলায় সোনার বাংলা গড়তে বিজেপি সরকার। আর তাঁর তৃতীয়বারের মতো বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে ইতিমধ্যে চার দফা ভোট গ্রহণ হয়ে গেছে। আরও চার দফা বাকি আছে।

তবে বর্ধমানে মোদি বলেন, চার দফা নির্বাচনেই তৃণমূল সাফ হয়ে গেছে। চার দফাতেই সেঞ্চুরি করেছে বিজেপি। আর নন্দীগ্রামে তো দিদি ক্লিন বোল্ড হয়ে গেছেন। দিদির খেলা এবার শেষ হয়ে গেছে। ওরা মাঠের বাইরে চলে গেছে।

মোদি বলেন, এই বাংলা থেকে কংগ্রেস, বাম দল চলে গেছে। আর ফেরেনি। তৃণমূল এবার চলে গেলে আর ফিরবে না। আর দিদির গড়া টিএমসি কোম্পানি এবার তুলে দেওয়া হবে ভাইপোর হাতে।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই বাংলা আর চায় না তৃণমূলের দুঃশাসন। বাংলা চায় না দিদির ভাইপোর হিংসার খেলা। বাংলা চায় এই বাংলার উন্নয়ন, শিক্ষা, শিল্প, কর্মসংস্থান আর নারীশিক্ষার উন্নয়ন। বাংলা চায় এই বাংলায় আসুক বিজেপি সরকার। বাংলা চায় না ভোগের সরকার। চায় ত্যাগের সরকার, সেবার সরকার। আর তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিজেপি। মোদি বলেন, বাহিনীর বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে দিদি রাজ্যে অশান্তি সৃস্টি করেছেন। বাংলার মানুষ শান্তি চায়। তোষণের রাজনীতি চায় না। হিংসার রাজনীতি চায় না।

এরপর দুপুরে মোদি দ্বিতীয় জনসভা নদীয়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানে আয়োজিত জনসভায় বলেন, এই বাংলায় এবার নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি হতে চলেছে। দিদির কুশাসন থেকে মুক্ত হচ্ছে বাংলা। আগামী দুদিন পর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন থেকে দিদির পতনের কাউন্টডাউন শুরু হবে। মোদি বলেন, এই বাংলার মতুয়া সম্প্রদায় থেকে শুরু করে সব পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা দেওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। দিদির জন্যই এত দিন এই বাংলার নানা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্রেক কষে দিতেন দিদি। দিদির সেই সুযোগ এবার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। দিদি বিদায় নিচ্ছেন। ছাড়ছেন মুখ্যমন্ত্রীর পদ।

মোদি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে গিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থভূমি গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে গিয়েছিলাম ঠাকুর গুরুচাঁদের আশীর্বাদ নিতে। আমি মন্দিরে প্রণাম করে আশীর্বাদও নিয়েছি ঠাকুরের। কিন্তু এই আশীর্বাদ নেওয়াকে দিদি ভালোভাবে নিতে পারেননি। সমালোচনা করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘তৃণমূলও নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে। তবু আমি মতুয়া সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য ছুটে গিয়েছি তাদের পবিত্র তীর্থস্থান ওড়াকান্দিতে।’ মোদি বলেন, দিদি তপসিলি, মতুয়া ও দলিতদের অপমান করেছেন। তাঁদের ভিখারি বলেছেন। এই মন্তব্যের জন্য মোদি ক্ষমা চাইতে বলেন দিদিকে।

মোদি কল্যাণী জনসভা থেকে কল্যাণীকে একটি আধুনিক শিল্প শহর হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। কল্যাণীর সঙ্গে মেট্রোরেলের সংযোগ স্থাপন করা হবে।
বিকেলে মোদি শেষ সভা করেন উত্তর ২৪ পরগনার সদর বারাসাতের কাছারি ময়দানে। সেখানে মোদি বলেন, দিদির এখন মাথা ঠিক নেই। আবোলতাবোল বলছেন। এ তো দিদির বিপদকালে বুদ্ধিবিনাশ।

এদিকে আজ নির্বাচনে প্রচারে আসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তিনিও আজ দার্জিলিংয়ের কালিল্পং, ধূপগুড়ি, হেমতাবাদ ও শিলিগুড়িতে বিজেপি আয়োজিত নির্বাচনী জনসভা ও রোড শোতে অংশ নেন। ধূপগুড়ির জনসভা থেকে অমিত শাহ ঘোষণা দেন, এবার শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

অন্যদিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রানাঘাট, বসিরহাট এবং দমদমে তৃণমূল আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন হুইলচেয়ারে বসে। এসব সভায় মমতা ঘোষণা দেন, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিততে চলেছে তৃণমূলই বিজেপিকে পরাস্ত করে। এই বাংলায় তৃতীয়বারের মতো সরকার গড়বে তৃণমূলই। এই বাংলার মানুষ ধর্মান্ধ বিজেপিকে ভোট দেবে না।