জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি জলবায়ু পরিবর্তন: ডব্লিউএইচও

প্রতীকী ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন এককভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ হুমকি মোকাবিলায় দেশগুলোর সরকার ও নীতিনির্ধারকদের জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। ফলে প্রতিবছর অন্তত ৭০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন কপ-২৬ সামনে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। খবর সিএনএন ও গার্ডিয়ানের।

গত রোববার প্রকাশিত ডব্লিউএইচওর ‘স্পেশাল রিপোর্ট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য খাতের চার শতাধিক বৈশ্বিক সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ কপ-২৬-এ অংশ নিতে যাওয়া সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব সংগঠনে বিশ্বের সাড়ে চার কোটির বেশি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী যুক্ত রয়েছেন। চিঠিতে সই করেছেন ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস নিজেও।

প্রতিবেদনে ডব্লিউএইচও বলেছে, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি আমাদের হত্যা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন এখন জনস্বাস্থ্যের ওপর এককভাবে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। হুমকি মোকাবিলায় জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে।’

বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত দিন দিন বেড়ে চলেছে। কোভিড-১৯ মহামারি এ সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশেষত, যেসব দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে, তাদের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ ও চরম বৈরী আবহাওয়ার কারণে খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটায় বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। এ কারণে স্বাস্থ্য খাতে বাড়তি ব্যয়ের লাগাম টানতে নীতিনির্ধারকদের এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। পানি ও বায়ু পরিষ্কার রাখা ও খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল স্বাভাবিক রাখতে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়ছেন স্বাস্থ্য খাতের কর্মীরা। এর মধ্যেই জনস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের বিষয়ে তাঁরা সোচ্চার হয়েছেন। এখন তাঁদের কথা শোনার সময়।
মারিয়া নেইরা, ডব্লিউএইচওর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক

চিঠির খসড়া প্রস্তুত করেছে গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যালায়েন্স নামের একটি সংগঠন। এর প্রধান জেনি মিলার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে। তা না হলে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা যাবে না।

শুধু যথাযথ নীতিকৌশল মেনে চলার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণে মৃত্যু ৮০ শতাংশ কমানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ডব্লিউএইচওর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মারিয়া নেইরা। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়ছেন স্বাস্থ্য খাতের কর্মীরা। এর মধ্যেই জনস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের বিষয়ে তাঁরা সোচ্চার হয়েছেন। এখন তাঁদের কথা শোনার সময়।

প্রতিবেদনে জনস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানো, টেকসই খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় উৎসাহ দেওয়া, জলবায়ু-অভিযোজিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব আবাসন-পরিবহনব্যবস্থা চালুসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘জলবায়ুর বিষয়ে নীতিগত পরিবর্তন জরুরি। আশা করি এ প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকদের দিকনির্দেশনা দেবে।’

আরও পড়ুন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু সংকটের পাশাপাশি করোনা মহামারি সমাজ ও অর্থনীতির ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছে। মানুষের জীবনকে হুমকিতে ফেলেছে। কমিয়েছে কর্মক্ষমতা। দুটি সংকটের অভিঘাত চরম ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের চিত্র আরও প্রকট করে সামনে এনেছে। এ সমস্যার সমাধানে সবুজ পুনরুদ্ধার বা গ্রিন রিকভারি নীতির ওপর গুরুত্ব দিতে ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রতিবেদন ও চিঠিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডব্লিউএইচওর স্বাস্থ্য ও জলবায়ুবিষয়ক বিভাগের প্রধান দিয়ারমিদ ক্যাম্পবেল বলেন, করোনা ও জলবায়ু, দুটির ক্ষেত্রেই সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা, প্রত্যেকে সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত কারোরই পুরোপুরি সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল গত সপ্তাহে ঘোষণা দিয়েছে, পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ পাওয়ার নিশ্চয়তা মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ। ৩১ অক্টোবর গ্লাসগোয় জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ শুরু হচ্ছে। চলবে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত। সম্মেলন সামনে রেখে গ্লাসগোসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন জলবায়ুকর্মীরা।

আরও পড়ুন