তালেবানের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালালেন হাজার আফগান সেনা
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা উপস্থিতি পুরোপুরি গুটিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরুর মধ্যেই দেশটি ছেড়ে প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে পালিয়ে গেলেন এক হাজারের বেশি আফগান সেনা। সোমবার সকালে তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ের একপর্যায়ে এভাবে পালিয়ে বাঁচেন সরকারি এই সেনা সদস্যরা। তাজিকিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি এ কথা জানিয়েছে। এএফপি ও দ্য গার্ডিয়ানের খবর।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নামে মার্কিন বাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় কয়েকটি মার্কিন মিত্র দেশ। বহুজাতিক এই সেনাদের দীর্ঘ উপস্থিতির পরও আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শেষমেশ তালেবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তির আওতায় দেশটি থেকে একে একে সরে যাচ্ছেন বহুজাতিক বাহিনীর সেনারা।
এ পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে তালেবান। অভিযানে সরকারি সেনাদের কাছ থেকে বেশ কিছু এলাকার দখল নিয়েছেন সশস্ত্র এই সংগঠনের যোদ্ধারা। গত মাসে এক লড়াইয়ে তাঁরা তাজিকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের প্রধান সংযোগ সড়কেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন।
তাজিকিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি জানায়, তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে রোববার রাতে তুমুল লড়াইয়ের পর ১ হাজার ৩৭ জন আফগান সেনা প্রাণ বাঁচাতে একেবারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে সাবেক সোভিয়েত উপনিবেশ তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন।
তাজিকিস্তানের সরকারি তথ্য সংস্থা খোভার ওই কমিটির একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও তার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে আফগান সেনাদের তাজিকিস্তানে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আফগানিস্তানের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় বাদাখশান প্রদেশের ছয় জেলার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। প্রদেশটি তাজিকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত।
কান্দাহার থেকেই উৎপত্তি তালেবানেরও। আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগে প্রদেশটিতে ইসলামি শরিয়াহ আইন চালু করেছিল তালেবান।
গত মে মাসের শুরুর দিক থেকেই আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে তালেবান তার অভিযান জোরদার করেছে। গতকালের আগেও তালেবানের হামলার মুখে তাজিকিস্তানে পালিয়ে গেছেন কয়েক শ আফগান সেনা। ইতিমধ্যে কয়েক ডজন জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান।
অনেকে মনে করছেন, আফগানিস্তান থেকে বহুজাতিক সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার পর আফগান সরকারের সামরিক সক্ষমতা রীতিমতো ভেঙে পড়বে। আগামী সেপ্টেম্বরে এই সেনা প্রত্যাহারের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। এদিকে তালেবান হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, চুক্তিমাফিক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া না হলে তারা এর সমুচিত জবাব দেবে।
রাজধানী কাবুলের কাছে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী তাদের প্রধান বিমানঘাঁটি বাগরাম থেকে সরে যাওয়ার মাত্র দুদিন পর দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহারের পাঞ্জাই জেলার পতন ঘটল।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পূর্তির আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
লড়াইয়ের মুখে পালাচ্ছেন বেসামরিক লোকজনও
আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা রোববার জানান, শনিবার রাতে কান্দাহারের গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাই জেলায় সরকারি সেনা ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই হয়। পরে জেলার দখল নেয় তালেবান। লড়াইয়ের মুখে বহু পরিবার সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। একসময় এই কান্দাহার প্রদেশ ছিল তালেবানের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি।
রাজধানী কাবুলের কাছে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী তাদের প্রধান বিমানঘাঁটি বাগরাম থেকে সরে যাওয়ার মাত্র দুদিন পর দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহারের পাঞ্জাই জেলার পতন ঘটল। এ ঘাঁটি থেকেই গত ২০ বছর ধরে বহুজাতিক সেনারা তালেবান ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে।
কয়েক বছর ধরেই পাঞ্জাইয়ের ভেতর–বাইরে আফগান সেনা ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে নিয়মিতভাবে লড়াই চলছিল। এখন এটির পতন ঘটায় কান্দাহারের প্রাদেশিক রাজধানী কান্দাহার সিটিও তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তালেবান নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা পাঞ্জাই থেকেই উঠে এসেছেন।
আবার কান্দাহার থেকেই উৎপত্তি তালেবানেরও। আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগে প্রদেশটিতে ইসলামি শরিয়াহ আইন চালু করেছিল তালেবান।